• এশিয়া কাপ
  • " />

     

    রাজাপাকসার রাজসিক ইনিংস,'ওয়ার্ল্ড ক্লাস' ওয়ানিন্দুতে লঙ্কার সিংহদের এশিয়া জয়

    রাজাপাকসার রাজসিক ইনিংস,'ওয়ার্ল্ড ক্লাস' ওয়ানিন্দুতে লঙ্কার সিংহদের এশিয়া জয়    

    এশিয়া কাপ, ফাইনাল, দুবাই(টস-পাকিস্তান/বোলিং)
    শ্রীলঙ্কা-১৭০/৬, ২০ ওভার (রাজাপাকসা ৭১*, হাসারাঙ্গা ৩৬, ধনঞ্জয়া ২৮, হারিস ৩/২৯, ইফতিখার ১/২১, শাদাব ১/২৮)
    পাকিস্তান-১৪৭, ২০ ওভার (রিজওয়ান ৫৫, ইফতিখার ৩২, হারিস ১৩*, মাদুশান ৪/৩৪, হাসারাঙ্গা ৩/২৭, করুনারত্নে ২/৩৩)
    ফলাফল: শ্রীলঙ্কা ২৩ রানে জয়ী

     

    এশিয়া কাপ শুরুর আগে অনেকে ধরেই নিয়েছিলেন ফাইনাল হবে ভারত-পাকিস্তান; প্রশ্ন শুধু একটাই - এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে কার হাতে উঠবে শিরোপা? শ্রীলঙ্কা নামটা যেন সবার মুখেই তলানিতেই ছিল। যেই ম্যাচ দিয়ে শ্রীলঙ্কার ঘুরে দাঁড়ানো সেই বাংলাদেশ ম্যাচের আগে তাদের একজন সাবেক তো বলেই বসলেন, লঙ্কানদের কোনও ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস’ বোলার নেই। সেই ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস’ বোলার ছাড়াই সমালোচকদের মুখে কালি মেখে ৬ষ্ঠ বারের মত এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হল দাসুন শানাকার শ্রীলঙ্কা। ভানুকা রাজাপাকসা-ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার ৫৮ রানের জুটির পর রাজাপাকসা দলকে এনে দিয়েছিলেন লড়াইয়ের পুঁজি। মোহাম্মদ রিজওয়ানের শ্লথ ফিফটির পূর্ণ সুযোগ নিয়ে হাসারাঙ্গার দুর্দান্ত এক ওভারের সাথে প্রমোদ মাদুশানের চার উইকেটে ‘লক্ষ্য তাড়া মানেই জয়’ শীর্ষক চিন্তাধারাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছে লঙ্কানরা।

    লড়াই করার উপলক্ষ পেয়ে লঙ্কানরা জ্বলে উঠে শুরু থেকেই। দিলশান মাদুশাঙ্কার প্রথম ওভারটা এলোমেলো হলেও নিজের মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা মাদুশান টানা দুই বলে ফেরান বাবর আজম ও ফাখার জামানকে। ইফতিখার আহমেদকে সঙ্গী করে এরপর নোঙর পোতেন রিজওয়ান; পাওয়ারপ্লেতে পাকিস্তানকে নিয়ে যান ৩৭ রানে।

    তবে ইফতিখার-রিজওয়ানের মনোযোগ ছিল উইকেট ধরে খেলায়। সেটা আঁচ করে লঙ্কানরাও আঁটসাঁট লাইনে বল করতে থাকলে ৩১ বলে ৩২ রান করে দলকে বিপদে রেখে মাদুশানের শিকার হয়ে ফেরেন ইফতিখার। ১৬তম ওভারে মোহাম্মদ নাওয়াজকে ফেরান চামিকা করুনারত্নে; লঙ্কার সিংহরা পেয়ে যায় খুনের ঘ্রাণ। শেষ ৪ ওভারে পাকিস্তানের সমীকরণ হয়ে দাঁড়ায় ৬ উইকেট হাতে নিয়ে ৬১ রান।

    সেই চাপের সদ্ব্যবহার করতেই নিজের তুরুপের তাস  হাসারাঙ্গাকে আক্রমণে আনেন শানাকা। বড় ম্যাচের চাপকে নস্যি বানিয়ে এক ওভারেই হাসারাঙ্গা নিলেন ৩ উইকেট! ৪৭ বলে নিজের ১৬তম ফিফটি পেয়ে গিয়ার পালটানোর সুযোগ খুঁজতে থাকা রিজওয়ানকে ৫৫ রানে ডিপ মিড উইকেটে তালুবন্দি করেন হাসারাঙ্গা। দুর্দান্ত এক গুগলিতে এক বল পরেই আসিফ আলীর স্টাম্প উপড়ে ফেলার পর শেষ বলে খুশদিল শাহকে ফিরিয়ে পাকিস্তানের কফিনে যেন শেষ পেরেকটাও ঠুকে দেন ‘ওয়াও’নিন্দু। চোট পাওয়া শাদাবই এরপর ছিল শেষ ভরসা; থিকশানার করা পরের ওভারে তিনিও ফেরেন। দুর্দান্ত এক স্পেলের শেষটা এরপর মাদুশান করেন নাসিম শাহ’র উইকেট দিয়ে। পুরো ম্যাচ জুড়ে দুর্দান্ত বোলিং ফিল্ডিংয়ের প্রদর্শনীর তুলির শেষ আঁচড়টা দিলেন করুনারত্নে; শেষ বলে হারিসকে বোল্ড করে। আর ক্ষুধার্ত লঙ্কানরা সেই সাথে গর্জে উঠল জয়ের আনন্দে।

    টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে অবশ্য শ্রীলঙ্কার শুরুটা হয়েছিল ভয়াবহ। প্রথম ওভারেই নাসিম শাহ’র দারুণ এক ইনসুইঙ্গারে স্টাম্প খুইয়ে রানের খাতা খোলার আগেই ফেরেন কুসাল মেন্ডিস। চতুর্থ ওভারে হারিস রউফের গোলা তুলে মারতে গেলে মিড অফে বাবরের পিছে দৌড়ে ধরা  দারুণ এক ক্যাচে ফেরেন ফর্মে থাকা পাথুম নিসাঙ্কা। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে হারিসের ১৫১ কিমি. গতির আগুনে বলে স্টাম্প খুইয়ে দানুশকা গুনাতিলাকা ফিরলে পাওয়ারপ্লেতে ৪২ রান তুলতে পারে শ্রীলঙ্কা।

    পেসের ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই পাওয়ারপ্লের পর স্পিনের জাল বুনে বসলেন শাদাব-ইফতিখারের স্পিন জুটি। ছন্দে থাকা ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে ২৮ রানে ইফতিখার ফেরানোর পরের ওভারেই স্লগ সুইপ করতে গিয়ে স্টাম্প খুইয়ে শাদাবকে উইকেট উপহার দিয়ে বসেন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক দাসুন শানাকা। হাসারাঙ্গাকে নিয়ে এরপর ইনিংস মেরামত করেন রাজাপাকসা; ক্রমাগত প্রান্ত বদলের পাশপাশি বাউন্ডারি বের করে রান রেটটাও বাড়িয়ে ফেলেন দুজনেই।

    রাজাপাকসাকে সঙ্গ দিয়ে দারুণ এক ইনিংস খেলে গিয়ার পাল্টাতে গিয়ে অবশ্য থামেন হাসারাঙ্গা ১৫তম ওভারে; হারিসকে টানা দুই চার মারার পর উইকেটের পিছে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ২১ বলে ৩৬ রান করেন হাসারাঙ্গা। হাসারাঙ্গার সময়োপযোগী প্রতি আক্রমণের সুবাদে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার স্বাধীনতা পেয়ে জ্বলে ওঠেন রাজাপাকসা। ৪৬ রানে থাকার সময় শাদাব তার ক্যাচ ফেলে দিলে ৩৫ বলে ক্যারিয়ারের ৩য় ফিফটি পান তিনি। এরপর আরও একবার শাদাব-আসিফের ভুল বুঝাবুঝিতে জীবন পান রাজাপাকসা; সেখানে সংঘর্ষে চোটও পান শাদাব। তবে সেসবে অবিচল রাজাপাকসা শেষ দুই ওভারে তুললেন ২৩ রান। ৫৮-৫ থেকে দলকে উদ্ধার করে শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে দলকে এনে দেন ১৭০ রানের পুঁজি; টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে প্রথমবার ৬ষ্ঠ ও ৭ম উইকেট জুটিতে ৫০+ রান করে শ্রীলঙ্কা ঠিকই মঞ্চ তৈরি করে ফেলেছিল। পাকিস্তান টস জেতার পর পুর স্টেডিয়াম যেই আনন্দে গর্জে উঠেছিল সেই আনন্দ ধূলিসাৎ করে সেই মঞ্চে জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা হয় লঙ্কানরাই; যেই আনন্দ সাত বছর পর শিরোপা জয়ের, যেই আনন্দ সীমাহীন সমালোচনার জবাব দেওয়ার, যেই আনন্দ দেশের দুর্বিষহ পরিস্থিতে স্বদেশীদের মুখে এক চিলতে হাসি ফোঁটাতে পারার।