• " />

     

    ফুটবলের কালোচিতা

    ফুটবলের কালোচিতা    


    ইউসেবিও (জানুয়ারি ২৫, ১৯৪২- জানুয়ারি ৫, ২০১৪)


    ১৯৬০ সালের অলস একটা দুপুর। পর্তুগালের লিসবনের একটা নাপিতের দোকানে আড্ডা মারছিলেন সাও পাওলো ফেরত এক কোচ। কথাচ্ছলে বন্ধুকে বললেন, “কদিন আগে মোজাম্বিকে গিয়েছিলাম। সেখানে এক রত্নকে দেখে এসেছি। বুঝলে একেবারে কাঁচা সোনা”। 
    সেই বন্ধুটি ছিল বেনফিকার কিংবদন্তি কোচ বেলা গুটম্যান। কথা শোনার সময় চকচক করে উঠছিল গুটম্যানের চোখ। পরের সপ্তাহে প্রথম ফ্লাইটেই উড়ে গেলেন আফ্রিকার মোজাম্বিকে। একা নয় , ফিরলেন ১৮ বছর বয়সী এক বিস্ময়কে সঙ্গে নিয়ে। 

    তাঁর নাম ইউসেবিও দা সিলভা ফেরেইরা। 

    ইউসেবিওকে আনার পাঁচ মাস পর্যন্ত বেনফিকা তাকে লুকিয়ে রাখল। কেন জানেন? আইনি জটিলতার ভয়ে। শেষ পর্যন্ত অনেক দেনদরবার করে হ্যাপাটা তারা চুকাতে পারে। ১৯৬১ সালে বেনফিকার জার্সি গায়ে অভিষেক হয় ইউসেবিওর। অভিষেকেই করেন হ্যাটট্রিক। 

    এক সপ্তাহ পরেই বেনফিকা মুখোমুখি পেলের সান্তোসের। ইউসেবিও ছিলেন বেঞ্চে। দেখছিলেন কীভাবে একে একে সান্তোসের কাছে চার গোল হজম করল দল। এরপর গুটম্যান নামালেন তুরুপের তাসকে। ইউসেবিও নামলেন। করে ফেললেন হ্যাটট্রিক। যেন রূপকথার পাতা থেকে কোনো এক অতিমানব নেমে এসেছিল পৃথিবীতে। 

    অর্জনের কথা বললে শেষ করা যাবে না। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সেই ম্যাচ তো ফুটবল পুরাণেরই অংশ হয়ে গেছে। ২৫ মিনিটের মধ্যেই তিন গোলে পিছিয়ে পর্তুগাল। এরপর ইউসেবিওর খেলা শুরু। নিজে চার গোল করে দলকে জেতালেন ৫-৩ গোলে। ৯ গোল করে সেবার বিশ্বকাপে ছিলেন সর্বোচ্চ গোলদাতা। বিশ্বকাপ জিততে পারেননি, কিন্তু জিতেছিলেন অগুণিত ভক্তের হৃদয়।

    বলা হয় সময়ের চাইতে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন তিনি । ক্ষিপ্র, দারুণ অ্যাথলেটিক ইউসেবিও সেই যুগে ১১ সেকেন্ডের কমে দৌড় শেষ করেছিলেন।তাও আবার ১৬ বছর বয়সে। ডাকনামই ছিল তার “ব্ল্যাক প্যান্থার"। ২১ শতকের আদর্শ স্ট্রাইকারের সব গুণই ছিল তার মধ্যে। এমনি এমনি তো পেলে, ম্যারাডোনাদের সঙ্গে এক ব্র্যাকেটে তার নাম নেওয়া হয় না!