ভাগ্যই ফিরিয়ে আনল সেই হ্যান্ডসকম্বকে
সৃষ্টিকর্তা হয়তো তাঁকে একটু বাজিয়ে দেখতে চেয়েছিলেন। নয়তো দারুণ ফর্মে থেকেও শুধুমাত্র অন্য একজনকে জায়গা করে দিতে বিশ্বকাপ স্কোয়াড থেকে বাদ পড়বেন কেন পিটার হ্যান্ডসকম্ব? বাদ পড়েও ধৈর্য হারাননি, ইংল্যান্ডের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া এ দলের হয়ে পারফর্ম করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা ছিল তাঁরও। অবশেষে শন মার্শের ইনজুরিতে কপাল ফেরে হ্যান্ডসকম্বের। কিন্তু স্কোয়াডে এলেও একাদশে ঢোকা অনিশ্চিতই ছিল। এমন অবস্থায় আবার ঈশ্বর সহায় হলেন তাঁর। ইনজুরির কারণে উসমান খাওয়াজার বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়ায় দলের সাথে যোগ দেওয়ার পরপরই সেমিতে মাঠে নামার সুসংবাদ শুনেছেন হ্যান্ডসকম্ব।
প্রায় দেড় বছর পর ভারতের বিপক্ষে সিরিজে ওয়ানডে দলে ফিরেছিলেন হ্যান্ডসকম্ব। এই বছরের শুরুতে ঘরের মাটিতে তিন ম্যাচের সেই সিরিজে দুটিতেই পান ফিফটি। ফিরতি সিরিজে দিল্লীতে করেন হাফ সেঞ্চুরি, মোহালিতে পান ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিও। এই বছর ১৩ ওয়ানডেতে ৪৩ গড়ে হ্যান্ডসকম্বের রান ৪৭৯, স্ট্রাইক রেট ক্যারিয়ার সেরা ৯৮। এমন পারফর্ম করে যেকেউ বিশ্বকাপে স্কোয়াডে ডাক পাওয়ার আশা তো করতেই পারেন!
হ্যান্ডসকম্বও সেই আশা করেছিলেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে জাতীয় দলে ফেরা স্টিভ স্মিথ ছিলেন ‘অটোমেটিক চয়েস’। হ্যান্ডসকম্বের লড়াইটা তখন খাওয়াজার সাথে। বিশ্বকাপের আগে এই বছরে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রান ছিল খাওয়াজারই। এই কারণেই হয়ত তাঁর সাথে লড়াইয়েই পেরে উঠলেন না হ্যান্ডসকম্ব, জায়গা হলো না বিশ্বকাপের চূড়ান্ত স্কোয়াডে। তাঁর বাদ পড়া নিয়ে কম সমালোচনা শুনতে হয়নি নির্বাচকদের। অনেকেই বলেছিলেন, শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে না হোক, অ্যালেক্স ক্যারির বিকল্প উইকেটকিপার হিসেবে তো তাঁকে নেওয়া যেত।
বিশ্বকাপ খেলতে অস্ট্রেলিয়া দল এলো ইংল্যান্ড। হ্যান্ডসকম্বও ইংল্যান্ডে আসলেন, কিন্তু সেটা এ দলের হয়ে খেলতে। কয়েক মাইল দূরেই যখন অন্যরা যখন বিশ্বকাপ খেলছে, তখন মনের ওপর পাথর চেপেই এ দলের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন হ্যান্ডসকম্ব। চার ম্যাচে ব্যাটিং পেয়েছেন তিনবার, এর মাঝে দুইবারই ছুঁয়েছেন ফিফটি।
ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপ থেকে শন মার্শের ছিটকে যাওয়ার খবর এলো 'এ' দলের ক্যাম্পে, ডেকে পাঠানো হলো হ্যান্ডসকম্বকে। স্কোয়াডে এলেও তাঁর একাদশে জায়গা পাওয়া নিয়ে ছিল সংশয়। বাঁধা সেই স্মিথ-খাওয়াজাই! ভাগ্যের কী খেলা, ইনজুরির কারণে কয়েকদিনের মাঝে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেলো খাওয়াজারও।
ফলাফল? এখন ‘অটোমেটিক চয়েস’ হিসেবে সেমিতে খেলবেন হ্যান্ডসকম্ব, সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেছেন খোদ কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার, ‘সত্যি কথা বলতে, হ্যান্ডসকম্ব নিশ্চিতভাবেই সেমিতে খেলবে। এই সুযোগটা তাঁর প্রাপ্য। বিশ্বকাপের স্কোয়াডে তাঁর না থাকাটা ছিল খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এরপরও সে হাল ছাড়েনি, এ দলের হয়ে দারুণ পারফর্ম করেছে। তার একাদশে আসায় দলের মিডল অর্ডারে ভারসাম্য আসবে। সে দারুণ স্পিন খেলে, তাঁর ফর্মটাও ভালো যাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে তাঁকে একাদশে রাখা হবে।’
প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ম্যাচে মাঠে নামবেন, সেটাও আবার সেমিফাইনাল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে তাই উচ্ছ্বসিত হ্যান্ডসকম্ব, ‘সেমিফাইনালে খেলাটা স্বপ্নের মতো। ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে রান পেয়ে আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গিয়েছিল। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা পাইনি শুরুতে। এই বছরের পারফরম্যান্সে পাওয়া আত্মবিশ্বাসটা এখন কাজে লাগাতে চাই। তবে যারা একাদশে থাকবে না, তাদের জন্য খারাপ লাগছে। সবাই চায় খেলতে। তাদের সমর্থন একাদশের সাথেই থাকবে। আমাদের ড্রেসিংরুমটা এমনই।’
দুর্ভাগ্যের কারণে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ছিলেন না হ্যান্ডসকম্ব। সেই ভাগ্যই আবার বিশ্বকাপে ফিরিয়ে এনেছে তাঁকে। হ্যান্ডসকম্ব নিশ্চয়ই চাইবেন দারুণ কিছু করে নিজের প্রথম বিশ্বকাপ ম্যাচকে স্মরণীয় করে রাখতে।