• দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ
  • " />

     

    'এই অনুতাপে সারাজীবন পুড়বেন' ব্যানক্রফট

    'এই অনুতাপে সারাজীবন পুড়বেন' ব্যানক্রফট    

    স্টিভেন স্মিথ সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন বাবার সঙ্গে। তারও আগে আজ পার্থে নিজের সংবাদ সম্মেলনে ক্যামেরন ব্যানক্রফট এসেছিলেন মাকে সঙ্গে করে। বল টেম্পারিংয়ের দায়ে নয় মাস ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার পর কথা বললেন তিনিও। স্মিথের মতো কান্নায় ভেঙে না পড়লেও নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত ব্যানক্রফট পুড়ছেন আফসোসে। 
    কেপটাউন টেস্টের তৃতীয় দিন ওই ঘটনার পরই সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন স্মিথ ও ব্যানক্রফট। বল টেম্পারিংয়ের কথা স্বীকার করলেও তখন জানিয়েছিলেন মাধ্যম ছিল টেপ। কিন্তু পরে জানা গেছে সহ-অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের পরামর্শে ও অধিনায়ক স্মিথের সম্মতিতে স্যান্ডপেপার দিয়ে বল ঘষেছিলেন তিনি। কেপটাউনের সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা বলেছিলেন, সেটাও স্বীকার করে নিয়েছেন আজ। 

    'হ্যাঁ, আমি মিথ্যা বলেছিলাম। স্যান্ডপেপারের ব্যবহার অস্বীকার করেছিলাম- ঘটনার অাকস্মিকতায়- আমি সেটার জন্য খুবই দুঃখিত। আমি ক্রিকেট খেলাটাকে ভালোবাসি, আর খেলার মাঠে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারার চেয়ে গর্বের কিছু আমার কাছে নেই। আমি খুবই হতাশ আর আমার নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত। যারা আমার দিকে চেয়ে থাকতো, বিশেষ করে শিশুরা, আমি তাদের কাছে ক্ষমা চাইছি', আজ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন ব্যানক্রফট। 

    'এমন একটা মুহুর্ত এখনও যায়নি, যখন আমি নিজের এই কাজ নিয়ে আফসোস করিনি। সময়কে পেছনে নিয়ে যেতে পারতাম যদি, যদি ঠিক কাজটা করতে পারতাম! বাকি জীবন আমার এই আফসোস নিয়েই থাকতে হবে। আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, আমি দুঃখিত। কিন্তু দিনশেষে কর্মটা আমারই, আর ফলটাও আমার। কিন্তু এসব আমার নীতি-নৈতিকতাকে সমর্থন করে না, আমি এভাবে বেড়ে উঠিনি। এই কাজের জন্য আমি লজ্জিত ও দুঃখিত।' 

    ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ অবশ্য পাচ্ছেন ব্যানক্রফট। তবে সেটা নিয়ে এখনও ভাবেননি বলেই আজ জানিয়েছেন তিনি। আপাতত নিজের হারানো সম্মানটাই ফিরে পেতে চান তিনি, তবে কাজটা যে কঠিন হবে সেটাও জানেন তিনি, 'আমার যাত্রা এখন কঠিন হবে। কিন্তু যখনই আমি এই রুম ত্যাগ করব তখন থেকেই আমার যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে, হারানো সম্মান ফিরে পেতে।' 

    'আমার জন্য এটা একটা জেগে ওঠার ডাক ছিল। আমি বুঝতে পেরেছি ব্যাগি গ্রিন ক্যাপ পরতে পারাটা কতো সৌভাগ্যের ছিল। অস্ট্রেলিয়ার সবাইকে হতাশ করেছি, এটা নিয়ে আমি মোটেই গর্বিত নই। এই ক্ষত শুকাতে সময় লাগবে, আমার সম্মান ফিরে পেতেও সময় লাগবে অনেক।' 

    দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চতুর্থ টেস্টের আগে অস্ট্রেলিয়া দলে তার জায়গায় নেওয়া হয়েছে নতুন খেলোয়াড়। দলের জায়গাটা লড়াই না করে ছেড়ে দিতে হয়েছে ব্যানক্রফটকে। সেটা নিয়েও আফসোস আছে, কিন্তু তার সবচেয়ে বড় আফসোসটা অন্য জায়গায়। ওয়ার্নারের সিদ্ধান্তটা প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ ছিল তার। সেটা না করেই কেন হুট করে রাজি হয়ে গেলেন, সেই আফসোসে পুড়ছন এখনও, 'আমি কখনও বল টেম্পারিংয়ের সাথে যুক্ত ছিলাম না, কখনই না। এটা পুরোপুরি আমার নীতির বাইরে, যেটার ওপর ভর করেই আমি একজন মানুষ ও খেলোয়াড়। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটে এমনটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।'   

    'আমার কাছে সুযোগ ছিল নিজের নীতির ওপর ভরসা করার। কিন্তু আমি সেটা করিনি। সবচেয়ে বিব্রতকর বিষয় এটাই। এরপর থেকে যা হয়েছে তার সবকিছুর দায় তাই আমাকেই নিতে হবে। পুরো ব্যাপারটা অনেক বড়, কারণ এটা যেভাবে করা হয়েছিল সেটা একেবারেই আইনবিরুদ্ধ। ওরকম একটা জিনিস নিয়ে ক্রিকেটবিশ্বের সামনে যাওয়া খেলার চেতনার মধ্যে পড়ে না, ক্রিকেটটা এভাবে খেলতে হয় না', নিজেকেই যেন নিজে শুধরে দিলেন ব্যানক্রফট। তবে পুরোটা শুধরাতে অন্তত নয় মাস অপেক্ষা করতে হবে তাকে এখন।