স্মিথের কান্নায় পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন লেম্যান
ওপাশে ভেঙে পড়লেন স্টিভ স্মিথ ও ক্যামেরন ব্যানক্রফট। যে লোকটা গতকালও বলেছেন, তিনি সরে দাঁড়াবেন না, বরং দলের সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে- সেই ড্যারেন লেম্যানও ভেঙে পড়লেন এবার। প্রায় পাঁচ বছর অস্ট্রেলিয়ার কোচের দায়িত্ব পালনের পর সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। স্মিথদের ভেঙে পড়াটা তার সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে বলেও জানিয়েছেন।
শনিবার শুরু হতে যাওয়া টেস্টের একাদশ ঘোষণার পরই নিজের পদত্যাগের খবর দিয়েছেন লেম্যান। এই টেস্টই হবে অস্ট্রেলিয়ার কোচ হিসেবে তার শেষ ম্যাচ। কেপটাউনে বল কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে ঠিকমতো ঘুমুতে পারেননি লেম্যান। স্মিথ-ওয়ার্নার-ব্যানক্রফটের বল টেম্পারিংয়ের পরিকল্পনার খবর তার অজানা ছিল, তবে অস্ট্রেলিয়া দল ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া যখন নানাদিক থেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার শিকার হচ্ছে, তখন নিজের কোচ হিসেবে থাকার ব্যাপারটা অসম্ভব মনে হয়েছে তার কাছে। এরই মাঝে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে তাদের হোম সিরিজের স্পন্সর ম্যাজেলান, আর চ্যানেল নাইন টেনিসের সঙ্গে পাঁচ বছরের নতুন চুক্তিও দিচ্ছে অন্য কিছুর ইঙ্গিত।
‘ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে বিদায় জানানো আমার করা কঠিন কাজগুলোর একটি ছিল’, সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন লেম্যান, ‘গত কয়েকদিনে অনেক কিছুই হচ্ছে, আপনার মনে হতেই পারে আপনি চালিয়ে যেতে পারবেন। তবে বিদ্রুপ তো নাড়িয়ে দিয়ে যায়। তারা ভুল করেছে। আমার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, বছরে ৩০০ দিনই আমার ভ্রমণের এই ধারা তারা আর মানতে পারছে না।’
‘এটা একটা বড় কারণ। প্রধান কারণ। তাদের সঙ্গে কিছু সময় কাটাবো, ছেলেকে ক্রিকেট খেলতে দেখব, মেয়েদের কাছে থাকব।’
‘আমি উর্ধ্বতনদের সঙ্গে গত কয়েকদিনই কথা বলছি। কাল রাতেও ঘুমাতে পারিনি, কেউই পারেনি। কাল টেস্টে নামার সময় এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সত্যি বলতে কী, আমি শনিবার থেকেই ঘুমাতে পারিনি। এখানে-সেখানে সময় কাটিয়েছি, আর মাথায় ঘুরেছে- কোনটা ঠিক, খেলাটাকে সামনে এগিয়ে নিতে।’
তবে স্মিথ ও ব্যানক্রফটকে এভাবে ভেঙে পড়তে দেখে আর ভাবতে পারেননি তিনি, ‘আজ স্মিথ ও ব্যানক্রফটের ঘটনা দেখে আমার মনে হয়েছে, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের এখন এগিয়ে যাওয়ার সময়।আমার সত্যিই স্টিভের জন্য খারাপ লাগছে, সংবাদমাধ্যমের সামনে এভাবে তাকে কাঁদতে দেখে। সব ক্রিকেটারকেই এটা আঘাত করেছে। আমি আগেই বলেছি, আমি এই (টেম্পারিংয়ের) ঘটনা আগে থেকে জানতাম না, এটা ক্ষমার যোগ্যও না, তবে ভাল মানুষেরও ভুল হয়।’
‘এটা অবিশ্বাস্য। দুই তরুণকে এভাবে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়া, আমি নিশ্চিত ডেভিডও তাই করবে, এটা অবিশ্বাস্য।’
‘আশা করি ক্রিকেট নিজের ধারায় ফিরবে। এটা ভালবাসার খেলা, উপভোগের খেলা। কোচিংয়ে আমি ক্যারিয়ারের অসাধারণ একটা সময় কাটিয়েছি, গৌরবের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াকে কোচিং করিয়েছি। আপাতত কিছু অবসর কাটাবো, এরপর পরবর্তী করণীয় ঠিক করবো। আমি এই খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাই, আমি এটাকে খুব ভালবাসি। তবে গত সপ্তাহখানেক ধরেই আমি ও আমার পরিবার অনেক বিদ্রুপের শিকার হয়েছি, এটা তাদের ওপর প্রভাব ফেলেছে।’
‘এখানে বসে থাকা অনেকেই জানবেন, বাইরে বাইরে জীবন কাটানো কাটানো মানে প্রিয়জনদের কাছ থেকে অনেকখানি সময় কেড়ে নেওয়া, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে, সরে দাঁড়ানোর এটাই উপযুক্ত সময়’, ওয়ানডারার্সে বলেছেন আবেগী লেম্যান।
তার পদত্যাগে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপে সুবিধা হবে বলেও মনে করেন তিনি, ‘দলের সংস্কৃতির পেছনে সবকিছুর পর আমারই দায় আছে। বেশ কিছুক্ষণ ধরেই আমি আমার পদ নিয়ে ভাবছিলাম। যদিও গতকাল বলেছি, আমি পদত্যাগ করবো না, কিন্তু স্টিভ ও ক্যামেরনকে এভাবে ভেঙে পড়তে দেখে আমার কাছে মনে হয়েছে, এটাই উপযুক্ত সিদ্ধান্ত। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এখন পুরো বিষয়টা পুনর্মূল্যায়ন করতে পারবে, অস্ট্রেলিয়ান জনগণের কাছে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পরিবর্তন আনতে পারবে। এটাই অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।’
কোচ হিসেবে ২০১৫ সালে বিশ্বকাপের সঙ্গে দুইটি অ্যাশেজ জিতেছেন লেম্যান, তবে এই সময়ে তার সবচেয়ে গর্বের মুহুর্ত হিসেবে তিনি বলেছেন ফিলিপ হিউজের মৃত্যুর পর সবাই যেভাবে নিজেদের সামলিয়ে নিয়ে খেলেছিল, সেটা কথা, ‘আমি বলবো, ফিলিপ হিউজের ঘটনা আমরা যেভাবে সামলিয়েছিলাম। আমরা একটা ম্যাচই খেলছিলাম, শুধুই একটা ম্যাচ। কিন্তু আমরা অসাধারণ এক তরুণকে হারিয়েছিলাম, আর আমরা যেভাবে এটার সঙ্গে লড়াই করেছি, মনে হয় কোচ হিসেবে সবচেয়ে গর্বের বিষয় এটিই। আপনি ম্যাচ জিতবেন, আপনি ম্যাচ হারবেন, কিন্তু এটা সবচেয়ে ভাল লাগার ছিল।’
দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে এই সিরিজটা যেন খুব দ্রুতগতির এক স্লাইডশো হয়ে দাঁড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়ার কাছে, ‘এটা অবিশ্বাস্য একটা সিরিজ যাচ্ছে, কিছু ঘটনা সবকিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। আমাদের চ্যালেঞ্জ হবে সবকিছুর পর এই দারুণ সিরিজে ফিরে আসার চেষ্টা করা, ছেলেদের জন্য এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তারা সবকিছুই করবে নিজেদের সাধ্যমত।’
অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের সময়টাই বড় অবিশ্বাস্য হয়ে গেছে এখন!