একজন মরগানের পরাজয়
একজন অধিনায়ক শুধু দলের যূথবদ্ধতার প্রতীক নন, বরং একজন নেতাও। নেতৃত্বের অনুচ্চারিত যে শর্ত সেটা হলো কোনো অবস্থাতেই নত না হওয়া। সেখানেই ভীষণ ব্যর্থ এউইন মরগান। নিরাপত্তা জুজুর নাম জপে বাংলাদেশ সফর না করা মরগান নিজের দুর্বলতা রীতিমতো উদোম করে দেখিয়েছেন। সে কারণেই পরাজিত মরগান। সতীর্থদের বাংলাদেশ সফরে পাঠিয়ে নিজে নিরাপদে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে হারিয়েছেন অধিনায়ক হিসেবে বজায় থাকার নৈতিক অবস্থান।
সবকিছু মিলিয়ে এউইন মরগানকে অনেক সৌভাগ্যবান বলতেই হয়। গভীর নিরীক্ষা ও নিরাপত্তার এলোমেলো ছকগুলো নিখুঁতভাবে সাজিয়েই বাংলাদেশ সফরের সবুজ সংকেত দিয়েছিল ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রেগ ডিকাসনের উদায়স্ত পরিশ্রম পাত্তা পায়নি খোদ ইংল্যান্ড অধিনায়কের কাছে। তিনি ও ওপেনার অ্যালেক্স হেলস সতীর্থদের ঢাকাগামী বিমানে চাপিয়ে দিয়েছেন একলা। অথচ কঠিন সময়েই তো অধিনায়ককে দলের বড্ডো বেশি প্রয়োজন। মরগানের সৌভাগ্য তবুও দল তাঁর প্রতি বেঁকে বসেনি। অন্তত সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁর নামে কোনো সমালোচনা হয়নি। বরং শোনা গেছে তাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন।
আয়ারল্যান্ডে জন্মানো ও দেশটির হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা মরগানের সৌভাগ্য যে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডও তাঁর ওপর খড়গহস্ত হয়নি। কোচ ট্রেভর বেলিস কিংবা ইসিবি কর্তা অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস বিরূপ হননি তাঁর প্রতি। দলের প্রতি মরগানের যে অদ্ভুত আলস্য, সেটা আসলে অধিনায়কত্ব বজায় থাকার নিশ্চয়তা পেয়েই। বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি পর্যায়ের নিরাপত্তা পেয়েছে ইংল্যান্ড। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাবের সহস্র সদস্য আধুনিক যুদ্ধসাজে সজ্জিত হয়ে উদয়-অস্ত খেটে ইংল্যান্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। ইংল্যান্ডের অন্য সবাই তাঁদের ওপর আথা রাখলেও রাখতে পারেননি খোদ অধিনায়ক।
বাংলাদেশে না আসলেও আগামী জানুয়ারিতে ঠিকই ভারত সফরে যাবেন মরগান। ১৫ জানুয়ারি পুনেতে প্রথম ওয়ানডেতে অধিনায়কত্বের নিশ্চয়তা পেয়েই বাংলাদেশগামী বিমান থেকে নিজের নামটা কাটিয়ে নেন তিনি। অথচ তিন ওয়ানডের সিরিজে কী দুর্দান্তই না ছিল জস বাটলারের দল। ঘরের মাঠে টানা ছয়টি ওয়ানডে সিরিজ জেতা বাংলাদেশকে হারানো সহজ ছিল না। ভারপ্রাপ্ত অধিয়ানায়ক জস বাটলার দলকে একসূত্রে গেঁথে এনে দিয়েছেন ২-১ ব্যবধানে জয়।
যে নিরাপত্তা শঙ্কার কথা বলে বাংলাদেশে আসেননি মরগান, সেটা আছে ভারতেও। একজন খেয়োয়াড়ের জন্য নিরাপত্তার এই শঙ্কাটা নতুন বাস্তবতা। টিকে থাকতে হলে সময়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার বিকল্প নেই। বাংলাদেশে আসতে অস্বীকার করে স্রোতের বিপরীতে চলার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এউইন মরগান সেটা আসলে তাঁর এই মানিয়ে নেওয়ার অক্ষমতার নতজানু প্রকাশ। এমন একজন আর যাই হোক নেতা হতে পারেন না। পারেন না ইংল্যান্ড দলের নেতৃত্বে ফেরত আসতে।