সেই নাথুর নতুন বাড়ির স্বপ্নপূরণ...
বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানার সামান্য একজন শ্রমিক তিনি। বেতন সব মিলিয়ে ৮ হাজার রুপি। পাঁচজনের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় তিন বেলা পরিবারকে ভরপেট খাওয়ানোর ব্যাপারেই ভাবতে হয় ভরত সিংকে। কিন্তু এদিকে ছেলে বায়না ধরেছে ক্রিকেট শিখবে, একাডেমীতে ভর্তি হবে। প্রতিদিন একবার করে আবদার করে বাবার কাছে। তবে ভর্তি করলে লাগবে ১০ হাজার রুপি, কীভাবে সে এতগুলো টাকা জোগাড় করবে? ছেলের আগ্রহের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানলেন, বন্ধুদের কাছে ধার দেনা করে ছেলে নাথু সিংকে ভর্তি করিয়ে দেন রাজস্থান ক্রিকেট একাডেমীতে। এরপর যা হলো, সেটা বোধ হয় রূপকথাতেই হয়। ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ পারফর্ম করে নজরে এলেন সবার, আইপিএলের নিলামে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস তাকে কিনে নিলো প্রায় ৩.৫ কোটি রুপিতে! এবার নিজের পরিবারের জন্য বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছেন নাথু।
ভাবতে পারেন, আরে একটা বাড়ি আর এমন কী! কিন্তু নাথুর পরিবারের কাছে একটা বাড়ির মূল্য সেটা হয়তো বাকি দশজন বুঝতে পারবে না। জয়পুরের কলোনিতে দুই রুমের একটা ‘কুঁড়েঘরেই’ বেড়ে ওঠা নাথুর। বৃষ্টিতে ঘর ভেসে যায়, শুকনো মৌসুমেও নানা সমস্যা। ছোটবেলা থেকে একটাই স্বপ্ন ছিল, একদিন এই ঘর থেকে মুক্তি দেবেন পরিবারকে। কিন্তু স্বপ্ন দেখলেই তো হয় না, সেটাকে পূরণও তো করতে হবে। নাথুর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ক্রিকেটের মাধ্যমেই।
অথচ এই ক্রিকেট নিয়েই কত কাণ্ড নাথুর জীবনে। পড়াশুনায় একেবারেই মন ছিল না, পরিবারের দুশ্চিন্তা লেগেই থাকতো। ছেলেটা বড় হয়ে কী করবে? খেলের মনোযোগ শুধু ঐ ক্রিকেটের দিকেই। পাড়ার মাঠে টেনিস বলে ঝড় তুলতেন, তার গতির গল্প ছড়িয়ে পড়েছিল আশেপাশের সবখানেই। পরে সবাই বুদ্ধি দিল, এবার একাডেমীতে ভর্তি হয়েই যাও!
কিন্তু বললেই কী আর ভর্তি হওয়া যায়? বাড়ি থেকে একাডেমীর দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি। এর উপর টাকাও লাগবে প্রচুর। বাবা রাজি হবেন তো? এই প্রশ্ন সারাক্ষণই ঘুরপাক খেতো তার মাথায়। শেষ পর্যন্ত ভর্তি হয়ে গেলেন। একাডেমীতে একদিন এলেন রাহুল দ্রাবিড়। নাথুর বোলিং দেখে বললেন, এই ছেলে একদিন দারুণ কিছু করে দেখাবে। রাহুলের কথায় উজ্জীবিত হয়ে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে শুরু করলেন নাথু।
ফলও আসলো দ্রুতই। দেখতে দেখতেই সুযোগ পেয়ে গেলেন রঞ্জি দলে। এরপর ডাক পেলেন ভারতের ‘এ’ দলেও। যদিও সেবার হতাশা নিয়েই ফিরতে হয়েছিল নাথুকে। এরপর ঘরে ফিরে নিজেকে নতুনভাবে প্রস্তুত করলেন। ভারতের ‘বি’ দলের হয়ে দেওধর ট্রফিতে তার দুর্দান্ত সুইং এবং গতি নজর কাড়ল সবার। মুগ্ধ হলেন এমআরএফ পেস ফাউন্ডেসনের প্রধান কোচ এস সেনথিলাথান, “নাথু ভবিষ্যতে দেশের সম্পদ হবে। বলের ওপরে তার দারুণ নিয়ন্ত্রণ আছে, গতিও অসাধারণ। সে বিরল এক প্রতিভা।”
এই বছরের ফেব্রুয়ারিতেই এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স আইপিএলের নিলামে বেস প্রাইসের ৩২গুন বেশি খরচ করে কিনে নিল তাকে। ২০ বছর বয়সী নাথু পেলেন ১০লাখ রুপির ভিত্তিমূল্যে প্রায় ৩.৫ কোটি রুপি! টাকা পেয়েই বলেছিলেন, সবার আগে একটা বাড়ি বানাবেন। বছরের শেষে এসে প্রায় তৈরি হয়ে গিয়েছে সেই বাড়ি। বাবা -মা কে নিয়ে খুব তাড়াতাড়িই উঠবেন ঐ বাড়িতে। যেই ক্রিকেট খেলা নিয়ে পরিবারের সবার এত দুশ্চিন্তা ছিল, আজ সেই ক্রিকেটই তাদের জীবনে এনে দিল নতুন এক মোড়।