• ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ সিরিজ
  • " />

     

    বাংলাদেশ দলের 'মোশাররফ-রহস্য'

    বাংলাদেশ দলের 'মোশাররফ-রহস্য'    

    আগামী মাসেই বয়সের ঘড়ি ৩৫ ছোঁবে তাঁর। সাড়ে ৮ বছর পর জাতীয় দলে ফিরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রচলিত একটা ধারণা নাড়িয়ে দিয়েছেন, বার্তা দিয়েছেন এতো দীর্ঘ বিরতির পরও এখানে নির্বাচকদের সুনজরে আসা সম্ভব। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে বল হাতে ‘ক্যারিয়ার সেরা’ সাফল্য (৩/২৪) তাঁকে জায়গা করে দেয় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি সিরিজেও। কিন্তু গত রাতের আক্ষেপ আর হাহাকারের হারে দর্শক থেকে শুরু করে বোদ্ধামহলের কাঠগড়ায় ওঠা অন্যতম নামটা তাঁরই- মোশাররফ হোসেন রুবেল।

     

    গতকালের ম্যাচে ঠিক কোন ভূমিকায় তিনি দলে ছিলেন- সবচেয়ে বড় প্রশ্ন সেটাই। অনুসন্ধিৎসু কেউ কেউ খুঁড়তে চাইছেন অতীতও। যে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করার সনদ নিয়ে তিনি জাতীয় দলে, আসলেই কতোটা ‘ভালো’ সেটা? তুলনামূলক বিচারে জাতীয় দলের আরেক ‘ভেটেরান’ বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাকের ঘরোয়া সাফল্যও তাহলে কেন বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে না- সম্পূরক প্রশ্ন হিসেবে উঠছে সে প্রসঙ্গও। বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন এমন এক সময়ে প্রবেশ করেছে যেখানে নাসির, আল-আমিনদের মতো নিকট অতীতের ‘পরীক্ষিত’ পারফর্মাররাও প্রতিযোগিতায় ‘টিকতে না পেরে’ রিজার্ভ বেঞ্চে অলস সময় কাটাচ্ছেন। ঠিক এই সময়টায় ৩৫ বছরের একজন ‘বুড়ো’ ক্রিকেটারের মূল একাদশে জায়গা করে নেয়ার জন্য অন্তত পরিসংখ্যানের খাতায় যতোটা শক্তিশালী ‘প্রোফাইল’ থাকা দরকার সেটাই বা তাঁর কতোটুকু আছে? বলা বাহুল্য, সন্তোষজনক জবাব মিলছে না অধিকাংশ প্রশ্নেরই।

     

     

    ২০০১ সালে প্রথম শ্রেণী ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া মোশাররফ হোসেন রুবেল প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে সুযোগ পান ২০০৮ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক সিরিজে। তিন ম্যাচ থেকে তাঁর প্রাপ্তি ছিল একটিমাত্র উইকেট। কাগজে-কলমে ‘অলরাউন্ডার’ এই ক্রিকেটারের ব্যাট হাতে ওডিআই সেরা ৮ রান, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক ওয়ানডেতে পাওয়া সে রান তিনি এরপর এখনও পর্যন্ত আরও ৪টি ওয়ানডে খেলেও টপকে যেতে পারেন নি।

     

    সুবিধে করতে না পারায় ওই এক সিরিজেই তখনকার মতো থেমে যায় মোশাররফের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। এরপর ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রাথমিক দলে আবার ডাক পান। তবে বিপিএল ফিক্সিং কেলেংকারিতে নাম জড়িয়ে বাদ পড়েন। পরবর্তীতে অবশ্য ওই অভিযোগ থেকে মুক্তি পান।

     

    যে বিপিএল গায়ে কালিমা মাখতে নিয়েছিল, মোশাররফ চোখে পড়ার মতো আলো ছড়িয়েছেন সে আয়োজনের পুনর্জন্মেই। গত আসরে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে ১০ ম্যাচ থেকে নিয়েছেন ১৬ উইকেট, টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট পাওয়াদের তালিকায় তিনি ৭ম।

     

    তবে একদিনের ক্রিকেটে তাঁর সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স কি খুব আহামরি কিছু? সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ১৪ ম্যাচ খেলে ৩৮.৬৬ গড়ে উইকেট পেয়েছেন ১২টি, লিগের সর্বোচ্চ উইকেট প্রাপ্তদের তালিকায় তাঁর অবস্থান ৩৯ নম্বরে! এর আগের মৌসুমে ১৫ ম্যাচ থেকে ১৬ উইকেট নিয়ে ছিলেন ২৪ নম্বরে। অথচ দু’ মোসুমেই বলে হাতে তাঁর চেয়ে সফল ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক (১৮ ও ২১ উইকেট)। ঢাকা লিগে বল হাতে নিয়মিতই সাফল্য পাচ্ছেন এক সময় জাতীয় দলে খেলে যাওয়া আরেক বাঁহাতি স্পিনার এনামুল হক জুনিয়রও।

     

    সেই রুবেল ‘স্পেশালিস্ট’ স্পিনার হিসেবে দলে থাকলেও গত ম্যাচে বল করেন মাত্র ৩ ওভার! নামের পাশে ‘অলরাউন্ডার’ তকমাটার সুবিচার করতে পারলেও তাঁর দলে অন্তর্ভুক্তির স্বপক্ষে একটা যুক্তি দাড় করানো যেতো। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৮৮ রানসহ ৭টি অর্ধশতক ব্যাট হাতে তাঁর সামর্থ্যের জানান দিলেও জাতীয় দলের হয়ে তাঁর ব্যাটিংয়ে এখনও পর্যন্ত সেটার প্রতিফলন দেখা যায় নি। সর্বশেষ দু’ ম্যাচে এমনকি ব্যাটে-বলে সংযোগ ঘটাতেই গলদঘর্ম হতে দেখা যায় তাঁকে।

     

    ফিল্ডিংয়ে ব্যর্থতা কিংবা ফিটনেসহীনতার যুক্তিতে যখন আল-আমিন হোসেনের মতো ইন-ফর্ম পেসার দলে জায়গা পাচ্ছেন না তখন গতকালের ম্যাচে বাংলাদেশ দলের ক্যাচ মিসের উৎসবে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেন মোশাররফ। বেন স্টোকস আর বেন ডাকেটের গুরুত্বপূর্ণ জুটিটি ভাঙার দুটো দারুণ সুযোগ নষ্ট হয় তাঁর হাত ফসকেই।

     

    বলা হচ্ছে, হাই পারফরম্যান্স স্পিন ক্যাম্পের পরামর্শক সাবেক ভারতীয় স্পিনার ভেঙ্কটপতি রাজুর পরামর্শেই তাঁকে ওয়ানডে পুলে জায়গা দেয়া হয়। সেখান থেকে সরাসরি মূল দলে সুযোগ পেয়ে গেলেও গত ম্যাচের পারফরম্যান্সে দলে তাঁর ভূমিকাটা আদতে কী- সে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে বড় করেই।