পাঁচ সেটের মহাকাব্যেও পারলেন না নাদাল

কোনো উদযাপন হলো না, কোনো আগ্রাসী হুংকার এলো না। এক মুহূর্তের জন্য যেন শুন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন সামনের দিকে, বিস্ময়ের আতিশায্যেই বোধ হয় হয়ে গেলেন স্থবির। জিলস মুলার বোধ হয় তখনও বিশ্বাস করতে পারেননি, রাফায়েল নাদালকে হারিয়ে দিয়েছেন। তাও আবার ৪ ঘণ্টা ৪৭ মিনিটের মহাকাব্যিক এক পাঁচ সেটের লড়াইয়ের পর। কোয়ার্টার ফাইনালে আর ওঠা হলো না নাদালের, ১৬তম বাছাই লুক্সেমবার্গের মুলার বোধ হয় ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচটাই খেলে ফেললেন।
অথচ এই ম্যাচের চিত্রনাট্য তো এমন হওয়ার কথা ছিল না। প্রথম দুই সেট জিততে খুব কষ্ট করতে হয়নি মুলারকে, ৬-৩, ৬-৪ গেমে জেতার পর জয়টা তখন দেখতে পাচ্ছিলেন দৃষ্টিসীমায়। বিগ সার্ভের কাছে নাদাল তখন অসহায়, একদমই ছন্দটা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কিন্তু পাশার দান উল্টে গেল পরের দুই সেটে গিয়ে। নাদাল ফিরে গেলেন ধার, এবার দুই সেটে পাত্তা পেলেন না মুলার। ম্যাচে তখন সমতা, সেটের হিসেবেও আক্ষরিক অর্থেই, মুলারের মতো নাদালও জিতলেন ঠিক ৬-৩, ৬-৪ গেমেই।
কিন্তু কে জানত, আসল নাটক তখনও শুরুই হয়নি। পঞ্চম সেটে দুজনের লড়াই চলল সেয়ানে সেয়ানে, কেউ কারও সার্ভ ব্রেক করতে পারলেন না। তবে জয়ের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন মুলারই, ৫-৪ গেমে এগিয়ে থাকার সময় পেয়েছিলেন দুবার ম্যাচ পয়েন্টও। কিন্তু দুবারই নাদাল ঠেকিয়ে দিয়েছেন, মুঠো ছুঁড়ে উদযাপনে জানিয়ে দিয়েছেন বিনা যুদ্ধে নাহি দেবেন সূচাগ্র মেদিনী। কিন্তু কে জানত, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের মতোই এই দ্বৈরথের বাকি আরও অনেক রং।
উইম্বলডনের নিয়মে পঞ্চম সেটে টাইব্রেকার নেই। শেষ পর্যন্ত যে দুই সেটে এগিয়ে যাবে, ম্যাচটা হবে তারই। এই নিয়মের জন্যই ইসনার-মাহুতের ১১ ঘন্টার অবিশ্বাস্য এক ম্যাচের সাক্ষী হয়েছিল সেন্টার কোর্ট। অতটা না হক, এই ম্যাচও কম যায়নি। একটা সময় তো মনে হচ্ছিল, কেউ কাউকে আর ব্রেকই করতে পারবে না। এর মধ্যে মুলার চলে গেলেন কাছাকাছি, আরও দুবার ব্রেক করার সুযোগ পেয়ে গেলেন। কিন্তু দুবারই ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচালেন নাদাল, তখন মনে হচ্ছিল শেষ হাসি হাসবেন ১৫ গ্র্যান্ড স্লামের চ্যাম্পিয়নই।
কিন্তু নাদালের মনের জোর যেন ফুরিয়ে আসছিল একটু একটু করে। আর মুলার মাথা ঠান্ডা রেখে অপেক্ষায় ছিলেন এগিয়ে যাওয়ার। শেষ পর্যন্ত ১৫তম সেটে গিয়ে ব্রেক করতে পেরেছেন। সবশুদ্ধ ম্যাচে মুলার একাই এইস মেরেছেন ৩০টি, নাদালও ২৩টি মেরে কম যান না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কম ভুলার ফলটাই পেলেন মুলার। ৩৪ বছর বয়সে এসে খেললেন সম্ভবত নিজের সেরা খেলা।