• ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯
  • " />

     

    ক্রিকেট বরফ গলাবে পাকিস্তান-আফগানিস্তানের?

    ক্রিকেট বরফ গলাবে পাকিস্তান-আফগানিস্তানের?    

    ১৮৯৩ সালে ‘ডুরাল্ড লাইন’ বিভক্ত করেছিল দুই দেশকে। ব্রিটিশদের করা সেই ‘ভাগাভাগিতে’ পাকিস্তান-আফগানিস্তান ভাগ হলেও দুই দেশের মানুষের মাঝে মনের মিলটা কিন্তু ভাগ হয়নি। ১৯৮০ ও ১৯৯০ দশকে যখন পাকিস্তানে ক্রিকেট উন্মাদনা তুঙ্গে, আফগানিস্তান থেকে সেখানে শরণার্থী হিসেবে যাওয়া ছেলেরাও ক্রিকেট শিখেছে পাকিস্তানের কোচ-ক্রিকেটারদের হাত ধরেই। দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের মাঝেও ছিল দারুণ মিল। কিন্তু গত এক দশকে ভারতের সাথে আফগান বোর্ডের সখ্যতা দুই দেশের বোর্ডের সম্পর্কে ফাটল ধরিয়েছে বেশ ভালোভাবেই। আজ বিশ্বকাপের ম্যাচে মুখোমুখি দুই দল। আফগান অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব আহবান জানিয়েছেন, ক্রিকেট দিয়েই দুই দেশের দূরত্বটা ঘোচাতে চান তারা। 

    সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে হামলা করলো, আফগান পশতুন শরণার্থীদের জায়গা হয়েছিল পাকিস্তানের পেশোয়ারেই। সেখানেই ক্রিকেটের হাতেখড়ি তাদের। বর্তমান আফগান অধিনায়ক গুলবাদিন নাইবও ছিলেন পাকিস্তানের শরণার্থী শিবিরে, ১১ বছর পর্যন্ত তিনি জানতেন না যে তার আসল বাড়ি আফগানিস্তানে! তার ক্রিকেট খেলার শুরুও পাকিস্তানে। মোহাম্মদ নবী, আসগর আফগান, রশিদ খানরাও খেলেছেন পেশোয়ারের ওয়াযাহরুল্লাহ ওয়াস্তি ক্রিকেট ক্লাবে। 

    আফগান ক্রিকেট বোর্ডের যাত্রার শুরু থেকেই তাদের পাশে ছিল পিসিবি। তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতাতেই ক্রিকেট দুনিয়ার একটু একটু করে এগোতে থাকে আফগানরা। কিন্তু দ্বন্দ্বের শুরু ২০১০ সালের দিকে। হোম গ্রাউন্ড হিসেবে ভারতের মাঠ ব্যবহারের অনুমতি পায় আফগানিস্তান। বিসিসিআইও আফগান বোর্ডকে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেয়, এই প্রস্তাব লুফে নেয় আফগানিস্তান। আফগানদের টেস্ট অভিষেকও হয় ভারতের মাটিতেই। 

    ভারতের এমন সিদ্ধান্তে বেজায় চটে পিসিবি। ভারতের সাথে সখ্যের পর আফগান বোর্ড ও ক্রিকেটারদের সাহায্য না করার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান। আফগান ক্রিকেটাররা যেন পাকিস্তানে বসবাস না করে ও ক্রিকেট না খেলে, সেই নির্দেশই দেওয়া হয় পিসিবির পক্ষ থেকে। 

    আফগান ক্রিকেটাররাও কম যান না, এমন ঘোষণার পর থেকে তারা সংবাদ সম্মেলনে আগের মতো উর্দুতে কথা বলেন না। ভারত প্রসঙ্গ আসলেই তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন তারা, সেই স্তুতিতে থাকে না পাকিস্তানের কথা। গত এশিয়া কাপে আসিফ আলিকে আউট করে ‘আফ্রিদি স্টাইল’ উদযাপন করেছিলেন রশিদ। পাকিস্তানের বহু মানুষের আপত্তি ছিল এতে। তারা বলেছিলেন, যে রশিদ খান একটা সময় আফ্রিদিকে ‘আইডল’ মানতেন, তিনি কীভাবে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানকে আউট করে আফ্রিদির উদযাপনকে নকল করেন? 

    সব মিলিয়ে মাঠের বাইরে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্কটা এখন যথেষ্ট শীতল। বিশ্বকাপের ম্যাচ দিয়েই এই সম্পর্কে উষ্ণতা আনতে চান নাইব, ‘ক্রিকেটই আসলে দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে পারে। শুধু পাকিস্তান নয়, ভারত,  শ্রীলংকা ও অন্যদের সাথেও আমরা খেলা দিয়ে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।’

    পাকিস্তানের কাছেই যাদের ক্রিকেটের হাতেখড়ি, আজ সেই পাকিস্তানের সেমিতে যাওয়ার স্বপ্নটা কি ভেঙে দেবে আফগানরা? লিডসে যদি তেমন কিছু হয়, দুই দেশের সম্পর্কটা হয়ত শীতলই থেকে যাবে! 

    সূত্র-এএফপি, ক্রিকইনফো