তিন নাম্বার ডাবলে মোহালি রাঙালেন রোহিত
দ্বিতীয় ওয়ানডে, মোহালি
ভারত ৩৯২/৪, ৫০ ওভার (রোহিত ২০৮*, আইয়ার ৮৮, পেরেরা ৩/৮০)
শ্রীলঙ্কা ২৫০/৮, ৫০ ওভার (ম্যাথিউস ১১১*, গুণারত্নে ৩৪, চাহাল ৩/৬০, বুমরাহ ২/৪৩)
ফল : ভারত ১৪১ রানে জয়ী
ওয়ানডের ডাবল সেঞ্চুরির ব্যাপারটা হয়ে যাচ্ছে ১০০ মিটার স্প্রিন্টের মতো। ১০ সেকেন্ডের নিচে দৌড় শেষ করার বাঁধটা একবার যখন ভাঙলো, এরপর সেটা হতে লাগলো নিয়মিতই, উসাইন বোল্ট তো সেটাকে নামিয়ে এনেছেন ৯.৬ সেকেন্ডেরও নিচে! ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে শচীন টেন্ডুলকার প্রথমবার ২০০ করলেন, সেবার বোধহয় সবচেয়ে খুশী হয়েছিলেন রোহিত শর্মা। বাঁধটা যে ভেঙে গেল! এরপর ওয়ানডে ক্রিকেটে সাতটি ডাবল সেঞ্চুরি হয়েছে, এর মাঝে তিনটিই রোহিতের! সর্বশেষটি তিনি করেছেন আজ, মোহালিতে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। অপরাজিত ছিলেন ২০৮ রানে, আর ১০ শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান মিলে করেছেন ২৫০ রান। প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া ভারত দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হিসাব বুঝিয়ে দিয়েছে কড়ায়-গন্ডায়।
ইনিংসের প্রথমভাগে রোহিত ছিলেন ধীর-স্থির। ১০০ করতে লেগেছে ১১৫ বল। এরপরই যেন জেগে উঠলো ভেতরের দানবটা। বিরাট কোহলি বিশ্রামে বলে তিনিই অধিনায়ক, এরপর যা করলেন, তাতে শুধু দল না, শ্রীলঙ্কানরা ছাড়া খুশী হবেন আরও অনেকেই! ‘দ্বিতীয়’ সেঞ্চুরি করতে রোহিতের লাগলো ৩৬ বল। মোহালির লম্বা বাউন্ডারিতে শ্রীলঙ্কানরা শর্ট বলের অস্ত্র বেছেছিলেন। সেটা কাজ করেনি। আগের ম্যাচে আগুন ঝড়ানো সুরাঙ্গা লাকমাল ও নুয়ান প্রদীপ ওয়াইড ইয়র্কারের পথে গেলেন। বিফলে গেল সেটাও। সোজা ইয়র্কার তো ডাল-ভাত। লো ফুলটস দিলে রোহিত সেগুলোকে মিড-উইকেট আর স্কয়ার লেগ দিয়ে পাঠিয়েছেন দর্শকদের কাছে। তিন বছর আগে কলকাতায় এই শ্রীলঙ্কার সঙ্গেই রোহিত খেলেছিলেন ২৬৪ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংস। শ্রীলঙ্কানরা সেটা ভুলে গিয়ে থাকলে আজ আবার যাতে মনে পড়ে, সে ব্যবস্থা করেছেন রোহিত নিজেই।
শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে ওপেনিং জুটিও আজ জমেছিল বেশ, তার ৬৭ বলে ৬৯ রানের স্ট্রোকময় ইনিংস শেষ হয়েছে শচিথ পাথিরানার স্পিনে। সোজা ব্যাটের বদলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে মিড-উইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন ধাওয়ান। এরপর শ্রেয়াস আইয়ারের সঙ্গে ২১৩ রানের জুটি রোহিতের। শ্রেয়াসের অভিষেকটা হয়েছিল ভুলে যাওয়ার মতো, এ ম্যাচে সে আক্ষেপটা ঘুচিয়েছেন। তবে আক্ষেপ থাকলে সেটা আছে সেঞ্চুরি থেকে ১২ রান দূরে থেকে থিসারা পেরেরার বলে মিড-উইকেটে ক্যাচ দেওয়া নিয়েই। এমএস ধোনি আর হারদিক পান্ডিয়া এরপর পালা করে ছিলেন রোহিতের ব্যাটিংয়ের দর্শক। শেষ ওভারে ডাবল সেঞ্চুরি করতে দরকার ছিল ৯ রান, প্রথম বলেই ছয় মেরে সেটাকে হাতছোঁয়া দূরত্বে এনেছিলেন রোহিত। তৃতীয় বলে ডাবলস নিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন আরেক উচ্চতায়। ১৩ চারের সঙ্গে মেরেছেন ১২ ছয়, স্বাভাবিকভাবেই ঝড় বয়ে গেছে লঙ্কান বোলারদের ওপর দিয়ে। ১০ ওভারে ১০৬ রান দিয়ে ওয়ানডেতে সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ে মিক লুইসের ১১৩ রানের রেকর্ডটা হুমকির মুখে ফেলেছিলেন প্রদীপ।
ব্যাটিংয়ে নেমে অবশ্য হুমকি-ধামকি তেমন একটা দিতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। এক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ছাড়া। ভুবনেশ্বর কুমার, জাসপ্রিত বুমরাহ বা হারদিক পান্ডিয়ার পেস ভুগিয়েছে তাদের। দুই স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর ও যুঝভেন্দ্র চাহালকে একটু মেরে-পিটে খেলেছিলেন, তবে তিন পেসারের সমান চার উইকেট নিয়েছেন এই দুই স্পিনারও। লাহিরু থিরিমান্নে, নিরোশান ডিকভেলা বা আসেলা গুনারত্নেরা চেষ্টা করেছিলেন ম্যাথিউসকে সঙ্গ দিতে, তবে পারেননি খুব একটা। শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন ম্যাথিউসই, পেয়েছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি, অপরাজিত ছিলেন ১১১ রানে।
তবে তিনি ম্লান হয়ে গেছেন রোহিতের কাছে। আজ বিবাহবার্ষিকী ছিল ভারত অধিনায়কের, ডাবল সেঞ্চুরির পর গ্যালারিতে আবেগাপ্লুত স্ত্রীর মুখটাই বলে দিচ্ছিল, অন্যতম সেরা এক উপহারই তাকে দিয়েছেন রোহিত!