১০০ বলের ক্রিকেট: সংশয়ের সাথে সম্ভাবনাও
‘ কী রে ওভার শেষ হয়না কেনও?’, ‘কয়জন মিলে এক ওভার করে রে!’, গ্যালারি থেকে গুঞ্জনটা শোনা গেল বেশ কয়েকবার।একবারে আনকোরা ফরম্যাট বলেই কিনা ১০০ বলে ক্রিকেট নিয়ে কিছু প্রশ্ন থেকে গেছে দর্শকের। ওয়াইড, নো বল না হলেও এক ওভারে ৬ বল পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বল করছেন বোলার। কখনো বা ওভারের মাঝপথে ইনজুরি সংক্রান্ত কারণ ছাড়াই বোলার পরিবর্তন করছেন অধিনায়ক! প্রস্তাবটা ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে আসলেও শুরুটা করল বাংলাদেশ, কক্সবাজারে চলছে ১০০ বলের ওয়ালটন মাস্টার্স ক্রিকেট কার্নিভাল। কেমন হলো এই ফরম্যাট? ক্রিকেটে এর প্রভাবটাই বা কী হবে? সবকিছু মিলিয়ে কক্সবাজারে আসা বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটাররা কিন্তু এই ফরম্যাট নিয়ে দারুণ আশাবাদী।
টি-টোয়েন্টির আবির্ভাবে যেমন বদলে গেছে ক্রিকেট, ১০০ বলের ফরম্যাটের প্রভাবটাও অনেকটা সেরকম হবে বলে মানছেন আতাহার আলী খান। এই ফরম্যাট নতুন দর্শক টানবে, ইংল্যান্ডের অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস, জো রুটের মতো তিনিও এটাই বিশ্বাস করেন, ‘ক্রিকেটে নতুনত্বের দরকার আছে। যখন টি-টোয়েন্টি এলো তখনও অনেক কথাই হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত এটা টিকেই গেলো তাই না? যারা অনেক সময় ধরে চলা ক্রিকেট দেখতে আগ্রহী হন না, তারা এই ফরম্যাট দেখতে অবশ্যই আসবেন।হংকংসহ অনেক দেশেই সিক্স-এ সাইড ক্রিকেট হয়েছে, সেটাও কিন্তু অনেক জনপ্রিয়।’
১০০ বলের ক্রিকেটকে অন্য ফরম্যাট থেকে আলাদা করেছে ১০ বলের ওভার। ক্রিকেট এখন ‘ব্যাটসম্যানস গেমস’ হলেও এই ১০ বলের ওভার বোলারদের বাড়তি সুবিধা দেবে বলেই ধারণা আতাহার আলীর, ‘আধুনিক যুগের ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানরা একটু হলেও বাড়তি সুবিধা পায়। একজন বোলার যদি এই ১০ বলের ওভারকে কাজে লাগাতে পারে, তাহলে সে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারবে। বোলিং করা দলের জন্য তাই এই ওভারটা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জন্য এটা একটা প্লাসপয়েন্টও বটে।’
যে ১০ বলের ওভার নিয়ে এত কথা, প্রথম বোলার হিসেবে সেই ওভারটি করার সুযোগ হয়েছিল রাজশাহী মাস্টার্সের এনামুল হক মণির। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে সিলেট সিক্সার্স মাস্টার্সের বিপক্ষে ইনিংসের ১০ম ওভারে বোলিংয়ে এসে ওভার করেন। ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়ে তাই উচ্ছ্বসিত মণি, ‘আসলে আমি জানতাম না যে আমার ওভারটায় রেকর্ড হয়েছে! প্রথম বোলার হিসেবে ১০ বলের ওভার করেছি জেনে ভালোই লাগছে। বেশি বল করতে সবাই পছন্দ করে, এক্সট্রা দেওয়া ছাড়া আর কী। এই ওভার নিয়ে ম্যাচের আগে তেমন পরিকল্পনা ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত ঠিক সময়েই কাজে লাগানো গেছে বিশেষ এই ওভারকে।’
নতুন ফরম্যাটের ক্রিকেট নিয়ে আশাবাদী মণিও, 'নতুন যেকোনো কিছুই প্রথমে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়, এই ফরম্যাটটাও হচ্ছে। তবে আশা করি সবাই এতে আনন্দ পাবে। টি-টোয়েন্টির মতো এটাও জনপ্রিয়তা পাবে।'
রোমাঞ্চের পাশাপাশি আছে শঙ্কাও। ১০০ বলের ক্রিকেট কী মূল ধারার ক্রিকেটকে ক্ষতির মুখে ফেলবে? সাবেক ক্রিকেটার জাভেদ ওমর বেলিম তাই সবাইকে ‘সতর্ক’ থাকতে বললেন এই ফরম্যাট নিয়ে, ‘ফরম্যাটটা অবশ্যই ক্রিকেটে নতুনত্ব আনবে, সবাই হয়ত অনেক আনন্দ পাবে। তবে একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে, এটা মূল ধারার ক্রিকেট নয়। টেস্ট, ওয়ানডের ওপর যেন কোনো প্রভাব না পড়ে সেই ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে আইসিসিকে। এমনিতেও টেস্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা জাগছে অনেকের মনে। ক্রিকেটকে দিন দিন সংক্ষিপ্ত করা হচ্ছে দর্শকের আনন্দের জন্য। সেটা হয়ত যুগের চাহিদার জন্য করা হচ্ছে। কিন্তু মূল ধারার ক্রিকেটটাই আসল, ওটাতেই আরও দর্শক টানার পরিকল্পনা করতে হবে।’