লিটন-সাকিবের প্রচেষ্টা ম্লান করে বাবর-রিজওয়ান-নাওয়াজে শূন্য হাতেই ফিরল বাংলাদেশ
ত্রিদেশীয় সিরিজ, ক্রাইস্টচার্চ(টস-বাংলাদেশ/ব্যাটিং)
বাংলাদেশ-১৭৩/৬, ২০ ওভার (লিটন ৬৯, সাকিব ৬৮, শান্ত ১২, নাসিম ২/২৭, ওয়াসিম ২/৩৩, নাওয়াজ ১/৩৭)
পাকিস্তান-১৭৭/৩, ১৯.৫ ওভার (রিজওয়ান ৬৯, বাবর ৫৫, নাওয়াজ ৪৫*, হাসান২/২৭, সৌম্য ১/৬)
ফলাফল: পাকিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী
ত্রিদেশীয় সিরিজের নাম “বাংলা ওয়াশ”। সেটাই হল, শুধু বাংলাদেশ নিজেরাই ফিরল ধবলধোলাই হয়ে রিক্ত হস্তে। লিটন দাস ও সাকিব আল হাসানের প্রচেস্টায় সিরিজে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ পেয়েছিল বাংলাদেশ। হাসান মাহমুদের দারুণ স্পেলে বাংলাদেশ ম্যাচে থাকলেও বাবর-রিজওয়ান জুটির পর মোহাম্মদ নাওয়াজের ঝড়ে পাকিস্তান হেসেছে জয়ের হাসি।
পাকিস্তানের দুই ওপেনার মিলে উইকেট রক্ষার উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু করে পাওয়ারপ্লেতে তোলেন ৪৬ রান। ৩২ রানে থাকার সময় রিজওয়ান অবশ্য শরিফুলের বলে ক্যাচ তুলে দিলে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ক্যাচ ফেলে দেন। তার পরের ওভারে ওই সাইফউদ্দিনকে চার মেরে বাবর ৩৭ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি; ওই ওভারে দুজন মিলে নেন ১৯ রান। পরের ওভারে হাসান এসে ৪০ বলে ৫৫ রান করা বাবরকে থামানোর পর উপড়ে ফেলেন হায়দার আলীর স্টাম্পও। ম্যাচে ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হওয়ার পর বাংলাদেশের সেই সুযোগ ভন্ডুল করে দেন নাওয়াজ।
রিজওয়ান এক প্রান্ত আগলে রাখলে অন্য প্রান্তে বিস্ফোরক হয়ে ওঠেন নাওয়াজ; সাকিবকে দুই চার ও এক ছয় মেরে পাকিস্তানের লক্ষ্য তাড়ায় গতি সঞ্চার করেন তিনি। জীবন পাওয়ার পূর্ণ সুযোগ নিয়ে পরের ওভারে ৪২ বলে রিজওয়ান ফিফটি পূর্ণ করার পর তিনিও হাত খুলে খেলার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। ১৯তম ওভারে সৌম্যকে প্রথমবারের মত বল তুলে দেওয়া হলে দারুণ সব ওয়াইড ইয়র্কারের পসরা সাজিয়ে ৫৬ বলে ৬৯ রান করা রিজওয়ানকেও ডিপ কাভারে তালুবন্দি করেন। শেষ ওভারে ৮ রান প্রয়োজন হলে এর আগের ৩ ওভারে ৪২ রান দেওয়া সাইফউদ্দিনকেই আক্রমণে আনা হলে পঞ্চম বলে চার মেরে ২০ বলে ৪৫* রানে অপরাজিত থেকে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন নাওয়াজ।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার সিদ্ধান্তকে একেবারেই ভুল প্রমাণ হতে বসেছিল। পেসারদের রয়েসয়ে খেলতে গিয়ে একেবারেই খোলসে ঢুকে যান দুই ওপেনার। সেই খোলস থেকে বের হতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে ২ রানে ফিরে যান সৌম্য সরকার। ৫ম ওভারে লিটনের সাথে জুটি বেঁধে আরেক ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত নেন ১৫ রান। ওই ওভারের শেষ বলে শান মাসুদ পয়েন্টে লিটনের মামুলি ক্যাচ ফেলে দিলে খোলসবন্দী শান্ত পরের ওভারে ফেরেন মোহাম্মদ ওয়াসিমের শিকার হয়ে ১৫ বলে ১২ রান করে। পাওয়ারপ্লেতে ওই দুই উইকেট খুইয়ে বাংলাদেশ তোলে ৪৪ রান।
জীবন পেয়ে এরপর সাকিবের সাথে জুটি বেঁধে ছুটতে থাকেন লিটন। মোহাম্মদ নাওয়াজের করা ৮ম ওভারে দুজন মিলে ২ চার ও ১ ছয়ে ১৭ রান নিয়ে পরিষ্কার জানিয়ে দেন আক্রমণের বার্তা। তারই পরিক্রমায় নিজের জন্মদিনে ৩১ বলে লিটন তুলে নেন ৭ম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফিফটি। দুজনে মিলে ১২.১ ওভারে দলীয় শতরান পূর্ণ করার পর গিয়ার পাল্টাতে গেলে নাওয়াজকে উইকেট দিয়ে ফেরেন লিটন। সুইপ ব্যাটে বলে না হওয়াতে ৪২ বলে ৬৯ রান করে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেই ফেরেন তিনি।
তার কিছুক্ষণ পরেই নিজের টানা দ্বিতীয় ও ক্যারিয়ারের ১১তম ফিফটি পান সাকিব, ৩৪ বলে। আক্রমণের ধারা বজায় রাখতে গিয়ে নাসিম শাহ’র স্লোয়ার সপাটে মারার চেষ্টা করলেও বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে সাকিব থামেন ৪২ বলে ৬৮ রান করে। লিটন-সাকিবের দেখান পথে অবশ্য হাঁটতে পারেনি বাকি কেউই। শেষ ওভারের প্রথম বলেই ইয়াসির আলীকে ফেরানোর পর আফিফ হোসেন রান আউটের শিকার হলে তো ওয়াসিম উইকেট মেইডেন দিবেন বলেই মনে হচ্ছিল। শেষ ওভারে ৩ রান এলেও বাংলাদেশ পেয়েছিল লড়াই করার রসদ; ফিল্ডিংয়ের পরিকল্পনা ও ক্যাচ মিসের মাশুল দেওয়া যেই পুঁজি আর যথেষ্ট হয়নি বাংলাদেশের জন্য।