'বল থাকতে মুখের দরকার কী?'
এমনিতে তিনি কথা বলেন খুব মেপে মেপে, গম্ভীর মুখে হাসিও খুব একটা ফোটে না। তাই বলে তাঁকে বেরসিক মনে করার কোনো কারণ নেই। কলকাতায় পতৌদি লেকচারে পাওয়া গেল অন্য এক কোর্টনি ওয়ালশকে। ফাস্ট বোলারসুলভ সেই আগ্রাসনের ছাপ মিলল তাঁর কথায়ও। বল থাকতে কথার দরকার কী - ওয়ালশের কাছ থেকে এমন কিছু শুনে একটু কি চমকে গেছেন?
খেলোয়াড়ি জীবনেও মাঠে মেজাজ হারানোর ঘটনা খুব বিরল। বরং ৮৭ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সঙ্গে সেই ম্যাচে সেলিম ইউসুফকে রান আউট না করার জন্য গড়েছিলেন খেলোয়াড়ি মানসিকতার এক অন্যরকম দৃষ্টান্ত। দিনশেষে ওয়ালশ অবশ্য একজন পেসার, পতৌদি লেকচারে কথা বলতে গিয়ে নিজের সেই সোনালী সময়ে ফিরে গেলেন বাংলাদেশের বোলিং কোচ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলা মানেই প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের চোট-আঘাতে জর্জরিত হওয়া তখন যেন নিত্য- নৈমত্তিক ঘটনা। “স্যাবাইনা পার্ক, কিংস্টন, জ্যামাইকার চারদিকে রয়েছে প্রায় দশ থেকে পনেরটি হাসপাতাল। সপ্তাহান্তে হাসপাতালগুলো ভর্তি হয়ে যেত আমাদের পাঠানো আহত খেলোয়াড়দের দিয়ে। ভাঙ্গা নাক, ফেটে যাওয়া আঙ্গুল কিংবা রক্তাক্ত মুখ নিয়ে হাসপাতালে সেবা নিতে যেত ওরা। আমরা কঠিনভাবে খেলতাম, স্যাবাইনা পার্কেও আমরা সেভাবেই খেলতাম। এ কারনেই সেখানে এত হাসপাতাল। একবার ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বে আমরা একটি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলাম লিওয়ার্ড দ্বীপে। লাঞ্চের আগেই পাঁচ থেকে ছয়জন খেলোয়াড়কে ভর্তি হতে হয়েছিলে হাসপাতালে।!’ কথার প্রসঙ্গে মজার ছলেই নিজেদের সোনালী সময়ের কথা স্মরণ করলেন কিংবদন্তি এই পেসার।
ক্রিকেটে স্লেজিং সবসময়ই বিতর্কিত। প্রায়শই দেখা যায় মাঠের লড়াই ছাপিয়ে মুখ্য হয়ে ওঠে খেলোয়াড়দের পারস্পরিক বাদানুবাদে জড়ানোর খবর। তবে ওয়ালসের কাছে স্লেজিংয়ের চেয়ে বল হাতে জবাব দেয়াটাই কি গুরুত্বপূর্ণ? কেন আপনাকে অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করে প্রতিপক্ষকে অপমান করতে হবে যখন তাকে বল দিয়েই আঘাত করতে পারবেন!” স্লেজিংয়ে অনাগ্রহী ওয়ালসের সরল স্বীকারোক্তি।
১৯৯৪ সালে ভারত সফরে মনোজ প্রভাকরের নাক ভেঙ্গে গিয়েছিলো ওয়ালসের বাউন্সারে। তবে ব্যাটসম্যানদের আঘাত করা কিংবা তাদের গুরুতর আহত করা, কোনটিই যে ইচ্ছাকৃতভাবে করতেননা, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন ওয়ালশ। “আক্রমণের ব্যপারটি মোটেও ইচ্ছাকৃত ছিলোনা। সেটা ছিল আমাদের কাজেরই অংশ। আমরা শুধু আমাদের কাজটাই ঠিকঠাকমত করতে চাইতাম।''