জিতিয়েই ক্যাচ মিসের 'প্রায়শ্চিত্ত' করলেন মাহমুদউল্লাহ
চিটাগং ভাইকিংস ২০ ওভারে ১৬০/ ৫ (এনামুল ৬২, সৌম্য ৩২; জায়েদ ৩/২৬)
খুলনা টাইটানস ১৮.২ ওভারে ১৬৪/৫ (রুশো ৪৯, মাহমুদউল্লাহ ৪৮*, আরিফুল ৩৪; আল আমিন ১/১৪)
ফলঃ খুলনা ৫ উইকেটে জয়ী
টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ মিস হয়েছে কতটি? রেকর্ডবুকে উত্তর পাওয়া গেল না, তবে খুলনা টাইটানস আজ এক ইনিংসেই ক্যাচ ফেলেছে ছয়টি। কিন্তু এত সুযোগ পেয়েও শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম করল ১৬০, সেই রান তাড়া করতে খুব একটা কষ্ট হলো না খুলনার। রুশো ও মাহমুদউল্লাহর ইনিংসে তা টপকে গেল ১০ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখেই। চারটি ক্যাচ ছেড়ে দেওয়ার ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করেছেন মাহমুদউল্লাহ, দলকে জিতিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। ছয় ম্যাচে খুলনার এটি তৃতীয় জয়, আর চট্টগ্রাম ছয় ম্যাচের হারল চারটিতেই।
খুলনা ১৬০ তাড়া করে হোঁচট খেয়েছিল শুরুতেই, ১৫ রানেই ফিরে যান এখন পর্যন্ত তেমন কিছু করতে না পারা মাইকেল ক্লিঙ্গার। তবে শুরুর ওভার থেকে রাইলি রুশোর যে ঝড় শুরু হয়েছিল, সেটাই খুলনাকে এগিয়ে দেয় বেশ কিছুটা। প্রথম ছয় ওভারেই ৫৮ রান তুলে ফেলে খুলনা, ক্লিঙ্গারের পর শুধু হারাতে হয় ধীমান ঘোষের উইকেট।
তবে রুশো যখন ম্যাচটা প্রায় বের করে নিচ্ছিলেন, তখনই চট্টগ্রামের আঘাত। আল আমিনের আর্মার বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়ে গেছেন রুশো। ২৫ বলে ৪৯ রান করে মাত্র এক রানের জন্য ফিফটি পাননি। এরপর ৭৯ রানে যখন নাজমুল হোসেন শান্তও আউট হয়ে যান, তখন একটু বিপদেই পড়ে যায় খুলনা।
তবে রান রেট তখনো তাদের পক্ষে ছিল। মাহমুদউল্লাহ ও আরিফুল হক তাই ধৈর্য ধরে শুধু উইকেটে থেকে গেছেন। শেষ পর্যন্ত যখন ৫ ওভারে দরকার ৪৪ রান, তখনই তানভীর হায়দারকে এক ওভারে দুই ছয়ে সমীকরণটা সহজ করে ফেললেন আরিফুল। ২৪ বলে ৩৪ রান করে যখন আউট হয়েছেন, জয় থেকে মাত্র ১১ রান দূরে খুলনা। এর মধ্যে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জুটি হয়ে গেছে ৭০ রান। এরপর ছয়-চারে তুলিতে শেষ টান দিয়েছেন কার্লোস ব্রাথওয়েট। অন্য প্রান্তে ৩৫ বলে ৪৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
তার আগে ম্যাচের শুরুতেই ছিল চমক, দল থেকে বাদ পড়েছেন অধিনায়ক মিসবাহ উল হক। ইনিংসের প্রথম বলেই আউট হতে পারতেন নতুন অধিনায়ক লুক রঙ্কি, ডিপ মিডউইকেটে কঠিন ক্যাচটি নিতে পারেননি রাইলি রুশো। সেটির জন্য মাশুল বেশিক্ষণ দিতে হয়নি, রঙ্কি আউট হয়ে গেছেন ওই ওভারের শেষ বলেই।
এরপর সৌম্য সরকারকে নিয়ে চট্টগ্রামকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এনামুল হক বিজয়। শুরুতে একটু নড়বড়ে থাকলেও থিতু হওয়ার পর খেলেছেন দারুণ কিছু শট। শফিউল ইসলামকে মেরেছেন দুইটি ছয়, পরে কার্লোস ব্রাথওয়েটের বলেও মেরেছেন একটি।
তবে দশম ওভারেই আউট হতে পারতেন সৌম্য, কিন্তু সহজ ক্যাচটা ফেলে দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। এক ওভার পরেই সৌম্য প্রসন্নর এক ওভারেই পেয়েছেন দুই জীবন। আরিফুল হকের ক্যাচটা অবশ্য বেশ কঠিনই ছিল, হাফ চান্সই বলা উচিত, কিন্তু মাহমুদউল্লাহ আরও একবার ক্যাচ প্র্যাকটিসের মতো সহজ সুযোগটাও নিতে পারেননি, ফেলে দিয়েছেন সৌম্যকে। ভাগ্যিস সেটার জন্য খুব বেশি মাশুল দিতে হয়নি, পরের ওভারেই আউট হয়ে গেছেন সৌম্য।
তবে বিজয় খেলছিলেন দারুণ, ফিফটিও পেয়ে গেছেন আগেই। এক বছর আগে টি-টোয়েন্টিতে নিজের সর্বশেষ ফিফটি পেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ৬২ রান করে আবু জায়েদের বলে আউট হয়ে গেছেন। ১৫তম ওভারেই সিকান্দার রাজাও ক্যাচ দিলে একটু বিপদে পড়ে যায় চট্টগ্রাম।
তবে নাজিবুল্লাহ জাদরান ও স্টিয়ান ফন জিল এরপর আবার শুরু করেছেন পালটা আক্রমণ। অথচ ১৮তম ওভারেই আউট হতে পারতেন দুজন, দুর্ভাগা বোলার এবারও জায়েদ রাহী। প্রথমে ক্লিঙ্গার ছেড়েছেন জাদরানের ক্যাচ, পরে আবারও মাহমুদউল্লাহ ফন জিলের। পরের ১৩ বলে আরও ২৯ রান নিয়েছে চট্টগ্রাম, জাদরান ও ফন জিল ঝড় চালিয়েছেন ভালোই। ১৬ বলে ২৪ রান করে আউট হয়েছেন জাদরান, ১৫ বলে ২৩ রান করে অপরাজিত ফন জিল। তাতেই চট্টগ্রাম পেয়েছে ১৬০ রানের লড়াই করার পুঁজি। কিন্তু কে জানত, দিন শেষে সেটি লড়াই করার জন্য যথেষ্ট হবে না।