• দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ
  • " />

     

    স্মিথদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ, যত শাস্তি

    স্মিথদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ, যত শাস্তি    

    বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগে শাস্তি পাওয়া তিন ক্রিকেটারদের নিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার বিবৃতি-

    গতকাল জোহানেসবার্গ থেকে আসা ঘোষণা পর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার বোর্ড আজ আবার কেপটাউনের ঘটনার তদন্ত নিয়ে সভায় বসেছিল। 

    মূল যেসব পয়েন্ট তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, এই ঘটনা সম্পর্কে আগে থেকে জানতেন তিনজন ক্রিকেটার- স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার ও ক্যামেরন ব্যানক্রফট। 

    স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার ও ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে সিএ-র কোড অব কন্ডাক্টের ২.৩.৫ ধারা ভঙের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তাদের আচরণ ছিল- 

    ক) ক্রিকেটের চেতনা বিরোধী
    খ) প্রতিনিধি বা অফিশিয়ালের সঙ্গে বেমানান
    গ) ক্রিকেটের স্বার্থবিরোধী অথবা এমন কিছু, এবং/অথবা
    ঘ) ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করা

    উপরিউক্ত ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া নিচের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে- 

    স্টিভ স্মিথকে সিএ-র কোড অব কন্ডাক্টের ২.৩.৫ ধারা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত করা হচ্ছে নিম্নলিখিত কারণে- 

    ক) কৃত্রিমভাবে বলের কন্ডিশন বদলানোর পরিকল্পনা সম্বন্ধে পূর্বজ্ঞান থাকায়
    খ) এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাধা দেওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায়
    গ) টেম্পারিংয়ের প্রমাণ খেলার সময়ই লুকিয়ে ফেলতে একজন নিয়ামক হওয়ায়
    ঘ) ম্যাচ অফিশিয়াল ও অন্যান্যদের দৃষ্টি ব্যানক্রফটের বল টেম্পারিংয়ের চেষ্টার দিক থেকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ায় 
    ঙ) পরিকল্পনার ধরন, ব্যপ্তি ও অংশগ্রহণকারীদের সম্বন্ধে ধোঁয়াশাপূর্ণ মন্তব্য করায়


    ডেভিড ওয়ার্নারকে সিএ-র কোড অব কন্ডাক্টের ধারা ২.৩.৫ ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে নিম্নলিখিত কারণে-

    ক) কৃত্রিমভাবে বলের কন্ডিশন বদলানোর পরিকল্পনা করায় 
    খ) স্যান্ডপেপার ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে বলের কন্ডিশন বদলানোর জন্য একজন জুনিয়র ক্রিকেটারকে নির্দেশনা দেওয়ায়
    গ) কেমন করে কৃত্রিমভাবে বলের কন্ডিশন বদলানো যায়, সেটা দেখিয়ে একজন জুনিয়র ক্রিকেটারকে উপদেশ দেওয়ায়  
    ঘ) এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এবং/অথবা তৈরিতে বাধা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় 
    ঙ) ম্যাচের পূর্বে বা চলাকালীন সময়ে এ সম্পর্কে কোনো রিপোর্ট করতে ব্যর্থ হওয়ায়
    চ) এই পরিকল্পনা সম্বন্ধে জানা এবং যুক্ত থাকার পরও ম্যাচ অফিশিয়ালদের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করায় 
    ছ) ম্যাচের পরে নিজে থেকে এই পরিকল্পনা সম্বন্ধে রিপোর্ট না করায় 


    সিএ-র কোড কন্ডাক্টের ধারা ২.৩.৫ ভঙের দায়ে ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে অভিযুক্ত করা হয়েছে নিম্নলিখিত পয়েন্টের ভিত্তিতে- 

    ক) স্যান্ডপেপার ব্যবহার করে বলের কন্ডিশন বদলানোর পরিকল্পনার অস্তিত্ব সম্বন্ধে জ্ঞান থাকায়, এতে অংশগ্রহণ করায় 
    খ) বলের কন্ডিশন বদলানোর লক্ষ্যে নির্দেশ পালন করায় 
    গ) বলের কন্ডিশন বদলানোর প্রমাণ লুকিয়ে ফেলার চেষ্টায়
    ঘ) কৃত্রিমভাবে বলের কন্ডিশন বদলানোয় নিজের প্রচেষ্টা সম্বন্ধে ম্যাচ অফিশিয়ালদের ভুল বুঝানোয় 
    ঙ) পরিকল্পনার ধরন, ব্যাপ্তি, বাস্তবায়ন ও অংশগ্রহণকারী সম্বন্ধে ধোঁয়াশাপূর্ণ মন্তব্য করায়। 


    শাস্তির সার-সংক্ষেপ

    ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ধারা ২.৩.৫ অনুযায়ী শাস্তির ব্যাপ্তি ব্যাপক। সিএ বোর্ড প্রত্যেক ক্রিকেটারের জন্য উপযুক্ত শাস্তি নির্ধারণ করেছে, তদন্তের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে। 

    বোর্ড কোড অব কন্ডাক্টের প্রক্রিয়া অনুযায়ী নিম্নলিখিত শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে পরামর্শ গ্রহণ করেছে-

    স্টিভ স্মিথ- আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা
    ডেভিড ওয়ার্নার- আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা
    ক্যামেরন ব্যানক্রফট- আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে নয় মাসের নিষেধাজ্ঞা

    তিনজনকেই ক্লাব ক্রিকেট খেলার অনুমতি দেওয়া হবে, এবং এক্ষেত্রে উৎসাহ দেওয়া হবে, যাতে ক্রিকেটের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বজায় থাকে। 

    তদুপরি, প্রত্যেককেই কমিউনিটি ক্রিকেটে ১০০ ঘন্টা করে স্বেচ্ছাসেবা দিতে হবে।


    নেতৃত্ব

    স্টিভ স্মিথ ও ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে তাদের নিষেধাজ্ঞার পর এক বছর সময় পর্যন্ত দলের নেতৃত্বে বিবেচনা করা হবে না। ভবিষ্যতে তাদের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে জনগণ ও সমর্থকদের চাওয়া, ফর্ম এবং প্লেয়িং গ্রুপের ওপর আধিপত্যের ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষ হবে। ডেভিড ওয়ার্নারকে ভবিষ্যতে নেতৃত্বের জন্য বিবেচনা করা হবে না।   


    ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান ডেভিড পিভার বলেছেন- 

    ‘গতকালই যেমন ইঙ্গিত দিয়েছিলাম, এই ঘটনায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া বোর্ড অস্ট্রেলিয়ান সমর্থকদের ক্ষোভকে বুঝতে পারে ও ধারণ করে।’ 

    ‘এটা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের সততা ও সুনামের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, শাস্তির ক্ষেত্রে এসবের প্রতিফলন থাকতেই হবে।’ 

    ‘পেশাদার ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে এসব শাস্তি বড় ধরনের, বোর্ড হালকাভাবে এসব নিচ্ছে না। আশা করা যাচ্ছে, নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এই ক্রিকেটাররা তাদের ভালবাসার এই ক্রিকেটে ফিরতে পারবে, ক্যারিয়ার পুনর্গঠন করতে পারবে।’ 

    প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড বলেছেন- 

    ‘চেয়ারম্যান যেমন বলেছেন, যেসব শাস্তি আমরা ঘোষণা করেছি, সেগুলো বড় ধরনের। এ কারণেই প্রক্রিয়াটা বিস্তৃত হয়েছে, আমাদেরকে সব ইস্যুই নিরীক্ষা করতে হয়েছে।’ 

    ‘এই শাস্তি ক্রিকেটের সততা ও সুনাম যারা ক্ষুণ্ন করেছেন, তাদের দায়মোচনের সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ। এই ঘটনার পর তারা তাদের শিক্ষা পেয়েছেন।’