প্রেমাদাসাতেও বাংলাদেশকে তাড়া করলো টি-টোয়েন্টির 'ভূত'
বাংলাদেশ ১৩৯/৮, ২০ ওভার (লিটন ৩৪, সাব্বির ৩০, উনাডকট ৩/৩৮, শংকর ২/৩২)
ভারত ১৪০/৪, ১৮.৪ ওভার (ধাওয়ান ৫৫, রায়না ২৮, রুবেল ২/২৪, মুস্তাফিজ ১/৩১)
ফল- ভারত ৬ উইকেটে জয়ী
এই ভেন্যুতেই টি-টোয়েন্টিতে শেষবার জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের পর আরও দুইটি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ, হেরেছে সব ম্যাচই। নিদাহাস ট্রফির আগে নতুন শুরুর আশ্বাস দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের পাশে থাকা প্রশ্নবোধক চিহ্নও মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন। ভারতের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে তেমন কিছু করতে পারলেন না তারা। ১৩৯ রানের পুঁজি নিয়ে ধাওয়ানের ফিফটিতে লড়াইয়ের আভাসও দিতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে হারের পর জয়ের ধারায় ফিরেছে ভারত, বাংলাদেশের সঙ্গে জিতেছে ৬ উইকেটে।
১১টি ওয়াইড, সঙ্গে ২টি নো-বল। ৪টি ক্যাচ মিস। ভারতের দেওয়া এতো সুযোগের পরও বাংলাদেশ টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে আটকে গেছে ১৩৯ রানেই। আর প্রেমাদাসার উইকেটে রীতিমতো হাপিত্যেশ করে মরেছেন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা, শট খেলে ফেলেছেন বড্ড তাড়াতাড়ি। লিটন দাস ছিলেন একটু ব্যতিক্রম, তবে বেশ কিছুক্ষণ ক্রিজে থেকেও তার সম্বল ৩৪ রান। আর ২৬ বলে ৩০ রান সাব্বিরের- বাংলাদেশের ইনিংসের আঁধারে আলোর সরু রেখা শুধু এই দুই ইনিংসই। সব মিলিয়ে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা দিয়েছেন ৫৭টি ডট বল।
উনাডকটের বলে ক্যাচ তুলেও বেঁচেছিলেন সৌম্য, তাকে ফাইন লেগ দিয়ে দারুণ টাইমিংয়ে ছয় মারার পর আবার একই শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন। রিভিউ নিয়ে বেঁচেছিলেন তামিম ইকবাল এলবিডাব্লিউ থেকে, সে ওভারে শারদুল ঠাকুরকে পরপর দুই বলে চার মেরে তার শর্ট অব আ লেংথের বলেই পুল করতে গিয়ে দিয়েছেন ক্যাচ।
মুশফিক চাহালকে সুইপ ও রিভার্স সুইপে চারের পর বিজয় শংকরকে মিড-উইকেট দিয়ে ছয় মেরেছিলেন। এরপর বেরিয়ে এসে দূরের বলে জোরের ওপর খেলতে গেলেন, উইকেটের পেছনে দীনেশ কার্তিককে শুধু ক্যাচটাই দিতে পারলেন। ভারত উইকেটটা পেলো রিভিউ নিয়ে, যদিও অভিষিক্ত আম্পায়ার লিন্ডন হ্যানিবাল শেষ মুহুর্তে আউটই দিতে চেয়েছিলেন।
ব্যাটিংয়ে নেমেই বড় শটের চেষ্টা করলেন মাহমুদউল্লাহ, তবে ভুগলেনই শুধু। ৮ বলে ১ রান করা তাকে মুক্তি দিলেন মুশফিকের উইকেট দিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক পাওয়া শংকরই, বাংলাদেশ অধিনায়ক কাভারে দিয়েছেন সোজা ক্যাচ। শংকর আরেকটা উইকেট পেতে পারতেন, সাব্বিরের ক্যাচটা নিজের বলে অনেকদূর দৌড়েও হাতে জমাতে পারেননি।
দুইবার জীবন পেয়েছিলেন লিটন, শুরুতে শর্ট বলে তার সহজ ক্যাচ মিস করেছেন রায়না, পরে ডিপ ফাইন লেগে একটু কঠিনটা ছেড়েছেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ইনফিল্ডকে ছাড়িয়ে চার মেরে থিতু হওয়ার আভাস দিয়েছিলেন, তবে চাহালকে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে ধোঁকা খেয়েছেন ফ্লাইটে। তার ক্যাচ নিয়ে দায়মোচন করেছেন রায়না। উনাডকটের বলে ক্যাচ দিয়েছেন মিরাজ ও সাব্বির, রুবেল রান-আউট। শেষ ৫ ওভারে মাত্র ৩২ রান তুলেছে বাংলাদেশ।
আগের দিন ৪৯ বলে ৯০ রান করেও দলকে জেতাতে পারেননি, আজ ৪৩ বলে ৫৫ রানের ইনিংসেই সেটা করলেন শিখর ধাওয়ান। পাওয়ারপ্লের মাঝেই রোহিত শর্মা ও ঋশাভ পান্টের উইকেট নিয়েও ভারতের ওপর তেমন কোনও চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি বাংলাদেশ।
বেশ সময় নিয়ে খেলেছেন ধাওয়ান, বাংলাদেশী বোলারদের দেওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন দারুণভাবে। স্পিন বা পেস- দুই ধরনের বোলিংয়েই নিয়ন্ত্রণ ছিল দারুণ। টানা দ্বিতীয় ফিফটি করলেন নাজমুল ইসলামের লেগসাইডের বেশ বাইরের বলে চার মেরে, তাসকিনের বলে মিসটাইমিংয়ে ওপরে তুলে লং অনে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয়েছে তার ইনিংস।
এর আগে রোহিত শর্মা মুস্তাফিজকে আলতো করে খেলতে গিয়ে বল ডেকে এনেছিলেন স্টাম্পে, ঋশাভ পান্ট রুবেলকে জোরের ওপর খেলতে গিয়ে মানলেন একই পরিণতি। পরে রায়না কোমরের ওপর থেকে ঘুরিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন রুবেলের বলে।
রায়নার কঠিন ক্যাচ হাত লাগিয়েও এর আগে জমাতে পারেননি মিরাজ, শর্ট স্কয়ার লেগে। সেই মিরাজের বলেই রায়নার বিপক্ষে রিভিউ নিয়েছিল বাংলাদেশ, তবে সেটা ব্যর্থ হয়েছে আম্পায়ারস কলে। ধাওয়ানের বিপক্ষে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন মুশফিক, নাজমুলের বলে। রায়না-ধাওয়ানের জুটির সময় ১৩তম ওভার পর্যন্ত নাজমুলকে আনেননি মাহমুদউল্লাহ, তিনি নিজে বোলিংয়ে আসার আগে এনেছেন সৌম্যকেও।
বাঁহাতি ব্যাটসম্যান থাকলে বাঁহাতি স্পিনার আনা যাবে না- বাংলাদেশেকে এই নিয়মের ভূত ছাড়েনি। যেমন ছাড়লো না টি-টোয়েন্টিতে পরাজয়ের ভূতও!