• বাংলাদেশ বনাম শ্রীলংকা
  • " />

     

    বাংলাদেশের সেরা সফর

    বাংলাদেশের সেরা সফর    

    সফরে দ্বিতীয়বারের মতো সিরিজে পিছিয়ে বাংলাদেশ। জিতলে ড্র হবে টি-টোয়েন্টি সিরিজ; টেস্ট ও ওয়ানডের মতোই। তবে সিরিজ ছাপিয়ে গেল আগের ম্যাচে অধিনায়কের একটা ঘোষণা। মাশরাফি বিন মুর্তজা টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলার জন্য বেছে নিলেন আর প্রেমাদাসার এ ম্যাচকেই। বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত যে সফরটা সেরা হতে চলেছিল, যেন গতিপথ বদলে গেল সেটারই! মাশরাফির অবসর ঘোষণা যে প্রশ্ন তুললো অনেক!


    পরীক্ষা ছিল দেশের বাইরে খেলা। এ দলের উন্নতির গ্রাফটা উর্ধ্বমুখী, তবে বৈশ্বিক আসর ছাড়া দেশের বাইরে খেলা হয়নি নিউজিল্যান্ড সফরের আগে। সেই সফরে সুযোগ পেয়েও বারবার হাতে ফেলে হারতে হলো। ভারতের সঙ্গে একটা টেস্টেও মিললো সুযোগ। হাতছাড়া সেটিও। শ্রীলঙ্কা সফরে সুযোগ আসতে পারে আরও বড়, সব মিলিয়ে ভাবা হচ্ছিল এমনটাই। তবে সে সুযোগ কতোখানি নিতে পারবে বাংলাদেশ, প্রশ্ন ছিল সেটাই।

     

    গল টেস্টে জবাবটা দিতে পারলো না বাংলাদেশ। পাহাড়সম রানের ভার নিতে পারলেন না কোনো ব্যাটসম্যান। যে হেরাথকে নিয়ে শঙ্কা ছিল, সেই হেরাথেই বধ হলো বাংলাদেশ! দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডকে হারানোর সুখস্মৃতিটাও শুধু মিলিয়েই যাচ্ছে তখন, একের পর এক হারে। গল যুক্ত হলো সেই হারের তালিকায়।

     

    মুশফিকের বদলে কিপিং গ্লাভস হাতে তুলেছিলেন লিটন দাস, তিনিই পেলেন চোট। মুশফিকের হাতে ফিরলো গ্লাভস। পি সারা ওভালে নিজেদের শততম টেস্ট, সঙ্গে সিরিজ হারের শঙ্কা। টেস্ট ড্র করলেও হারতে হবে সিরিজ! দ্বিতীয় দিনের শেষভাগের অস্থিরচিত্তের সাকিব আল হাসান বদলে গেলেন একরাতেই। সেঞ্চুরিটা পেলেন মোক্ষম সময়ে। শ্রীলঙ্কার দেয়া চতুর্থ ইনিংসের লক্ষ্যটা বাংলাদেশ পার হলো তামিম ইকবালে ভর দিয়ে। শততম টেস্টে এসে জিতলো বাংলাদেশ, দেশের বাইরে সেরা জয়। ম্যাচসেরা তামিম, সিরিজসেরা সাকিব। ও হ্যাঁ, অভিষেক হওয়া মোসাদ্দেকের ৭৫ রানের ইনিংসটা ভোলা ঠিক হবে না একেবারেই।

     

    মাশরাফি কি উদযাপন করছেন ক্যারিয়ারটাই? 

     

    সফরের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাটা বাংলাদেশ শুধু পার হলো না, রেখে গেল চিহ্নও। সাদা পোশাক খুলে রাখার পালা এরপর। টেস্টের কঠিন প্রশ্নের তুলনায় ওয়ানডের প্রশ্নে অভ্যস্ত বাংলাদেশ। সিরিজ শুরুর আগে প্রস্তুতি ম্যাচের ফলে কিছু যায় আসে না, তবে ৩৫৪ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র দুই রানে হারলেও আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় বেশ খানিকটা! মাহমুদউল্লাহ আর মাশরাফির একটা জুটিই বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কার বোর্ড প্রেসিডেন্ট একাদশের খুব কাছে।

     

    পুরো সফরের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন দুইটি তো উঠেছে মাহমুদউল্লাহ ও মাশরাফিকে নিয়েই! টেস্ট সিরিজ শুরুর পরপরই দেশে প্রায় ফেরত পাঠানো হয়েছিল মাহমুদউল্লাহকে। টিম ম্যানেজমেন্টের হঠাৎ করে যেন মনে পড়েছিল শ্রীলঙ্কান দলে বাঁহাতিদের আধিক্যের কথা। কক্সবাজারে ইমার্জিং কাপ খেলার কথা মিরাজের, উল্টো তিনি আবার চড়ে বসলেন কলম্বোগামী বিমানে! অনেক নাটকের পর রয়ে গেলেন মাহমুদউল্লাহও। খেললেন তিন ম্যাচেই। খেললেন মিরাজও।

     

    টেস্টে যেখানে শেষ করেছিলেন তামিম, ওয়ানডেতে শুরু করলেন সেখান থেকেই। প্রথম ওয়ানডেতে ৯০ রানের জয় বাংলাদেশকে এগিয়ে দিল সিরিজে।

     

    বৃষ্টির সাথে শ্রীলঙ্কার আবহাওয়ার সখ্য সবসময়ের, দ্বিতীয় ওয়ানডে পন্ড করে বৃষ্টি জানান দিল সেটাই। তাসকিনের হ্যাটট্রিকটা কতোখানি কাজে লাগলো জানা গেল না ! জানা গেল না তৃতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ব্যাটিং রহস্যটাও। টেস্ট সিরিজের মতো ওয়ানডে সিরিজও ড্র!

     

    টেস্টের প্রশ্ন কঠিন, ওয়ানডের প্রশ্নে বাংলাদেশ অভ্যস্থ হলেও টি-টোয়েন্টি যেন সিলেবাসেরই বাইরে! প্রশ্ন বুঝতেই চলে যায় সময়! তবে সে প্রশ্নের চেয়েও বড় হয়ে ধরা দিল মাশরাফির অবসর-প্রশ্নটা। সে উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই সফরের শেষ ম্যাচটা উপস্থিত।

     

    আগের ম্যাচের বাংলাদেশ বদলে গেল। ব্যাটিংয়ে, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংয়ে। মাশরাফির জন্য ম্যাচটা জিতলো বাংলাদেশ। সিরিজ ড্র হলো, আরেকবার। এর আগে বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ জিতেছে, ড্রও হয়েছে। ওয়ানডেতে আর টি-টোয়েন্টিতেও হয়েছে এমন। তবে সব ফরম্যাটে একই সফরে সব সিরিজ ড্র করা, সঙ্গে প্রতিপক্ষের নাম শ্রীলঙ্কাই যথেষ্ট এ সফরকে ‘সেরা’ বানাতে। একটা শক্তিশালী দল হয়ে ওঠার পথে আরেকধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

     

    তবে মাশরাফির হঠাৎ অবসরটাই রেখে গেল প্রশ্ন। এ সফরে বাংলাদেশের সাফল্যের সঙ্গে হয়তো মনে রাখতে হবে সেটাও!