রোহিত-সুন্দরে ম্লান মুশফিক
ভারত ১৭৬/৩, ২০ ওভার (রোহিত ৮৯, রায়না ৪৭, রুবেল ২/২৭)
বাংলাদেশ ১৫৯/৬, ২০ ওভার (মুশফিক ৭২*, তামিম ২৭, সাব্বির ২৭, সুন্দর ৩/২২, চাহাল ১/২১)
ফল- ভারত ১৭ রানে জয়ী
রোহিত শর্মা আগের ৬ ইনিংসে করেছিলেন মোট ৬০ রান। ওয়াশিংটন সুন্দর ক্যারিয়ারে ৪ ম্যাচে পেয়েছিলেন ৫ উইকেট। মুশফিকুর রহিম আগের ম্যাচে করেছিলেন ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ৭২। রোহিত আজ করলেন ৮৯, টপ অর্ডার ধসে দিয়ে সুন্দর ২২ রানে নিলেন ৩ উইকেট, মুশফিক আজও অপরাজিত থাকলেন ৭২ রানে। প্রথম দুইজনের বিপরীতমুখি পারফরম্যান্সটাই হলো দারুণ কার্যকরি, আর মুশফিকের ইনিংসটা গেল বিফলেই। নিদাহাস ট্রফিতে বাংলাদেশকে ১৭ রানে হারিয়ে ফাইনালে চলে গেল ভারত, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচটা এখন কার্যত সেমিফাইনাল।
১৭৭ রানের লক্ষ্য, তবে পাওয়ারপ্লেতেই সুন্দরের বলে আউট টপ অর্ডারের তিনজন। আগের বলে ইনসাইড আউটে চার মারা লিটন ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে সুন্দরকে আড়াআড়ি খেলতে হয়েছেন স্টাম্পড, আগের ম্যাচে জয়ের ভিত গড়া ওপেনিং জুটিতে এসেছে মাত্র ১২ রান। জায়গা থেকেই নীচু হওয়া বলে উচ্চাভিলাষী শটের চেষ্টায় লাইন মিস করে বোল্ড সৌম্য। দারুণ সব ড্রাইভ খেলা তামিম সুন্দরের তৃতীয় শিকার, আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে ভাঙলো তার লেগস্টাম্প। তার আগে করলেন ১৯ বলে ২৭ রান।
একপ্রান্তে মুশফিককে রেখে চাহালকে ফিরলেন মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির, মিরাজ। চাহালকে শর্ট লেংথে পেয়েও বাউন্ডারি পার করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ, মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন ১১ রান করে। ১৭তম ওভারে ঠাকুরকে পুলের চেষ্টায় বোল্ড মুশফিককে বেশ কিছুক্ষণ সঙ্গ দেওয়া সাব্বির, ২৩ বলে ২৭ রান করে। শেষ ওভারে ব্যয়বহুল সিরাজকে উইকেট দিয়েছেন মিরাজ।
১১ থেকে ১৩- এই ৩ ওভারে মুশফিকরা তুলেছিলেন ৪০ রান। তবে ভারতীয় বোলারদের হাতে নিয়ন্ত্রণ ছিল এর আগে-পরে, মুশফিককেও মেলে ধরতে দেননি সেভাবে। ৪২ বলে ফিফটি করলেন মুশফিক, পরের ১৩ বলে তুললেন ২২ রান। প্রথম ১০ ওভারে ৬৪ রান তোলা বাংলাদেশ পরের অর্ধে তুললো ৯৫ রান, তবে যথেষ্ট হলো না তাও। সুন্দরের মতো বেশ ভুগিয়েছেন চাহালও, ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ২১ রান, সঙ্গে ১টি উইকেট।
এর আগে টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিল বাংলাদেশ, আর বাংলাদেশকে টি-টোয়েন্টিতেও রোহিত বানিয়ে ফেলেছেন প্রিয় প্রতিপক্ষ। আজকের পর রোহিতের ক্যারিয়ার গড় যেখানে ৩০.৪৪, বাংলাদেশের সঙ্গে সেটা বেড়ে হয়ে গেছে ৪২.৮৫। শেষ ৬ ইনিংস মিলিয়ে রোহিত করেছিলেন ৬০ রান, আজ শেষ ওভারে রান-আউট হওয়ার আগে করলেন ৮৯।
প্রেমাদাসার তুলনামূলক ধীরগতির উইকেটে- যেখানে বল ব্যাটে আসছিল ধীরে- রোহিত সুযোগের জন্য অপেক্ষা করে থেকেছেন। লাইন-লেংথের হেরফের হলেই টেনে খেলেছেন শট। ৪২ বলে ফিফটি করেছিলেন, পরের ১৯ বলে করেছেন ৫৯ রান। ইনিংসের শুরুতে একটা সুযোগ দিয়েছিলেন, অফফর্মের ধারাবাহিকতাতেই মিসহিটে আকাশে ওঠা বলটা নাগালে নিতে পারেননি রনি।
১, ২৮, ১৩- ভারতের শেষ তিন ওপেনিং জুটি আজ একলাফে গিয়ে দাঁড়ালো ৭০ রানে। রানের গতিটা সেভাবে বাড়েনি প্রথমে, ইনফর্ম ধাওয়ানও ছিলেন বেশ চুপচাপই। প্রথম ব্রেকথ্রু এনেছেন দিনে বাংলাদেশের সেরা বোলার রুবেল হোসেন, ইয়র্কারে ৩৫ রান করা ধাওয়ানকে বোল্ড করে। শেষ ওভারে রুবেলকে মাথা নীচু করে ফ্লিক করতে গিয়ে মিডউইকেটে সৌম্যর হাতে ধরা পড়েছেন রায়না, তার আগে করেছেন ৩০ বলে ৪৭। শেষ বলে গিয়ে রান-আউট হয়েছেন রোহিত।
ভাল শুরু করেছিলেন তাসকিনের জায়গায় দলে আসা আবু হায়দারও, ডানহাতিকে রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে বল করে স্লোয়ারের ব্যবহারও করেছিলেন দারুণ। তবে শেষ ওভারে গিয়ে গুলিয়ে ফেলেছেন সব, প্রথম ৩ ওভারে ২২ রান দিয়ে এবার দিয়েছেন ২১ রান! ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ছয় বোলার ব্যবহার করেছেন মাহমুদউল্লাহ, স্পিনারদের মধ্যে কম বিবর্ণ ছিলেন নাজমুল, ৪ ওভারে দিয়েছেন ২৭ রান। উইকেটশূন্য ছিলেন মুস্তাফিজও।
তবে উজ্জ্বল ছিলেন রুবেল। শেষ ওভারেও তিনি দিয়েছেন মাত্র ৪ রান। তবে যথেষ্ট হলো না সেটাও, তার আগেই লক্ষ্যটা বাংলাদেশের নাগালের বাইরে নিয়ে গেছে ভারত। আর দৃষ্টিসীমায় সেটা থাকলেও তা ধূসর করে দিয়েছেন সুন্দর।