'বউ ভাল, বাচ্চারা সব গাধা'
অ্যাশেজ। শুধু যেন দুই দলের মাঠের লড়াই নয়, মাঠের বাইরেও চলে আরেক লড়াই। সে লড়াই কথার। ২৩ নভেম্বর ব্রিসবেনে প্রথম টেস্ট দিয়ে শুরু হবে এবারের অ্যাশেজ, দুই দলের মাঝে কথা চালাচালি শুরু হয়ে গেছে এরই মাঝে।
কথা চলবে মাঠেও। অ্যাশেজেই তো স্লেজিং পায় ভিন্ন এক মাত্রা। যে স্লেজিংয়ের কিছু কিছু ঢুকে যায় ইতিহাসে। অ্যাশেজ স্লেজিংয়ের তেমনই কিছু খন্ডচিত্র….
জার্ডাইন যখন গণশত্রু
বডিলাইন সিরিজে যেন অস্ট্রেলিয়ার গণশত্রুতে পরিণত হয়েছিলেন ডগলাস জারডাইন। সে সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক ছিলেন বিল উডফুল।
জার্ডাইন উডফুলের কাছে একবার অভিযোগ দিলেন, অজি ফিল্ডাররা তাকে গালমন্দ করছেন। উডফুল বলে উঠলেন, ‘বেজন্মার দল, তোমাদের মধ্যে কোন বেজন্মা এই বেজন্মাকে বেজন্মা বলেছে?’ বেজন্মা কোন ইংরেজি শব্দের অনুবাদ, সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন!
এবার জার্ডাইনেরই সতীর্থ, প্যাটসি হেনড্রেন তাকে মনে করিয়ে দিলেন, অস্ট্রেলিয়ান সমর্থকরা তাকে একদমই পছন্দ করে না। অধিনায়ক জবাব দিলেন, ‘দুই পক্ষের অনুভূতিই একই, একদম!’
ডগলাস জার্ডাইন ফিল্ডিং করছেন বাউন্ডারি লাইনে। কিছু মাছি বনবন করছিল, জার্ডাইন বেশ ক্ষীপ্র হয়ে সেগুলো তাড়াচ্ছিলেন। এর মাঝেই ভেসে এলো ইয়াব্বার আওয়াজ। ইয়াব্বার একটু পরিচয় দিতে হয়।সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের নিয়মিত মুখ ছিলেন তিনি। যিনি অল্প কথায় বিখ্যাত ছিলেন প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের 'উত্যক্ত' করায়।
ইয়াব্বা : ‘আমাদের মাছিগুলোকে ছেড়ে দাও, জার্ডাইন। এখানে তোমার বন্ধু বলতে শুধু তারাই আছে কিন্তু!’
ইয়াব্বাকে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষরা মনে রেখেছেন কিনা, সেটা জানা যায়নি। তবে তিনি এখনও এসসিজিতে আছেন, গ্যালারিতে মূর্তি হয়ে!
'কোন বেজন্মা রে?'
শেন ‘কথক’ ওয়ার্ন
শেন ওয়ার্ন ও মাইকেল ক্লার্ক আমেরিকান পাই দেখার পর সিদ্ধান্ত নিলেন, পুরো অ্যাশেজেই ইয়ান বেলকে একটা চরিত্র ধরে খেপিয়ে তুলবেন। শারমান নামে এক চরিত্র আছে, যিনি নিজেকে মেয়েদের কাছে খুব আকর্ষণীয় মনে করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন বারবার। তিনি আবার টারমিনেটর সিরিজের ভক্ত। দুইয়ে মিলে তার নাম হয়ে গিয়েছিল শারমিনেটর। ওয়ার্ন আর ক্লার্ক মিলে বেলকে সেই শারমিনেটর বলা শুরু করলেন।
ওয়ার্ন : তোমাকে শারমিনেটর বলা হোক, এটা নিশ্চয়ই তোমার পছন্দ না?
বেল : এর চেয়ে বাজে কিছু বলা হয়েছে আমাকে।
আহা বেল, কিছুটা আবেগিই হয়ে পড়েছিলেন বোধহয়!
ওয়ার্নের পরের শিকার কলিংউড। ২০০৫ সালে অ্যাশেজজয়ী ইংল্যান্ড দলের প্রত্যেকেই সম্মানসূচক এমবিই (মোস্ট এক্সিলেন্স অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার) পেয়েছিলেন। সে দলে ছিলেন পল কলিংউডও। গোটা অ্যাশেজে যার অবদান বলতে ছিল ওভালে শেষ টেস্টে ১৭ রান। শেন ওয়ার্ন খোঁজ খবর রেখেছিলেন সবকিছুরই। পরের অ্যাশেজে যখন সুযোগ পেলেন, কলিংউডকে বলে উঠলেন, ‘তুমি তো এমবিই পেয়েছো, তাই না? ওভালে ১৭ রান করার জন্য এমবিই? ওহ, কী বিব্রতকর অবস্থা বলো দেখি!’
কথা দিয়ে শিকার নাহয় বাদ, বল হাতে ওয়ার্ন তো শিকার করতেন নিয়মিতই। তারই এক শিকার পরে পড়লেন সতীর্থের কথার কবলে। ‘বল অব দ্য সেঞ্চুরি’র শিকার হয়ে গেছেন মাইক গ্যাটিং, শেন ওয়ার্নের মতো তিনিও ঢুকে গেছেন ইতিহাসে। গ্রাহাম গুচ হালকা সুরেই বললেন, ‘বল না হয়ে যদি চিজ রোল হতো, সেটা গ্যাটিংকে কোনোমতেই ফাঁকি দিয়ে যেতে পারতো না।’
'হ্যালো, শারমিনেটর!'
সেরা কে?
২০০১ সালের অ্যাশেজে অভিষেকে হয়েছিল জিমি অরমন্ডের। মার্ক ওয়াহ যেন মানতে পারছিলেন না, অরমন্ডের মতো কেউ একজন ইংল্যান্ডের হয়ে খেলছেন।
ওয়াহ : ‘ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার জন্য কোনোভাবেই তুমি যোগ্য না।’
অরমন্ড : ‘হতে পারে, তবে নিদেনপক্ষে আমি আমার পরিবারের সেরা ক্রিকেটার।’
‘কচুটা’ পারে কে?
মার্ভ হিউজের মুখ চলতো খুব। খুব বেশিই খুব। তবে রবিন স্মিথের কাছেই যেন একটু নড়বড়ে হয়ে যেতেন তিনি।
হিউজ : ‘তুমি ব্যাটিংয়ে কচুটাও করতে পারো না।’
স্মিথ হিউজকে চার মারলেন।
স্মিথঃ ‘এই মার্ভ, আমরা তো দারুণ যুগল! আমি ব্যাটিং পারি না, আর তুমি পারো না বোলিং।’
চার বছর পর।
হিউজ : ‘চার বছর হয়ে গেল আমি তোমাকে শেষ বল করেছি। তোমার একটুও উন্নতি হয়নি।’
স্মিথ হিউজকে চার মারলেন।
স্মিথ : তোমারও তো উন্নতি হয়নি দেখছি।
হাসপাতালে ‘নিমন্ত্রণ’
ক্রেইগ ম্যাকডারমট বোল্ড হলেন ফিল টাফনেলের বলে।
ম্যাকডারমট : ‘খুব তাড়াতাড়ি এখানেই তোমাকে ব্যাট করতে হবে, টাফারস। হাসপাতালের খাবার মুখে রোচে তো?’
‘বউ-বাচ্চার কী খবর?’
বলতে বলতে একটু বেশিই বলে ফেলেছিলেন রড মার্শ। তাতে অবশ্য ভড়কে গেলেন না ইয়ান বোথাম। জবাবে যেটা বললেন, তা শুনে ভড়কে গিয়েছিলেন হয়তো 'সিনিয়র' মার্শ নিজেই।
মার্শ : ‘তোমার বউ আর আমার বাচ্চারা কেমন আছে বলো তো?’
বোথাম : ‘বউ তো ভালই আছে, কিন্তু বাচ্চারা একেবারেই আস্ত গাধা একেকটা!’
যস্মিন দেশে…
হিলি : ‘তুমি আস্ত একটা বাটপার!’
আথারটন : ‘যস্মিন দেশে যদাচার, জানোই তো!’
'নাকের নিচে দাঁড়াও'
স্টিভ ওয়াহ ফিল্ডারদেরকে নাসের হুসেইনের ঠিক নাকের নিচে আসতে বললেন, আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে।
উইকেটের পেছন থেকে ইয়ান হিলি বললেন, ‘সেটা তো মাইল তিনেকের মাঝে যে কোনো জায়গায় হতে পারে!’ হুসেইনের নাক আর কৌতুক, যেন দুজন দুজনার!
পরের ঘটনায় অবশ্য নাক নেই। আছে ব্যাট। আর 'নোংরা'। আর একজন গ্লেন ম্যাকগ্রা।
ম্যাকগ্রা : ‘আথারস, তোমার ব্যাটের প্রান্ত থেকে নোংরাটুকু যদি সরিয়ে ফেলতে পারো। উপকার হয়।’
(আথারটন ব্যাটের নিচে তাকালেন)
ম্যাকগ্রা : ‘নাহ বন্ধু, অন্য প্রান্তের কথা বলছিলাম!’
'জঘন্য'
ইংলিশদের নাহয় একজন ইয়াব্বা নেই, কিন্তু জানাশোনা মানুষের তো অভাব নেই। তাদেরই একজন পেয়ে বসলেন হেইডেনকে। ম্যাথু হেইডেন ব্যাটিং করতেন না শুধু, রান্নাও করতেন টুকটাক। এক ইংলিশ সমর্থক হেইডেনকে বললেন, ‘শুধু তুমি না হেইডেন, তোমার মুরগী রান্নাও জঘন্য!’
'টাফ' টাফনেল
টাফলেনঃ ‘অন্ধ নাকি তুমি?’
আম্পায়ারঃ ‘মাফ করো, কী বললে?’
টাফনেলঃ ‘তুমি শালা বধিরও নাকি?’
একজন অজি সমর্থক আবার ফিল টাফনেলকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘ওই টাফনেল। তোমার মগজের ঘিলু ধার পেতে পারি? আমি একটা গাধা বানাচ্ছি তো!’
আর টাফারসকে নিয়ে ইয়ান চ্যাপেল ধারাভাষ্যে বলেছিলেন, ‘টাফনেলের বোলিংয়ের সময় ইংল্যান্ড তার বোলিং ছাড়াও আরেকটা সুবিধা পায়। সে বোলিং করছে মানেই হলো, সে ফিল্ডিং করছে না।’
তার ফিল্ডিং সম্বন্ধে কিছু ধারণা করতে পারছেন কি?
'ইটজ ওকে'।
এবং কিছু বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা
লিলি : ‘গ্যাট, সরে দাঁড়াও না। আমি তো স্টাম্পই দেখি না!’
মাইক গ্যাটিং যে একটু ‘স্বাস্থ্যবান’ ছিলেন, সেটাও মনে করিয়ে দিতে হবে?
আর্নি জোনসের ভয়ঙ্কর বাউন্সারটা ডব্লিউজি গ্রেসের দাড়ি ছুঁয়ে গেল।
জোনস : ‘ওহ ডক্টর, দুঃখিত আমি। হাত ফসকে গেছে, বুঝলে!’
ব্যাটসম্যান :‘প্রথম বল হিসেবে খুবই ভাল ছিল এটা, ফ্রেড’।
ট্রুম্যানঃ ‘হুম। তোমার ওপর এটা খরচ করে অপচয় করে ফেললাম।’
মাইকেল ভন ব্যাটিংয়ে। এগিয়ে বেশ একটা অভ্যর্থনা দিলেন পন্টিং।
ভন : স্লিপেই ফিরে যাও, পন্টিং। নিজেকে কী ভাবো, স্টিভ ওয়াহ?
(ফক্সস্পোর্টস ও ইএসপিএনক্রিকইনফো অবলম্বনে)