• দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ
  • " />

     

    'বিধ্বস্ত' অস্ট্রেলিয়াকে এক সেশনেই 'হাওয়া' করে দিল দ. আফ্রিকা

    'বিধ্বস্ত' অস্ট্রেলিয়াকে এক সেশনেই 'হাওয়া' করে দিল দ. আফ্রিকা    

    কেপটাউন টেস্ট 
    দক্ষিণ আফ্রিকা ৩১১ ও ৩৭৩
    অস্ট্রেলিয়া ২৫৫ ও ১০৭
    ফল- দক্ষিণ আফ্রিকা ৩২২ রানে জয়ী 


    বল টেম্পারিং বিতর্কে এলোমেলো হয়ে গেছে সব। এটা এমন এক ঘটনা, যা মাঠের খেলা থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিয়ে যায় অন্যদিক। যেদিক তাকালে দেখা যাবে ক্যামেরন ব্যানক্রফটের বল টেম্পারিং, স্মিথসহ তার স্বীকারোক্তি, স্মিথ ও ওয়ার্নারের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়কের পদ থেকে সরে দাঁড়ানো, স্মিথের শাস্তি, ব্যানক্রফটের শাস্তি। কেপটাউন টেস্টে হঠাৎ আসা ঝড়ে তাই মিলিয়ে যেতে পারে বাকি সব, এ টেস্টকে মনে রাখা হতে পারে ওই এক কেলেঙ্কারির কারণেই। অথচ রেকর্ড বলবে দক্ষিণ আফ্রিকা উড়িয়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে, আরেকটি ব্যাটিং ধসে হারিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া। রেকর্ড বলবে ইনিংসে ৫ ও ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে এ পর্যন্ত ম্যাচে ক্যারিয়ারসেরা ফিগার গড়েছেন মরনি মরকেল, এ সিরিজ শেষেই যিনি যাবেন অবসরে। 

    সকালটা শুরু হয়েছিল আরেক দফা ঝড় দিয়ে, টিম পেইন দায়িত্ব নিয়েছিলেন অধিনায়কত্বের। আর দক্ষিণ আফ্রিকা শুধু নিজেদের লিডটাকেই বাড়িয়ে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার থেকে দূর-বহুদূরে, এমন ডামাডোলে নিজেদেরকে স্বস্তিকর এক জায়গায় রাখতে তারা আর কিইবা করতে পারত! শেষ ৫ উইকেটে আফ্রিকা যোগ করেছে ১৩৫ রান। স্লিপে ক্যাচ দেওয়ার আগে এবি ডি ভিলিয়ার্স করেছেন ৬৩ রান, কুইন্টন ডি কক ও ভারনন ফিল্যান্ডারও করেছেন ফিফটি। এর মাঝে কাগিসো রাবাদার উইকেট দিয়ে ৩০০ উইকেট পূরণ করেছেন ন্যাথান লায়ন, তবে এরপর তাদের প্রায় না করা উদযাপনটাই বলে দিচ্ছিল, অস্ট্রেলীয় ক্যাম্পের অবস্থা কতটা বিধ্বস্ত! 

    দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস শেষ হওয়ার পরই ড্রেসিংরুমের দিকে দৌড় দিলেন বটে ওয়ার্নার-ব্যানক্রফট, খানিকবাদেই ব্যাটিংয়ে নামার জন্য। তবে অস্ট্রেলিয়া যেন এ টেস্ট থেকে দৌড়ে পালাতে পারলেই বাঁচে তখন, ক্রিজেও তাদের ব্যাটিং যেন হয়ে দাঁড়ালো সেটারই প্রতিচ্ছবি। 

    ৫৭ রানের ওপেনিং জুটি ওয়ার্নার-ব্যানক্রফটের, তবে গালিতে রাবাদার বলে ওয়ার্নারের ক্যাচ দেওয়ার পরই যেন ধসে পড়ার শুরুটা হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার। মহারাজের বলে স্লিপে ক্যাচ দিলেন উসমান খাওয়াজা, শন মার্শ পরের বলেই শর্ট লেগে এইডেন মার্করামের দারুণ ক্যাচের শিকার। মরকেলের বলে গালিতে ক্যাচ দেওয়ার আগে স্মিথ করলেন ৭ রান, হুক করতে গিয়ে মরকেলের বলেই ক্যাচ দিলেন মিচেল মার্শ। পরের বলেই বাউন্সারে কুপোকাত প্যাট কামিন্স। মিচেল স্টার্ক ক্যাচ দিলেন শর্ট লেগে, টেমবা বাভুমার হাতে রান-আউট ন্যাথান লায়ন। জশ হ্যাজলউডকে ক্যাচ বানিয়ে ইনিংসে ৫ উইকেট পূর্ণ করেছেন মরকেল। 

    চা-বিরতিতে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিল ৪৭ রানে কোনও উইকেট না হারিয়ে, তবে অল-আউট হয়ে যেতে অস্ট্রেলিয়ার লেগেছে আর মাত্র ২৩.৪ ওভার। ম্যাচসেরা হয়েছেন মরকেল। আর ম্যাচশেষে দায়িত্বপ্রাপ্ত অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ক্ষমা চেয়েছেন দর্শকদের কাছে, গত ২৪ ঘন্টাকে বলেছেন বীভৎস। 

    সেই বীভৎস ২৪ ঘন্টাতেই তো হারিয়ে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার এই ঘন্টা দুইয়ের ব্যাটিং বিভীষিকা। আর মনে করিয়ে দিচ্ছে সেই পুরোনো কথাটাই, ক্রিকেট তখনোই রোমাঞ্চকর, যখন আলোচনার উৎস শুধুই ব্যাটে-বলের 'নিয়মিত' লড়াই। ক্রিকেট তখন রোমাঞ্চকর নয়, যখন একটা ‘বহিরাগত’ হলুদ টেপের আঁচড় পড়ে ক্রিকেট বলের ওপর।