• দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ
  • " />

     

    অনন্তকাল ব্যাটিংয়ের পর দঃ আফ্রিকার ৭ উইকেটের অপেক্ষা

    অনন্তকাল ব্যাটিংয়ের পর দঃ আফ্রিকার ৭ উইকেটের অপেক্ষা    

    জোহানেসবার্গ টেস্ট, ৪র্থ দিনশেষে 
    দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস ৪৮৮ (মার্করাম ১৫২, বাভুমা ৯৫*, ডি ভিলিয়ার্স ৬৯, কামিন্স ৫/৮৩, লায়ন ২/১৮৩) ও ২য় ইনিংস ৩৪৪/৬ (এলগার ৮১, ডু প্লেসি ১২০*, কামিন্স ৪/৫৮, লায়ন ২/১১৬)
    অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস ২২১ (পেইন ৬২, কামিন্স ৫০, খাওয়াজা ৫৩, ফিল্যান্ডার ৩/৩০, রাবাদা ৩/৫৩, মহারাজ ৩/৯২) ও ২য় ইনিংস ৮৮/৩* (বার্নস ৪২, হ্যান্ডসকম্ব ২৩*, মরকেল ২/১৮, মহারাজ ১/৪৫)
    জয়ের জন্য ৭ উইকেটে আরও ৫২৪ রান প্রয়োজন অস্ট্রেলিয়ার 


    দক্ষিণ আফ্রিকা যেন ব্যাটিং করতেই থাকল, করতেই থাকল। অনন্তকাল ধরে। অন্তত অস্ট্রেলিয়ার সেরকমই অনুভূত হওয়ার কথা। ফ্যাফ ডু প্লেসির নয় আঙুলের সেঞ্চুরি, এলগারের না পাওয়া সেঞ্চুরি, বাভুমা, ফিল্যান্ডারের ক্যামিও- দক্ষিণ আফ্রিকা থামলো লিডটা ৬১১ রান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার পর, অনন্তকাল পর। অবশ্য রাবাদা-মরকেলের সঙ্গে ফিল্যান্ডারের চোট দক্ষিণ আফ্রিকাকে বাধ্য করেছে এমন ব্যাটিং করতে, তবে বোলিংয়ে এসে ব্যথায় ককিয়ে উঠলেও জোড়া সাফল্য পেয়েছেন মরকেল, আর মহারাজ পেয়েছেন একটি। রাবাদা নতুন বলে আলো ছড়িয়েছেন, আবার ফিল্যান্ডারের বলে একটা ক্যাচও ছেড়েছেন। আলোকস্বল্পতায় খেলা আগেই শেষ হওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়া করতে পেরেছে ৮৮ রান, জয়ের জন্য প্রয়োজন আরও ৫২৪ রান। ভাবগতিক যেরকম, অনন্তকালও যেন যথেষ্ট হবে না অস্ট্রেলিয়ার জন্য, দক্ষিণ আফ্রিকাকে জয়বঞ্চিত করতে। 

    দিনের শেষের মতো শুরুতেও ছিল আঁধারের খেলা। এর মাঝেই দক্ষিণ আফ্রিকানদের ব্যাটিংয়ের ধরন প্রকাশ পাবে একটি তথ্যে- দিনে নিজের প্রথম রান করতে এলগার খেলেছেন ৬৫ বল, আর সব মিলিয়ে ক্রিজে ছিলেন ৯১ বল। অবশ্য এরপরই বিপরীতমুখি ব্যাটিং করেছেন তিনি, ৮১ রান করে আউটও হয়েছেন ন্যাথান লায়নকে তুলে মারতে গিয়ে, পেছনে দৌড়ে ভাল ক্যাচ নিয়েছেন শন মার্শ। এর আগে লায়নের অফস্টাম্পের বাহির ঘেঁষা চ্যানেলের বলে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন বেশ ধৈর্য্য-সহকারেই। এলগারের পর কুইন্টন ডি ককও ফিরেছেন দ্রুতই, রিভিউ নিজেকে বাঁচাতে পারেননি কামিন্সের বলে এলবিডাব্লিউ হওয়া থেকে।

     

    তবে দক্ষিণ আফ্রিকান ইনিংসে আলাদা করে ছিলেন ফ্যাফ ডু প্লেসি। ডানহাতের তর্জনিতে কালই চোট পেয়েছিলেন চ্যাড সেয়ার্সের বলে, আজ আবার পেয়েছেন প্যাট কামিন্সের বলে। ফিজিও এসে আরেকদফা ব্যান্ডেজ পরিয়ে গেছেন, তবে চোট পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ককে অস্ট্রেলিয়া আটকাতে পারেনি ফর্মখরা কাটাতে। শেষ ১৩ ইনিংসে দুইটি মাত্র ফিফটি ছিল তার, এই ইনিংসের আগে এই সিরিজে গড় ছিল ৯.১৭। সেই তিনিই করলেন সেঞ্চুরি, হ্যাজলউডের বলে থার্ডম্যানে সিঙ্গেল নিয়ে সেটা পূরণের পর তার উদযাপনে মিশে ছিল একরাশ স্বস্তি! 

    ১২০ রানে কামিন্সের বলে স্লিপে হ্যান্ডসকম্বকে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। টেমবা বাভুমা শুরুতেই বেঁচেছেন রিভিউ নিয়ে, ফিল্যান্ডারের সঙ্গে এরপর রান তুলেছেন দ্রুতগতিতে। প্রথম ইনিংসে ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরিবঞ্চিত হয়েছিলেন, ডু প্লেসি সেটার আক্ষেপ মেটানোর সুযোগও করে দিবেন কিনা- হয়তো প্রশ্ন উঠেছিল এমনও। চা-বিরতির পর অবশ্য আর অপেক্ষা করেননি ডু প্লেসি, ডিক্লেয়ার করেই দিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার সামনে তখন লক্ষ্য ৬১২ রান। এর আগে চতুর্থ ইনিংসে ৫০০ এর বেশি রান করার ঘটনাই আছে একটি, ডারবানে ১৯৩৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই ৬৯৬ রানের লক্ষ্যে ৫ উইকেটে ৬৫৪ রান করেছিল ইংল্যান্ড। সেই বিখ্যাত টাইমলেস টেস্টে, জাহাজ ধরার তাড়া ছিল বলে যেবার না খেলেই চলে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। 

    অস্ট্রেলিয়ার জন্য জাহাজ অপেক্ষা করে নেই, দক্ষিণ আফ্রিকায় এসে তাদের কাছেই ১৯৭০ সালের পর প্রথমবার সিরিজ হারার জন্য অপেক্ষা করে আছে বরং। ম্যাট রেনশ, উসমান খাওয়াজা ও জো বার্নস- তিনজনই হয়েছেন এলবিডাব্লিউ। 

    রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে ক্যারিয়ারে বাঁহাতিদের কম বিপদে ফেলেননি মরকেল, তারই সর্বশেষ শিকার রেনশ, সিমে পড়ে ঘুরে আসা বলে ব্যাট লাগানোর সময়টাই পাননি। আর বার্নস ফুললেংথের বলে ব্যাট লাগাতে হয়েছেন ব্যর্থ, যে ফুললেংথে বোলিংটা অনেক সাধনা করে রপ্ত করেছেন মরকেল। বার্নস অবশ্য বেশ লড়াই করেছেন, আউট হওয়ার আগে করেছেন ৪২। এর মাঝে মহারাজের ভেতরের দিকে ঢুকতে যাওয়া বলে স্টাম্পের বাইরে গিয়ে ছেড়ে দিয়ে এলবিডাব্লিউ খাওয়াজা, আম্পায়ার নাইজেল লংয়ের মতে শট অফার করেননি তিনি, অবশ্য সেটা মানতে পারছিলেন না বলে রিভিউও চেয়ে বসেছিলেন খাওয়াজা। 

    তবে যেদিন অস্ট্রেলিয়াকে অনন্তকাল ফিল্ডিং করতে হয়, যেদিন চোটগ্রস্ত মরকেলকে সামলাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের ব্যাটসম্যানদের, সেদিন খাওয়াজার এমন রিভিউ সাধারণত কাজে দেবে না, এ তো জানা কথাই! শেষদিনে অজানা কিছু জানাতে পারবে অস্ট্রেলিয়া? দেখাতে পারবে অদেখা কিছু? তেমন কিছু হলে শুধু 'মিরাকল' শব্দটা যথেষ্ট হবে না- এটা কিন্তু জানা কথাই!