কিউইদের রানের পাহাড়ে পিষ্ট বাংলাদেশের হারের ব্যবধানটাই কেবল কমালো সাকিবের নিঃসঙ্গ লড়াই
ত্রিদেশীয় সিরিজ, ক্রাইস্টচার্চ(টস-বাংলাদেশ/বোলিং)
নিউজিল্যান্ড-২০৮/৫, ২০ ওভার (কনওয়ে ৬৪, ফিলিপস ৬০, গাপটিল ৩৪, সাইফউদ্দিন ২/৩৭, এবাদত ২/৪০, শরিফুল ১/৪১)
বাংলাদেশ-১৬০/৭, ২০ ওভার (সাকিব ৭০, লিটন ২৩, সৌম্য ২৩, মিলনে ৩/২৪, সাউদি ২/৩৬, ব্রেসওয়েল ২/৩৯)
ফলাফল: নিউজিল্যান্ড ৪৮ রানে জয়ী
কেন উইলিয়ামসনের অনুপস্থিতিতে সাজানো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও বাংলাদেশের ভাগ্যে এল না কোনও পরিবর্তন। টসে জিতে বাংলাদেশ বোলিং নিয়েও ডেভন কনওয়ের আরও একটি ফিফটির সাথে গ্লেন ফিলিপসের ঝড়ো ফিফটিতে নিউজিল্যান্ড পেয়েছিল বিশাল পুঁজি। বাংলাদেশের অসহায় আত্মসমর্পণ দেখে ফেলা দর্শকদের অনুমান ভুল প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর সাকিব আল হাসান এরপর একাই লড়াই চালিয়ে শেষমেশ শুধু ব্যবধানটাই কমিয়েছেন।
২০৯ রানের সুবিশাল পাহাড় টপকানোর লক্ষ্য মাথায় নিয়ে বাংলাদেশ চতুর্থ ওভারেই অ্যাডাম মিলনের কাছে হারায় শান্তকে। তবে আরেক ওপেনার লিটন দাস উইকেটে নবাগত সৌম্য সরকারকে নিয়ে আক্রমণ চালিয়ে যান। আক্রমণ অব্যাহত রাখতে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মাইকেল ব্রেসওয়েলকে মাঠছাড়া করার চেষ্টায় বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে লিটন থামেন ১৬ বলে ২৩ রান করে।
লিটনের বিদায়ের পর সাকিব উইকেটে এসে এদিন যেন কোনও বার্তা পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়েই খেলতে শুরু করেন। ব্রেসওয়েলকে মাঠছাড়া করতে গিয়ে ১১ রানের মাথায় বেঁচে গেলেও দমে যাননি সাকিব। সাথে সৌম্য সরকার নিজের খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেন ওই ওভারে দুই চার মেরে। তবে মিলনের করা দশম ওভারের শেষ বলে আপার কাট করতে গিয়ে থার্ড ম্যান অঞ্চলে সরাসরি ক্যাচ দিয়ে সৌম্য ফেরেন ১৭ বলে ২৩ রান করে। এক ওভার পরে ব্রেসওয়েলের কাছে স্টাম্প খুইয়ে আফিফ হোসেন ফিরলে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসে।
মিলনের তৃতীয় শিকার হয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই নুরুল হাসান সোহানও ফিরলে সাকিবকে লড়তে হয় একাই। সাউদির করা পরের ওভারে ৩৩ বলে সাকিব নিজের ১১তম ফিফটি পূর্ণ করলেও শেষ বলে ফেরেন ইয়াসির আলীও। নিঃসঙ্গ লড়াই চালিয়ে যাওয়া সাকিবকে কোণঠাসা করে এরপর সাউদি তাকে উইকেটের পিছে তালুবন্দি করলে শেষ হয় সাকিবের ৪৪ বলে ৭০ রানের ইনিংস। বাংলাদেশও তাই পারেনি নিউজিল্যান্ডের পুঁজির ধারেকাছে যেতে।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই মারমুখী হয়ে ওঠে নিউজিল্যান্ড। এবাদতের করা ৩য় ওভারে তো ২ ছয়ে ফিন অ্যালেন নেন ১৫ রান। অ্যালেন তার আক্রমণ চালিয়ে যেতে চাইলে ৫ম ওভারে শরিফুলের খাটো লেংথের বল ওপরে তুলে দিলে ইয়াসির আলীর দারুণ ক্যাচে তিনি থামেন ১৯ বলে ৩২ রান করে। পাওয়ারপ্লেতে নিউজিল্যান্ড ওই এক উইকেট খুইয়ে তোলে ৫৪ রান। অ্যালেনের বিদায়ের পর আরেক ওপেনার কনওয়ে গিয়ার পাল্টান; মার্টিন গাপটিলের সাথে জুটি গড়ে দলের শতরান এনে দেন ১১তম ওভারেই। সেই সাথে ৩০ বলে পূর্ণ করেন নিজের ৬ষ্ঠ ফিফটি।
কনওয়ের ফিফটির পর গাপটিলও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে গেলে এবাদত হোসেনের শিকার হয়ে শেষ হয় তার ২৭ বলে ৩৪ রানের ইনিংস। ওই ওভারেই বল উইকেটে ডেকে এনে ফিরতে পারতেন কনওয়ে; সেই যাত্রায় বেঁচে গেলেও দুই ওভার পরে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে সরাসরি ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে তিনি ফেরেন ৪০ বলে ৬৪ রান করে। ওই ওভারেই মার্ক চ্যাপম্যানের স্টাম্প উপড়ে ফেলে নিউজিল্যান্ডের লাগাম টেনে ধরার ইঙ্গিত দেন সাইফউদ্দিন।
তবে ওই ওভারে উইকেটের অন্য প্রান্তে থাকা ফিলিপস এর আগের ওভারেই সাকিব আল হাসানকে ২ ছয় মেরে যেভাবে শুরু করেছেন সেই প্রলয়ঙ্কারি ভুমিকা পালন করে গেলেন উইকেট খোয়ানোর পরোয়া না করে। সেই সাইফউদ্দিনকেই বরং তার শেষ ওভারে টানা ২ ছয় ও ১ চার মেরে ১৯ বলে তুলে নেন নিজের ফিফটি। শেষ ওভারে এবাদতের বল স্টাম্পে ডেকে এনে ফেরার আগে ২৪ বলে ৬০ রান করে বাংলাদেশের মনোবল ভেঙে দিয়েছিলেন একাই। সেই সাথে এই মাঠে মাত্র ৫ম বারের মত ২০০+ দলীয় সংগ্রহ এনে দিতে রেখেছেন অগ্রণী ভুমিকা। বিশাল এই লক্ষ্যের বোঝা বইতে না পেরে বাংলাদেশকে কিউইদের কাছে নতি স্বীকার করতে হয়েছে।