মেসির মহিমায় নতজানু মেক্সিকোর কফিনে এনজোর শেষ পেরেকে জেগে উঠল আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টিনা ২:০ মেক্সিকো
আগের ম্যাচেই পোল্যান্ডের জয়ে আকাশী-নীল জার্সি পরিহিতদের ওপর ম্যাচের আগেই ভীষণ চাপ, সেই সাথে রয়েছে প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে পরাজয়ের গ্লানি। হারলেই বাদ - এমন সমীকরণ মাথায় নিয়ে হয়ত চিন্তায় অনেকেরই চোখে কালশিটে পড়ে যাওয়ার কথা, ম্যাচের মাঝে দুরুদুরু বুক কেঁপে ওঠার কথা। কেঁপেছিল হয়ত লিওনেল মেসিরও, তবে অধিনায়কের তো সেসব বুঝতে দিলে চলবে না। আর ওসব চিন্তা তো দূরে থাকা, লুসাইলকে মেসি দেখালেন নিজের মহিমা। দুর্দান্ত এক দূরপাল্লার শটে সেই যে বল জালে জড়ালেন, পুরো আর্জেন্টিনা দলকেও যেন জাগিয়ে তুললেন হুংকার দিয়ে। তার অনুপ্রেরণায় এনজোর কাস্তেবাকা শটের মায়ায় পড়লেন ওচোয়া নিজেও। আর আর্জেন্টিনা ফিরে এল বীর বেশে। খাদের কিনারায় দাঁড়িয়েও মেসি বললেন, হারার আগে হার নয়। মেক্সিকোকে হারিয়ে আর্জেন্টিনার ভাগ্যের লেখক এখন খোদ আর্জেন্টিনাই, পরের রাউন্ডে যাওয়ার আশার পালেও তাই লাগল জোর হাওয়া।
প্রথমার্ধে অবশ্য আর্জেন্টিনার ঘাম ছুটিয়ে ছেড়েছিল মেক্সিকো। আর্জেন্টিনার উইংয়ে যে গতির অভাব আছে সেটা তারা পড়েই এসেছিলেন। উইংব্যাকরাও যাতে সুবিধা করতের না পারে সেজন্য তিন জন সেন্টার ব্যাক মাঝে জটলা পাকিয়ে দুই পাশে দুই উইং ব্যাক দিয়েও মেসিদের আটকে রেখেছিল মেক্সিকো। মাঠ বড় করে খেলতে চাইলেও সুবিধা তাই করতেই পারছিল না আর্জেন্টিনা। গোল মুখে মেক্সিকোর হার্ভিং লোজানো আর ভেগা বারবারই হুমকি দিয়ে গেলেও ফাইনাল থার্ডে কার্যকর হতে পারছিলেন না। তবে দুজনই নিচে নেমে এসে মিডফিল্ডারদের দারুণ সহায়তা দিয়েছিলেন। কট্টর প্রেসিংয়ে আর্জেন্টিনাও পাস দিতে খাবি খাচ্ছিল বেশ।
তবে দ্বিতীয়ার্ধে মেক্সিকো পরিকল্পনা পরিবর্তন করে রক্ষণভাগ গভীরে নিয়ে গেলে পাসিং গুছিয়ে তোলে আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধে একেবারে নিচে নেমে এসেও বল নিজেদের কাছে লম্বা সময় ধরে রাখতে না পারাতে মেসি যে যারপরনাই বিরক্ত ছিলেন সেটা বোঝা যাচ্ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে মিডফিল্ডের মাঝে পাস খেলানোর সুযোগের গন্ধ পেয়েই মেসি ঠিকই মাঝ দিয়ে দৌড় দেওয়ার উপায়টাও বের করে ফেলেন। যেই ভাবা সেই কাজ! ৬৪ মিনিটের মাথায় ডান প্রান্ত থেকে ডি মারিয়ার লাফিয়ে ওঠা পাস বাগে পেয়েই মেক্সিকোর খেলোয়াড়দের ছিটকে মাঝ দিয়ে জায়গা করে নিলেন। গোলপোস্টের দিকে সামান্য ফাঁক পেয়েই ২৫ গজ দূর থেকে মাটি কামড়ানো এক শটে ওচোয়াকে কোনও সুযোগ দিলেন না। ডিয়েগো ম্যারাডোনার সমান ২১তম ম্যাচ খেলতে নেমে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েছিলেন, গোলটা দিয়ে প্রয়াত ম্যারাডোনার পাশেও বসলেন ৮ গোল নিয়েই!
মেসির গোলের পর মেক্সিকোর উঠে আসার বিকল্প ছিল না। তবে লিসান্দ্রো মার্টিনেজের গেরো আর খুলতে পারেনি মেক্সিকো। সেই সাথে পরে নামা এজেকিয়েল প্যালাসিয়োস আর ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো দেখিয়েছেন দারুণ দৃঢ়তা। আরেক বদলি এনজো ফার্নান্দেজ সেতার সুযোগ নিয়েই নিজেকে নিয়ে এলেন পাদপ্রদীপের তলে। ৮৭ মিনিটে বাঁ প্রান্তে মেসির কাছে পাস বুঝে নিয়ে একজন ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে জায়গা করে নিলেন। তারপর ডান পায়ের কাস্তে বাকা এক শটের জাদুতে ওচোয়াকে ধোঁকা দিয়ে খুঁজে নিলেন জালের কোণা। অসাধারণ সেই গোল মেক্সিকোর কফিনে শেষ পেরেকতা ঠুকে দেয়। আর আর্জেন্টিনা পেয়ে যায় আসরের প্রথম জয়। শেষ ম্যাচটাও তাদের জন্য হবে আরেকটি পরীক্ষা। তবে পোল্যান্ডের বিপক্ষে সেই পরীক্ষায় মেসি-বাহিনী যে নিজেদের নিংড়ে দেবেন তা তো বলাই বাহুল্য।