• " />

     

    ২৮ বছর বয়সেই কেসলারের অবসর

    ২৮ বছর বয়সেই কেসলারের অবসর    

    ক্যারিয়ারে দেড়শর মত ম্যাচে গোল ৮৭টি। জার্মানীর হয়ে ২৯ ম্যাচে গোল ১০টি। যেকোনো স্ট্রাইকারের জন্য বেশ প্রশংসনীয় পরিসংখ্যানই বলা যায়। জেনে অবাক হবেন, এটি কোনো ফরওয়ার্ড নয়, বরং একজন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের গোলসংখ্যা। নাদিন কেসলার। ২০১৪ সালে যখন রোনালদো নিজের তৃতীয় ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন, তখন মেয়েদের মধ্যে সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছিলেন এই জার্মান নারী, নিষ্ঠুর ইঞ্জুরি যাকে মাত্র ২৮ বছর বয়সেই অবসরে যেতে বাধ্য করেছে।

    পশ্চিম জার্মানীর ওয়েজেলবার্গে জন্ম নেওয়া এই তারকা মিডফিল্ডার ছোটবেলা থেকেই তার ফুটবল জাদু দেখাতে শুরু করেন। স্কুল, কলেজে থাকাকালীন সময় প্রায়ই ছেলেদের বিপক্ষেও তাকে খেলতে দেখা যেত। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই জার্মান দ্বিতীয় বিভাগের দল সারবুকেনের মূল দলে সুযোগ পেয়ে যান নাদিন। সুযোগ পাওয়ার দু’বছরের মাথায় পর পর দু’বার দলের এবং একবার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন একজন ‘নাম্বার টেন’ হয়েও। বয়স যখন ২১, তখন তাকে দলে ভেড়ায় প্রমীলা বুন্দেসলিগার প্রথম বিভাগের ক্লাব টারবিন পটসড্যাম। ঐ মৌসুমেই ১১ গোল করে দলকে লিগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানোয় অনবদ্য ভূমিকা রাখেন এই তারকা। ঘরোয়া লিগ ও ইউরোপে ‘প্লেয়ার অফ দ্যা সিজন’ হওয়ায় বড় ক্লাবগুলোর নজরে পড়ে যান নাদিন। পটসড্যামের পক্ষে তাকে ধরে রাখা ভীষণ প্রতিকূল হয়ে পড়ে।

    পটসড্যামে দুই মৌসুম কাটিয়ে উলফসবার্গে পাড়ি জমান দলবদলের এই ‘হটকেক’। ১১-১২ মৌসুমে আবারো ১১ গোল করেন কেসলার। কিন্তু এবার চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। উলফসবার্গ দ্বিতীয় হওয়ায় মৌসুমটা কিছুটা হলেও হতাশাজনক যায় এই চ্যাম্পিয়নের। পরের মৌসুমে আবারো শিরোপার স্বাদ পান তিনি। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মত লিগ ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ‘ডাবল’ জিতে নেন। এত সাফল্যও যেন ‘যথেষ্ট; ছিল না কেসলারের জন্য। ক্লাব থেকে শিরোপা জয়ের ‘খেলা’টা এবার মনযোগ সরে গেল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। সেখানেও তাকে দমাতে পারেনি কেউই। ২০১৩ সালের ইউরোজয়ী জার্মান দলের মূল কান্ডারি ছিলেন। পরের বছর যেন নিজেকেওছাড়িয়ে যান ততদিনে বিশ্বসেরা হয়ে ওঠা এই মিডফিল্ড জেনারেল। উলফসবার্গকে প্রমীলা ফুটবলের ইতিহাসে প্রথম ক্লাব হিসেবে ‘ট্রেবল’ জেতান নাদিন। সেবছর ‘ইউয়েফা বেস্ট ওমেন্স প্লেয়ার ইন ইউরোপ’ ও জিতে নেন নাদিন কেসলার।

     

    দলগত ভাবে প্রায় সব জেতার পর ব্যক্তিগত সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছান ২০১৫ ব্যালন ডি’অর গালায়। ১৭.৫২% ভোট পেয়ে জিতে নেন ব্যালন ডি’অর।

    ক্যারিয়ার জুড়ে হাঁটুর ইঞ্জুরিটা বাগড়া বাঁধানোর চেষ্টা করলেও কখনোই দলের প্রয়োজনে পিছপা হননি নাদিন কেসলার।  কিন্তু ২০১৬ এর এপ্রিলে শেষ অস্ত্রোপচার করে বুঝতে পারলেন, বেরসিক ইঞ্জুরিটাই জিতে গেল। এর পর এমনকি জার্মানির গীর্জায় তাঁর জন্য প্রার্থনারও আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু লাভ হয়নি, চোট থামিয়ে দিল তার দু’পায়ের কারিশমা।


    জুলাইয়ের ২০ তারিখে ঘানার সাথে প্রীতি ম্যাচের আগে তাকে সংবর্ধনা জানিয়ে খুব সম্ভবত নিজেদের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মহিলা খেলোয়াড়দের একজনকে বিদায় জানাল ‘ডি ম্যানশ্যাফট’রা। নিজেদের প্রিয় সতীর্থের জন্যই যেন ঘানাকে ১১-০ গোলে উড়িয়ে দেয় প্রমীলা জার্মানরা। বিদায়বেলায় সতীর্থ, স্টাফ, কোচ এবং অগণিত সমর্থকদের অশ্রুসজল নয়নই যেন বলে দিচ্ছিল; জার্মানীর জন্য, বিশ্ব ফুটবলের জন্য নাদিন কেসলার কী ছিলেন!