নিদাহাসে মুশফিকদের ইতিহাস
শ্রীলঙ্কা ২১৪/৬, ২০ ওভার (পেরেরা ৭৪, মেন্ডিস ৫৭, থারাঙ্গা ৩২*, মুস্তাফিজ ৩/৪৮, মাহমুদউল্লাহ ২/১৫)
বাংলাদেশ ২১৫/৫, ১৯.৪ ওভার (মুশফিক ৭২*, তামিম ৪৭, লিটন ৪৩)
ফল- বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী
পৃথিবীর সবচেয়ে আশাবাদি মানুষগুলোর একজন হলে আপনি ১ম ইনিংসের পর আশা করেছিলেন এমন। আর তেমন না হয়ে থাকলে আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছে একরাশ বিস্ময়। সে বিস্ময়ে মিশে থাকার কথা অপার আনন্দ। মুশফিকের ক্ষীপ্র উদযাপনের পর চোখেমুখের ওই স্বস্তির মতো আপনার বুক থেকেও নেমে যাওয়ার কথা কঠিন এক পাথর। কলম্বোর আর প্রেমাদাসায় বাংলাদেশ গড়েছে ইতিহাস। টি-টোয়েন্টিতে ৪র্থ সর্বোচ্চ রানতাড়া করে ৫ ম্যাচের জয়খরা কাটিয়েছে মুশফিকুর রহিমের ৩৫ বলে ৭২ রানের অতিমানবীয় এক ইনিংসে।
যখন নেমেছিলেন মুশফিক, তখনও বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৬৩ বলে ১১৫ রান। রিভার্স সুইপে চার মেরে শুরু করেছিলেন মুশফিক, চামিরাকে চার মেরে করেছেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটি। খোঁড়াচ্ছিলেন ফিফটির আগে থেকেই, শেষে গিয়ে নিজের শরীরের সঙ্গেই লড়াই চলছিল তার। মুশফিক সে লড়াইয়ে জিতলেন কি দারুণভাবেই!
২১৫ রানের লক্ষ্যে শুরুটা দারুণ করেছিলেন তামিম ইকবালের সঙ্গে ওপেনিংয়ে উঠে আসা লিটন দাস। স্পিনে পায়ের ব্যবহার দারুণ করেছেন লিটন, পেসে ফুললেংথের কাছাকাছির বলকে খেলেছেন ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে। নুয়ান প্রদীপকে লেংথ বলে লং-অন দিয়ে ছয় মেরেছেন, খেলেছেন স্কয়ার অব দ্য উইকেটেও। তবে প্রদীপের স্লোয়ারে গড়বড় হয়ে গেছে সব, ৪০ বা এর বেশি স্কোরের ইনিংসে বাংলাদেশের দ্বিতীয় দ্রুততমটি খেলেছেন লিটন, করেছেন ১৯ বলে ৪৩ রান।
পাওয়ারপ্লেতে তামিম-লিটন তুলেছেন ৭৪ রান, শ্রীলঙ্কার চেয়ে ৪ রান বেশি। থিসারা পেরেরার শর্ট বলে হাঁটু তুলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন তামিম, ২৯ বলে ৪৭ রান করে। টাইমিংটা ঠিক যুতসই হচ্ছিল না সৌম্যর, চামিরার বলে সেটা খুঁজে ফেলেন ছয় মেরে। তবে প্রদীপের বলে আবার ছন্দপতন, খাড়া ক্যাচ তুলে তার হাতেই ধরা খেলেন ২২ বলে ২৪ রান করে।
এরপরই মুশফিক মহাকাব্য। তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ, পেরেরার ফুলটসে ছয় মেরের আলগা করেছিলেন রান-বলের ব্যবধানে বাড়তে থাকা চাপ। এরপর আবার ফ্রি হিটে চার, সে ওভারে এসেছে ১৮ রান। তবে চামিরার বলে মিসহিটে মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন, তার আগে করেছেন ১১ বলে ২০ রান। সিঙ্গেল চুরি করতে গিয়ে রান-আউট হয়েছেন সাব্বিরও, ০ রানেই।
এরপর সবটাই মুশফিকের ওপর। প্রদীপকে সে ওভারেই মারলেন ছয়, শেষ ওভারের জন্য রাখলেন ৯ রান। ১ম ও ৩য় বলে ডাবলস, মাঝের বলে চার। এরপর সিঙ্গেল। এরপর ইতিহাস!
এর আগে শ্রীলঙ্কার ইনিংসে ৬ থেকে ৯, ১৪ থেকে ১৬- এই ছয় ওভারে বাংলাদেশ দিয়েছে ১৬ ও ২২ রান। তবে বাকি ১২ ওভারে যা হয়েছে, তাতে ম্লান হয়ে গেছে এই ৬ ওভারের চাপ। কুশাল মেন্ডিস ও দানুশকা গুণাতিলাকার ওপেনিং জুটিতেই টেক-অফটা করেছিল শ্রীলঙ্কা। শুরুতে এক রুবেল হোসেন ছাড়া লেংথ ঠিক করতে পারেননি তাসকিন বা মুস্তাফিজ, গুডলেংথ ছেড়ে পড়ে ছিলেন শর্ট অফ আ লেংথেই। সঙ্গে আছে ডাউন দ্য লেগের ডেলিভারি, সেসব সুযোগ দুইহাতে লুফে নিয়েছেন মেন্ডিস। পাওয়ারপ্লেতে শ্রীলঙ্কা তুলেছে ৭০ রান, গুণাথিলাকার ব্যাট-প্যাডের ফাঁক খুঁজে পেয়েছিল শুধু মুস্তাফিজের কাটার।
এরপর কুশল মেন্ডিসের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আরেক কুশল- পেরেরা, আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার নায়ক। মেন্ডিস বাংলাদেশের সঙ্গে ফর্মটা টেনে এনে করলেন টানা তৃতীয় ফিফটি, আর পেরেরা আগের ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও করলেন তাই। নাজমুল অপু ও মেহেদি হাসান মিরাজও লাইন হারিয়ে ফেলেছেন শীঘ্রই, শেষে গিয়ে সাফল্য পেয়েছেন খন্ডকালিন স্পিনার মাহমুদউল্লাহ।
এক ওভারেই তার বলে একইভাবে লং-অনে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন মেন্ডিস ও ব্যাটিং অর্ডারে পদোন্নতি পাওয়া দাশুন শনাকা। এর আগে সৌম্যকে দিয়েও এক ওভার করিয়ে নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ, তবে কাজের কাজ কিছু হয়নি। পরের ওভারে তাসকিনকে ফ্লিক করতে গিয়ে দ্রুতই ফিরেছেন চান্ডিমাল, তবে এরপর উপুল থারাঙ্গার ১৫ বলে ৩২ রানের ক্যামিওতে মিলিয়ে গেছে তা।
শেষ ওভারে মুস্তাফিজের বলে আউট হওয়ার আগে পেরেরা করেছেন ৪৮ বলে ৭৪, থিসারা পেরেরাও ক্যাচ দিয়েছেন সে ওভারেই। তবে ওয়াইড-নো এর মিশ্রণে মুস্তাফিজ সে ওভারেও দিয়েছিলেন ১৬ রান। শ্রীলঙ্কা আগেই পেরিয়েছে ২০০, এরপর বাংলাদেশের সামনে খোলা রাখল ইতিহাসের দরজা। এরপরই আপনার পালা।
আপনি আজ কোন দলে ছিলেন? সবচেয়ে আশাবাদিদের দলে, নাকি বিস্মিতদের দলে?