টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ব্র্যান্ড চান তামিম
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে মাহমুদউল্লাহ বেশ কয়েকবারই বলে গেছেন, তারা বিশ্বকে একটা বার্তা দিতে চান। মুছে ফেলতে চান টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের পাশে থাকা প্রশ্নবোধক চিহ্নটা। তবে ভারতের সঙ্গে প্রথম ম্যাচে তেমন কিছুই করতে পারেনি বাংলাদেশ। উল্টো ৫৭টি ডট বল পুরোনো প্রশ্নটাই ফিরিয়ে এনেছিল আরেকবার- বাংলাদেশের জন্য কতখানি উপযুক্ত টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট?
সে প্রশ্নের উত্তর দিতে বাংলাদেশ বেছে নিল শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচটা। ২১৪ রানের পাহাড় কেটে তৈরি করলো অনায়াস রাস্তা। সে রাস্তা ধরেই নিজেদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য একটা ‘ব্র্যান্ড’ তৈরি করতে চান তামিম ইকবাল। যেখানে পাওয়ার হিটারের অভাবটা অনুভূত হবে না, যেখানে আত্মবিশ্বাস জোগাবে এই রেকর্ড গড়া ম্যাচ।
বাংলাদেশ অনেকদিন থেকেই হাপিত্যেশ করছে একজন পাওয়ার-হিটারের জন্য। তবে গতকাল তামিম-লিটন-সৌম্য-মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক আদতে দেখালেন, নিজেদের যা আছে, লড়াই করা যায় সেসব নিয়েই। যেমন লিটন দাসের সামর্থ্য। শুরুতে স্কোয়াডেই ছিলেন না, সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিতে দলে ডাকা হলো, প্রস্তুতি ম্যাচে খেললেন তিনে। প্রথম ম্যাচের আগে মাহমুদউল্লাহর দেওয়া ইঙ্গিত অনুযায়ী ভারতের সঙ্গেও খেললেন তিনে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে উঠে এলেন ওপেনিংয়ে।
লিটনকে ওপেনিংয়ে আনার পেছনে আছে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, বাংলাদেশ জানতো পাওয়ারপ্লেতে শ্রীলঙ্কা অফস্পিনারকে আনবে। লিটন সেই স্পিনকে খেললেন দারুণভাবে, পায়ের কাজে বোলারদের রাখলেন ব্যতিব্যস্ত। ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে টার্ন মেরে খেলা ছয়টা তো ইনিংসেরই অন্যতম সেরা শট।
তামিম নিজেও তো কম না। আকিলা দনঞ্জয়াকে ইনসাইড-আউটে মারা ছয়টা যেন অনেককিছুর জবাব। জবার নিজেদের সামর্থ্যের, জবাব টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ক্রিকেট সক্ষমতার।
‘আমাদের হয়তো পাওয়ার হিটার নেই। কিন্তু আমরা একটা বাংলাদেশী ব্র্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পরিকল্পনা ও খেলতে পারি। আমরা ইংল্যান্ড বা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অনুসরণ করতে পারবো না। এমএস ধোনির মতো কেউ নেই আমাদের, যে সাত নম্বরে এসে খেলে দিবে। ক্রিস গেইলের মতো কেউ নেই, যে প্রথম বল থেকেই বোলারদের নিয়ে খেলবে। কিন্তু আমাদের যেটা আছে- স্মার্ট ক্রিকেটার, যারা অন্যান্যদের চেয়ে আলাদা। সবসময় এটা চার বা ছয়ের ব্যাপার না। মাঝের ওভারগুলোতে প্রচুর সিঙ্গেল নিলে বাউন্ডারি এমনিতেই আসবে’, বলছেন তামিম ইকবাল।
এমন রান তাড়ায় শুরুর ভিতটা গড়া গুরুত্বপূর্ণ, মাঝের ওভারের তামিমের মতে খেলা উচিৎ ‘স্মার্ট ক্রিকেট’। কাল বাংলাদেশ করেছে সেটাই। সৌম্য সরকারের ২২ বলে ২৪ রানের ইনিংসটিকেও তাই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন তামিম, ‘হয়তো এটা স্কোরকার্ডে খুব ভাল দেখাবে না (অন্যান্য ইনিংসের তুলনায়), কিন্তু সে স্ট্রাইক বদলেছে, যখন বাউন্ডারি প্রয়োজন মেরেছে।’
‘এ জয়টা অবশ্যই আমাদের অনেক আত্মবিশ্বাস দেবে। এটা আমাদের অন্যতম সেরা জয়। কিন্তু আমি এটা সবসময়ই বিশ্বাস করি, একটা ম্যাচ জিতেই আমরা সব জিতে ফেলিনি। ২১৫ রান তাড়া করাটা আমাদের আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। তবে এটা শেষ নয়, শুরু মাত্র। দল হিসেবে এটা আমাদের প্রয়োজন ছিল।’
২১৫ রান তাড়া করে বাংলাদেশ হয়তো জিতেছে শুধু একটি ম্যাচ, কিন্তু সেই বিশাল পাহাড়টা কাটার পর উঁকি দিচ্ছে কিন্তু সেই রাস্তাটা। যে রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলেই হয়তো মিলবে তামিমের সেই ‘বাংলাদেশী ব্র্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট’! যে রাস্তাটা শেষ নয়, প্রেমাদাসায় শুরু হলো মাত্র!