• বাংলাদেশ বনাম শ্রীলংকা
  • " />

     

    ইতিহাসেও তামিমের যত আক্ষেপ

    ইতিহাসেও তামিমের যত আক্ষেপ    

    সেই কবে চূড়ায় উঠেছিলেন সুনীল গাভাস্কার। একসময় যেটি ছিল এভারেস্টের মতোই আরাধ্য, গাভাস্কার সেখানে সবার আগে  উঠেছিলেন আজ থেকে আরও ৩০ বছর আগে। এরপর সেখানে উঠেছেন আরও অনেকে, তবে বাংলাদেশের কারও পা পড়েনি। অবশেষে তামিম ইকবালই প্রথম বাংলাদেশের পতাকা গাড়লেন, প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের মাইলফলকও ছুঁলেন।

    ডাম্বুলার এই ইনিংস অনেক কারণেই তামিমের কাছে আলাদা হয়ে থাকবে। ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি এর আগেও পেয়েছিলেন সাতবার, তিন বছর আগে হাম্বানটোটায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও একবার ছুঁয়েছিলেন তিন অঙ্ক। তবে ওয়ানডেতে গত কিছুদিনের ফর্ম ঠিক যেন তামিমের সঙ্গে যাচ্ছিল না। গত বছর আফগানিস্তানের সঙ্গে ঢাকায় করেছিলেন ১১৮ রান। এরপর সাত ওয়ানডেতে একটি ফিফটি, সর্বোচ্চ রান ৫৯। রানখরা হয়তো ঠিক বলা যাবে না, কিন্তু তামিমের সঙ্গে অন্তত যায় না। তবে রঙিন পোশাকে আত্মবিশ্বাসের জ্বালানিটা পেয়েছিলেন কলম্বো থেকেই। পুরো টেস্ট সিরিজে তেমন কিছু করতে পারেননি, নিজের সেরাটা জমিয়ে রেখেছিলেন পি সারা ওভালে শততম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে। ৮২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস পথ দেখিয়েছে বাংলাদেশকে, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে টেস্টে প্রথমবারের মতো জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আজ ডাম্বুলায়ও তামিমের ব্যাট থেকে ঠিকরে পড়েছে সেই আত্মিবিশ্বাস।

    মাইলফফলকটা অবশ্য ছুঁয়ে ফেলেছেন ম্যাচের তৃতীয় বলেই। প্যাডের ওপর আসা বলটা ডিপে ঠেলে দিয়ে দুই রান নিয়েই তামিম ছুঁয়ে ফেলেছেন পাঁচ অঙ্ক। শুরুতে ট্রেডমার্ক শটে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, আজকের দিনটা তাঁরই হতে পারে। শুরুতে অবশ্য একটু সংযত ছিলেন, সাব্বিরের সঙ্গে জুটিতেও মূলত এক প্রান্ত থেকে ধরে রাখার কাজটাই করেছেন। এর মধ্যেই সিঙ্গেল নিয়ে রানের চাকা সচল রেখেছেন, ফিফটির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ৭৬ বল পর্যন্ত। তার ঠিক আগেই অবশ্য পাঁচ বলের মধ্যে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ, তামিমের কাছ থেকে বড় কিছুরই আশা করছিল বাংলাদেশ।

    তামিম জানতেন, তখন কোনো ভুল করা যাবে না। এর আগে একবার উড়িয়ে মারতে গিয়ে আরেকটু হলেই ক্যাচ দিয়ে ফেলেছিলেন। ৬০ রান পর্যন্ত তামিম খেলেছেন ৯০ বল। তবে শেকলটা ভাঙতে শুরু করলেন ৩১ বলে এসে। গুনাতিলকার ওই ওভারেই মারলেন তিনটি চার, এক ওভারেই পৌঁছে গেলেন ৭০ রানে। এরপর সুযোগ পেলেই বাজে বল শায়েস্তা করেছেন, পরের ৩০ রান করার জন্য খেলেছেন মাত্র ২০ বল। নব্বইয়ের ঘরে এসেও স্নায়ুচাপের ছিটেফোঁটাও ছিল না তাঁর খেলায়, সান্দাকানকে পুল করে চার মেরে পৌঁছে চলে যান সেঞ্চুরি থেকে নিঃশ্বাস ছোঁয়া দূরত্বে। লাহিরু কুমারার বলটা ঠেলে দিয়েই পৌঁছে যান তিন অঙ্কে, ড্রেসিংরুমের সতীর্থেরা তখন দাঁড়িয়ে পড়েছেন অভিবাদন জানাতে।

    তবে সেখানেই থেমে যাননি তামিম। সেঞ্চুরি করেই পেরেরাকে উড়িয়ে মেরেছেন কভারের ওপর দিয়ে। এরপর ভাগ্যের ছোঁয়াও পেয়েছেন কিছুটা, কুমারাকে উড়িয়ে মারতে গিয়েই ক্যাচ দিয়েছিলেন ডিপ স্কয়্যার লেগে। কিন্তু ক্যাচ নেওয়ার বদলে সিরিবর্ধনা উল্টো সেটিকে ছয় বানিয়ে দিয়েছেন। শেষদিকে ক্লান্তি জেঁকে বসেছিল বলেই আউট হয়ে গিয়েছিলেন, তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজের করা বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড নতুন করে লিখিয়েছেন। ডাম্বুলাতেও শহীদ আফ্রিদির করা সর্বোচ্চ ১২৪ রানের রেকর্ডটা ততক্ষণে লিখিয়ে ফেলেছেন নতুন করে। কাকতালীয়ই বটে, সাত বছর আগে আফ্রিদি সেই রেকর্ড গড়েছিলেন বাংলাদেশের সঙ্গে। ডাম্বুলায় বাংলাদেশের সেই অভিশাপের স্মৃতিটাও তো মুছে দিলেন তামিম।

    তবে তারপরও তামিমের একটা আফসোস না থেকে পারে না। এই দশ হাজার রানের মাইলফলক তো অনেক আগেই ছুঁয়ে ফেলার কথা ছিল। তাঁর পরে অভিষেক হয়ে বিরাট কোহলি, কেন উইলিয়ামসন, ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসরা তো সেখানে আগেই চড়ে বসেছেন। সমসাময়িক রস টেলর বা অ্যালিস্টার কুকরা তো উঠে গেছেন আরও উঁচুতে। আরেকটু বেশি খেলার সুযোগ পেলে আর ২০১৪ সালটা মুছে ফেলতে পারলে তামিমও হয়তো সেখানে উঠে যেতেন আরও আগেই। তামিম অবশ্য এখন এখন নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাতে চাইবেন না। বাংলাদেশের হয়ে ব্যাটিংয়ের প্রায় সব রেকর্ডই নিজের করে নিয়েছেন। এখন তো শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়!