• নিদাহাস ট্রফি ২০১৮
  • " />

     

    বাংলাদেশের শিরোপা স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিলেন কার্তিক

    বাংলাদেশের শিরোপা স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিলেন কার্তিক    

    বাংলাদেশ ১৬৬/৮, ২০ ওভার (সাব্বির ৭৭, মিরাজ ১৯*, চাহাল ৩/১৮, উনাডকট ২/৩৩)
    ভারত ১৬৮/৬, ২০ ওভার (রোহিত ৫৬, কার্তিক ২৯*, রুবেল ২/৩৫, মুস্তাফিজ ১/২১)
    ফল- ভারত ৪ উইকেটে জয়ী 


    কতোখানি দৈর্ঘ্য হবে- এক ফুট, দুই ফুট। দীনেশ কার্তিকের শটটা এক্সট্রা কাভার বাউন্ডারির এতখানি ভেতরে পড়লে স্বপ্নটা আরও ১২ বলের জন্য টিকে থাকতে পারতো বাংলাদেশের। তবে হৃদয়ভঙ্গের গল্পে ১ বলে ৫ রানের সম্বলে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের শটটা সবসময়ই পড়ে বাউন্ডারির এক ফুট বা দুই ফুট বাইরেই। আরেকটি ফাইনাল, বাংলাদেশের আরেকটি স্বপ্নভঙ্গের গল্প। সাব্বিরের ইনিংস, মিরাজের ক্যামিও, মুস্তাফিজের স্বপ্নালু ১৮তম ওভার, রুবেল-সৌম্যর অসাধারণ বোলিং- সব এসে মিলিয়ে গেল শেষের দুই ওভারে। প্রথম দুই ওভারে ১৩ রান দেওয়া রুবেল ১৯তম ওভারে এসে দিলেন ২২, ২ ওভারে ৩৫ রানের প্রয়োজনীয়তা মিটিয়ে ফেললেন কার্তিক! শেষ ওভারে ৫টি বল সৌম্য কার্তিককে আটকিয়ে রেখেও পারলেন না শেষ পর্যন্ত। হলো না, আরেকবার! অসাধারণ এক ফাইনালে ওই হৃদয়ভঙ্গের বেদনাতেই পুড়লো বাংলাদেশ! 

    ১৬৭ রানের লক্ষ্যে রোহিত শর্মা যেন ব্যাটিং করছিলেন মিশনে নামা এক সেনাপতির মতো। দারুণ সব ক্লিনহিটে শুরুটা হলো দুর্দান্ত, যেন বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ তিনি একাই। ৩৫ বলে ফিফটি করলেন, পুরো ইনিংসেই টাইমিংয়ের অনুপম প্রদর্শনী ছিল তার ব্যাটিংয়ে। নাজমুলের বলে মিসটাইমিংয়েই হলেন আউট, প্রাণ ফিরে পেল বাংলাদেশ। এর আগে ধাওয়ানকে লিডিং এজে ফিরিয়েছিলেন সাকিব, ডাউন দ্য লেগে রুবেলের বলে ক্যাচ দিয়েছেন রায়না, যেটা বাংলাদেশ পেয়েছে রিভিউয়ে। 

    রোহিতকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন রাহুল, গ্যাপ বের করে খেলা তার ধৈর্য্যচূতি ঘটালো রুবেলের বাউন্সারে, মিসটাইমিংয়ের পুলে দিলেন ক্যাচ। কার্তিককে শেষের জন্য জমিয়ে রাখলো ভারত, পাঠালো বিজয় শংকরকে। ১৮তম ওভারে ৫ বলে তিনি লেগবাইয়ে শুধু একটি রান নিতে পারলেন, তাকে নামানোর সিদ্ধান্তটা বুমেরাং হয়ে যাচ্ছিল ভারতের জন্যই। শেষ বলে পান্ডের উইকেট নিয়ে মুস্তাফিজ করলেন টুর্নামেন্টে আরেকটি মেডেন-উইকেটের ওভার। 

    এর আগেই পার্টটাইমার সৌম্য হয়ে গেছেন অনেক ভরসার এক নাম, তাকে শেষ ওভারে জমিয়ে রেখে সাকিব আনলেন রুবেলকে। প্রথম বলটা লো ফুলটস, উড়িয়ে দিলেন কার্তিক। সে ওভারে স্টিম-রোলার চললো, যে রোলারে পরে চূর্ণ হয়ে গেল বাংলাদেশের একটি শিরোপার স্বপ্ন। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১২ রান, সৌম্য ৫ম বলে উইকেটও নিলেন। তবে শংকরের সেই ক্যাচ নিশ্চিত করলো, শেষ বলে স্ট্রাইকে থাকছেন কার্তিক। সব উড়িয়ে দিলেন তিনিই। 

    এর আগে বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল দুই স্তরের : পেস স্তর, স্পিন স্তর। যেসব পেরিয়ে সাব্বির করেছেন ৭৭, বাংলাদেশ করেছে ১৬৬। ভারতের তিন পেসার ১২ ওভারে দিয়েছেন ১২৬, ১০.৬ হারে। দুই স্পিনার ৮ ওভারে দিয়েছেন ৩৮ রান, ৪.৭৫ হারে। স্পিন স্তরে লিটন-তামিম-সৌম্য ফিরেছেন, প্রথম দুইজন বলের নাগাল না পেয়ে এজড, পরেরজনের শট সোজা গেছে ফিল্ডারের হাতে। তামিমের ক্যাচে অবশ্য সমান অবদান ফিল্ডার শারদুল ঠাকুরের দারুণ বাউন্ডারিতে দারুণ ভারসাম্যেরও। ৩৩ রানেই বাংলাদেশ হারিয়েছে ৩ উইকেট।  

    চাহালের গুগলি পড়তে না পেরে ক্যাচ দিয়েছেন ইন-ফর্ম মুশফিকও, পেস-স্তর পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করলে চিত্রটা ভিন্ন হতে পারতো বাংলাদেশের। মাহমুদউল্লাহর উইকেটটি অবশ্য ‘ধূসর স্তর’-এর আওতায়। শঙ্করের স্লোয়ারে ফ্লিকটা ঠিকঠাক হয়নি মাহমুদউল্লাহর, উইকেটকিপার কার্তিকের পাশেই গেছে বল। সাব্বির দৌড়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন ওপ্রান্তে, তবে ক্রিজ ছেড়ে বেরুলেও রান নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না মাহমুদউল্লাহর। কার্তিকের থ্রো প্রথম চেষ্টায় ধরতে পারেননি শংকর, মাহমুদউল্লাহ এরপর দৌড় শুরু করেছিলেন, তবে শেষরক্ষা হয়নি আর। পরেরটিও রান-আউটই, এবার সিঙ্গেল চুরি করতে গিয়েছিলেন সাকিব, সমান বলে ৭ রান করে। 

    এই দুই স্তরের ওপরে উঠে খেলেছেন সাব্বির। ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে তিনে নেমেছিলেন, ইনিংসের শুরুতে তাকে দেখে মনে হয়েছে এলোমেলো, বারকয়ের রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ব্যর্থ, প্রথম ১৪ বলে সম্বল ছিল ১১ রান। ছয় মেরে শৃঙ্খলাটা যেন ফিরিয়ে আনলেন। ৩৭ বলে করেছেন ফিফটি। স্কুপ করে যেন তাড়িয়েছেন রিভার্স সুইপের ভূত, শারদুল ঠাকুরের নাকল বলও আটকাতে পারেনি তাকে। সব মিলিয়ে ছয় মেরেছেন চারটি। সঙ্গে সাতটি চার। ১৯তম ওভারে উনাডকটকে জোরের ওপর খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে হয়েছেন বোল্ড, সে ওভারেই তার বিপক্ষে দুইটি রিভিউ নিয়েছিল ভারত। 

    সাব্বিরের মতো করেই বোল্ড হয়েছেন রুবেল। ১৬০ উঁকি দিচ্ছিল সাব্বির থাকতে, দুই উইকেটে সেটা পড়ে গিয়েছিল হুমকির মুখে। মিরাজ পার করেছেন এরপর, টি-টোয়েন্টি তার সর্বোচ্চ ইনিংস খেলে। 

    কিন্তু ভারতকে পার করে দিলেন কার্তিক। অতিমানবীয় এক ইনিংসে, এক থেকে দুই ফুট দৈর্ঘ্যে!