• " />

     

    অযত্নে, অবহেলায় মলিন মারাকানা

    অযত্নে, অবহেলায় মলিন মারাকানা    

    ব্রাজিলের ফুটবলে তো বটেই, গোটা দুনিয়ার ফুটবলপ্রেমীদের কাছেই মারাকানা মক্কার সমার্থক। তবে মারাকানার নাম বললেই ১৯৫০ বিশ্বকাপের প্রাণবন্ত গ্যালারিতে ২ লাখ দর্শক উপস্থিতির যে সাদাকালো ছবিটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে, সেই মারাকানা রূপ বদলে ফেলেছে বেশ ক’ বছর। রিও ডি জেনিরো সিটি সেন্টারের উত্তরে অবস্থিত স্টেডিয়ামটি এখন আর ঠিক ব্রাজিলীয় ফুটবলের ঐতিহ্যের ধারক নয়, বরং দাঁড়িয়ে আছে অত্যাধুনিক স্থাপনার নিদর্শন হয়ে। নানা বিধিনিষেধে স্টেডিয়ামপাড়ায় দর্শকের ঢল কমতে শুরু করেছে আরও আগে থেকেই। এ বেলা অযত্ন আর অবহেলায় ঐতিহাসিক ময়দানটির ভবিষ্যৎই পড়েছে হুমকির মুখে।

     

     

    ২০১৪ বিশ্বকাপের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগে আমূল সংস্কার হওয়া মারাকানার আঙিনায় দৈন্যতার ছাপ ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। মাঠের ঘাস মরে যাচ্ছে, বিভিন্ন কক্ষের জানালাগুলো ভাঙা, ৬ হাজারের মতো আসন গায়েব, নিয়মিতই অফিস থেকে চুরি হচ্ছে কম্পিউটার, টিভি। অবস্থা এতোটাই বেগতিক যে লুটপাট ঠেকাতে রীতিমতো পুলিশ ডাকতে হয়েছে রিওর ফুটবল কর্তাদের।

     

    আচমকা স্টেডিয়াম আঙিনায় নিজেকে আবিষ্কার করলে যে কেউ ভেবে বসতে পারেন যে বহুদিন ধরে পরিত্যক্ত কোনো স্থাপনায় ঢুকে পড়েছেন বুঝি। অথচ এই ডিসেম্বরেই সেখানে ঘরোয়া লিগের খেলা হয়েছে, নতুন বছর শুরুর দিন তিনেক আগে এক চ্যারিটি ম্যাচের গ্যালারিতে ছিল দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর ঔদাসিন্যে মারাকানা এখন আক্ষরিক অর্থেই ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে।

     

    ২০১৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপকে সামনে রেখে স্টেডিয়ামটির আমূল সংস্কারে হাত দিয়েছিল রিওর প্রাদেশিক সরকার। কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দার সে সময়ে ফুটবলের পিছনে এতো বড় অংকের বিনিয়োগের বিরুদ্ধে বড় ধরণের আন্দোলন শুরু হয় ব্রাজিলজুড়ে। সংস্কার বাবদ প্রায় অর্ধকোটি ডলার খরচ করার পরও তাই রিওর সরকার স্টেডিয়ামটির দেখভালের দায়িত্ব তুলে দেয় মারাকানা এসএ নামের একটি বেসরকারি শিল্পগোষ্ঠীর হাতে। তবে বানিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় এর দায়িত্ব নেয়ার পর সংস্থাটি নানা জটিলতায় উল্টো বড় অংকের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে। ফলশ্রুতে তাঁরা এ দায়িত্ব থেকে সরে যেতে চাইলেও প্রাদেশিক সরকারের সাথে চুক্তির মারপ্যাচে কাগজে-কলমে সেটাও এখনই সম্ভব হচ্ছে না। দু’ পক্ষের চাপানউতোরের মাঝে পড়ে অযত্নে, অবহেলায় একটু একটু করে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে মারাকানা।

     

    অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক জটিলতার বাইরে মারাকানার কফিনে পেরেক ঠুকছে দুর্নীতিও। মারাকানা এসএ’র ৯৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক প্রতিষ্ঠানটির নামে আলোচিত এক আর্থিক কেলেংকারির অভিযোগ রয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠানই আবার স্টেডিয়ামের দেখভালের কাজ দেয়ার বিনিময়ে রিওর গভর্নর সার্জিও কাবরাল তাঁদের কাছ থেকে ঘুষ চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ তোলে। সে অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তারও হয়েছেন মি. কাবরাল, চলছে তদন্ত।


    ২০১৪ বিশ্বকাপ আর ২০১৬ অলিম্পিক আয়োজনের মূল উদ্দেশ্যটা ছিল ব্রাজিলকে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধরূপে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করা। সে লক্ষ্য যে আদতে নামমাত্রও অর্জন হয় নি তা-ই যেন চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিচ্ছে মারাকানার মলিন মুখ।

     

    ইএসপিএন অবলম্বনে