• ত্রিদেশীয় সিরিজ
  • " />

     

    থিসারা হতাশ করলেন জিম্বাবুয়েকে

    থিসারা হতাশ করলেন জিম্বাবুয়েকে    

    জিম্বাবুয়ে ১৯৮, ৩৬ ওভার (টেইলর ৫৮, ক্রেমার ৩৪, পেরেরা ৪/৩৩, প্রদীপ ৩/২৮) 
    শ্রীলঙ্কা ২০২/৫, ৪৪.৫ ওভার (কুশাল ৪৯, চান্ডিমাল ৩৮*, থিসারা ৩৯*, মুজারাবানি ৩/৫২, জারভিস ১/৪০) 
    শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেটে জয়ী 


    জিম্বাবুয়ের যদি একটু আশাও থেকে থাকে, সেটা মিলিয়ে দিয়েছেন থিসারা পেরেরা। প্রথমে বোলিং, পরে ব্যাটিংয়ে জিম্বাবুয়েকে হতাশ করে শ্রীলঙ্কার ফাইনাল খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখায় বড় অবদান তারই। শ্রীলঙ্কাকে আশা জোগানোর দিনে একরাশ হতাশা দিয়েছেন জিম্বাবুয়েকে। 

    ১৯৯ রানের লক্ষ্যে শ্রীলঙ্কার ধীরগতির শুরুটা যদি ব্যাটসম্যানদের থিতু হওয়ার জন্য হয়, তবে ব্যর্থ উপুল থারাঙ্গা। কাইল জারভিসের স্টাম্পসোজা বল ও টেনডাই চাতারার এদিক ওদিক সুইংয়ে ভুগেছেন ভালই। চাতারার ভেতরের দিকে ঢোকা বলেই কাট করতে গিয়ে স্টাম্পে ডেকে আনলেন বল, কাট করার মতো জায়গাটাই ছিল না। 
    ধীরতালের সঙ্গীত ছিল দুই কুশাল- মেন্ডিস ও পেরেরা। পেরেরা ভুগলেন অবশ্য টান পেয়ে, ফিজিও বারকয়েক এসেও ফিফটিটা হলো না। ৪৯ রানে মুজারাবানির বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা দিয়ে ক্যাচ দিলেন বদলি কিপার রায়ান মারেকে। 

    মেন্ডিসও তাকে অনুসরণ করলেন তাড়াতাড়িই। আগের বলেই ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে বেঁচেছেন নিরোশান ডিকভেলা, পরের বলেই বোল্ড মেন্ডিস। মুজারাবানিকে উল্লাসের উপলক্ষ্য এনে দিলেন নিজের লেগস্টাম্পের খোঁজ হারিয়ে। আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে লেগস্টাম্পে বোল্ড, ফর্মে নেই তিনি আসলেই। ডিকভেলাও মুজারাবানিকে উল্লাসে মাতালেন, মেন্ডিসের চেয়ে আরও বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে।
    বাইরের বলের ভূত শ্রীলঙ্কাকে ছাড়লোই না। এবার বোলার জারভিস, তাড়া করতে গেলেন আসেলা গুণারত্নে, মারে এবার নিলেন অসাধারণ ক্যাচ- ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২১ বলে ৯ রানের ফিগারটা শুধু তার উইকেটে টিকে থাকার প্রাণান্ত চেষ্টায় প্রমাণ করে গেল। এর আগেই ৫১ বলের বাউন্ডারি খরা গেছে শ্রীলঙ্কার, চান্ডিমাল যে চারটা মারলেন- সেটাও এরভিনের মিসফিল্ডে। ব্যাটিংয়ের মতো ফিল্ডিংয়েও দিনটা ভুলে যাওয়ার মতো ছিল তার। 

    ৪৪ রান দূরে থেকে নেমেছিলেন থিসারা। আরেক প্রান্তে চান্ডিমালের ইনিংসের পুরো উল্টো চিত্র তার ব্যাটিংয়ে। আগের দুই ম্যাচের একটিতেও শেষ করতে পারেননি, এবার সেটা করলেন। চান্ডিমাল যখন ৭১ বলে ৩৯ রানে অপরাজিত, পেরেরার রান তখন ২৬ বলে ৩৯! পেরেরা সাবলিল ব্যাটিং করেছেন, এর আগে বোলিংয়ের মতোই। 

    প্রথম ব্রেকথ্রুর জন্য শ্রীলঙ্কা অপেক্ষা করেছে ১০ম ওভার পর্যন্ত। একটা উইকেট আরেকটা ডেকে আনে, থিসারা পেরেরা আনলেন তিনটা। পরপর তিন ওভারে। প্রথমে পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে থারাঙ্গাকে ক্যাচ দিলেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, এরপর ওয়াইড স্লিপে একই ফিল্ডারকে ক্যাচ দিয়ে নিজের ফর্মের দুরাবস্থা প্রকাশ করলেন ক্রেইগ এরভিন। সলোমন মিরে হলেন পেরেরার বাউন্সারের প্রথম শিকার, টাইমিংয়ের কিছুই হলো না, পেছনে ক্যাচ নিলেন নিরোশান ডিকভেলা। ৪৪ রানে ০ উইকেট থেকে জিম্বাবুয়ে বনে গেল ৫৬ রানে ৩ উইকেটে। 

    শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আগের ম্যাচের নায়ক সিকান্দার রাজা এ ম্যাচে দলে আসা লাকশান সান্দাকানের প্রথম শিকার, তবে এ উইকেটের সবচেয়ে বড় দাবিদার ফিল্ডার কুশাল মেন্ডিস। সুইপিং লেংথেই বল ছিল, রাজা করেছিলেনও সেটা। হুট করেই দুইহাতে সেটা বন্দি করলেন মেন্ডিস।

    ব্রেন্ডন টেইলর ও ম্যালকম ওয়ালারের এরপর ৬৬ রানের জুটি। দুইদিক থেকে দুই রিস্টস্পনারকে দারুণ খেলেছেন, সুইপেও ছিল নিয়ন্ত্রণ। টেইলর তো চেষ্টা করছিলেন রিভার্স সুইপেরও। সেই সুইপই কাল হয়েছে ওয়ালারের, সান্দাকানের নীচু হওয়া বলে হয়েছেন ‘বটম-এজ’। এর আগে রিভিউ নিয়ে বেঁচেছেন একবার, সুরাঙ্গা লাকমালের বলে তার ইনসাইড-এজে এলবিডাব্লিউ দিয়েছিলেন আম্পায়ার ব্রুস অক্সেনফোর্ড। জিম্বাবুয়ের ওয়ানডে দলে প্রত্যাবর্তনের পর প্রথম ফিফটি টেইলর পেয়েছেন আগেই। অবশ্য তার সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝিতে কোনও বল না খেলেই রান-আউট পিটার মুর। 

    টেইলর ফিফটির বেশি কিছু করতে পারেননি, পেরেরার চতুর্থ আর বাউন্সারে দ্বিতীয় শিকার তিনি। প্রচন্ড হতাশায় মাটিতে পড়ে যাওয়া ব্যাটে লাথিও দিলেন, তবে জিম্বাবুয়েকে ততক্ষণে শেষ তিরটা ছুঁড়ছে শ্রীলঙ্কা। 

    শেষ স্পেলে এসে নুয়ান প্রদীপ সেটাই করলেন, টেইল-এন্ডারদের সঙ্গে পেসাররা যেটা করেন! কাইল জারভিসের অফস্টাম্প, গ্রায়েম ক্রেমারের লেগস্টাম্প আর ব্লেসিং মুজারাবানির মিডল স্টাম্প- প্রদীপের বলে উপড়ে গেল। ক্রেমার ছিলেন  জিম্বাবুয়ের ‘শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান’, আট নম্বরে তার ৩৪ রানই জিম্বাবুয়ের ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ব্যাটিংয়ে দিনটা মোটেও ভাল গেল না আজ যে তাদের। 

    টসে জিতে ব্যাটিংয়ে ১৯৮, এরপর ৫ উইকেটে হার। আজ দিনটা জিম্বাবুয়ের নয়। থিসারা পেরেরার।