• বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ ২০১৫
  • " />

     

    আরাধ্য জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ

    আরাধ্য জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ    

    বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, ২য় ওয়ানডে ম্যাচ, মিরপুর। 

     

    সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ

    দক্ষিণ আফ্রিকা ১৬২/১০, ৪৬ ওভার (ডু প্লেসি ৪১, ফারহান বেহার্ডিন ৩৬; মুস্তাফিজ ৩/৩৮, নাসির ৩/২৬)

    বাংলাদেশ ১৬৭/৩, ২৭.৪ ওভার (সৌম্য ৮৮*, মাহমুদুল্লাহ ৫০; রাবাদা ২/৪৫)

     

    ফলঃ বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী

     

    ম্যাচ সেরাঃ সৌম্য সরকার (বাংলাদেশ)

     


     

     

    ঢাকার অলিগলির ‘টক অব দ্য টাউন’ বলুন আর গোটা বাংলাদেশের ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ই বলুন, দেশজুড়ে আলোচনা এখন একটাই, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গাটা পাকা করে ফেলেছে বাংলাদেশ! আর সেটা যে সে কোন দলের বিপক্ষে জয় দিয়ে নয়! দ্বিপাক্ষীয় সিরিজের ‘ফেভারিট’ খ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে! যে দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়টাই বহুল আরাধ্য, সোয়া আট বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টাইগারদের দ্বিতীয় ওয়ানডে জয়!

     

    ২ ম্যাচের টি২০ সিরিজ আর তিন ম্যাচ ওয়ানডের প্রথমটিতে বাজেভাবে হেরে খানিকটা ব্যাকফুটে চলে যাওয়া মাশরাফি বাহিনী দ্বিতীয় একদিনের আন্তর্জাতিকেই ফিরে এলো দুর্দান্তভাবে। বল হাতে মুস্তাফিজ-রুবেল-নাসিরদের পর ব্যাট হাতে সৌম্য-মাহমুদুল্লাহরা টাইগারদের এনে দিলেন ৭ উইকেটের অনবদ্য জয়টি। যার সুবাদে সিরিজেও চলে এলো সমতা। বুধবার চট্টগ্রামে সিরিজ নির্ধারণী শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে দু’ দল।

     

    প্রথম দু’ ম্যাচের স্কোরকার্ড দেখলে ম্যাচ না দেখা কারও কাছে দ্বিতীয়টিকে প্রথমটিরই পুনরাবৃত্তি মনে হতে পারে। পার্থক্য কেবল এটুকুই যে প্রথমটির পরাজিত দল বাংলাদেশ আর দ্বিতীয়টির জয়ী দল বাংলাদেশ! প্রথম ম্যাচে রাবাদা ঝড়ে বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে গিয়েছিল ১৬০ রানে। আর আজ মুস্তাফিজ-রুবেল-নাসিরদের সম্মিলিত আক্রমণে প্রোটিয়াদের ইনিংস গুটিয়ে গেলো ১৬২ রানে। প্রোটিয়ারা গতদিন ১৬০ রানের বাঁধা টপকে গিয়েছিল ২ উইকেট খরচায়। আজ জয় থেকে মাত্র ৪ রান দূরে মাহমুদুল্লাহ ফিরে না গেলে ৮ উইকেটের জয়ে শোধটা হতে পারতো ষোলআনাই!

     

    টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে প্রথম আঘাতটি হানেন মুস্তাফিজুর রহমান, ইনিংসের পঞ্চম ওভারের প্রথম বলেই। খাটো লেন্থের ডেলিভারি অফসাইড দিয়ে বেরিয়ে যাবার মুখে ডি ককের ব্যাটের খোঁচায় সোজা ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দাঁড়ানো সাব্বিরের হাতে। ত্রয়োদশ ওভারের প্রথম বলে প্রোটিয়া অধিনায়ক হাশিম আমলার অফ স্ট্যাম্প আক্ষরিক অর্থেই উড়িয়ে দেন রুবেল হোসেন।

     

     

    এরপর নিয়মিত বিরতিতেই চলতে থাকে প্রোটিয়াদের উইকেট পতন। এক পর্যায়ে ১০০ রানেই ৬ উইকেট খুইয়ে বসে সফরকারীরা। ডু প্লেসির ৪১ রান ছাড়া চল্লিশের ঘর পেরোতে পারেন নি কোন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানই। শেষদিকে ফারহান বেহার্ডিনের ৩৬ রানের সুবাদে দেড়শ’ রানের মাইলফলকটুকু পেরুনো সম্ভব হয় সফরকারীদের। ৪৬-তম ওভারের শেষ বলে মাশরাফির স্লোয়ার উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটের সীমানা দড়ির সামনে নাসিরের তালুবন্দী হন ফারহান। আর সে সাথেই ১৬২ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস।

     

    সহজ লক্ষ্যটাই বাংলাদেশের জন্য কঠিন করে ফেলতে যাচ্ছিলেন আগের ম্যাচের নায়ক কাগিসো রাবাদা। ব্যক্তিগত স্পেলের প্রথম দু’ ওভারেই ফিরিয়ে দেন বাংলাদেশের দুই টপ অর্ডারকে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ব্যক্তিগত ৫ রান নিয়ে বোল্ড হয়ে ফিরে যান তামিম। এক ওভার বাদে রাবাদাকে এক চার, এক ছয় মেরে বোল্ড হয়ে ফেরেন লিটন দাসও। পুনরাবৃত্তি ছিল এখানেও। রুবেল হোসেন যেভাবে হাশিম আমলার অফ স্ট্যাম্প উড়িয়েছিলেন অনেকটা একই কায়দায় লিটনের অফ স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেন রাবাদা।

     

     

    তবে এরপর সৌম্য-মাহমুদুল্লাহ জুটির সাবলীল ব্যাটিংয়ে প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে জয়ের বন্দরপানে এগিয়ে চলে বাংলাদেশ। জয় থেকে মাত্র ৪ রান দূরে মাহমুদুল্লাহ ফিরে যান ব্যক্তিগত ৫০ রান নিয়ে, অ্যাবটের বলে আমলার হাতে ক্যাচ দিয়ে। সৌম্য শেষ অব্দি অপরাজিত থাকেন ৮৮ রান নিয়ে। জয়সূচক শেষ রানটা সৌম্য নেন ইমরান তাহিরকে স্লগ সুইপে সরাসরি সীমানাছাড়া করে, দুর্দান্ত এক ছয়ের মারে। ৭ উইকেটের জয়টা বাংলাদেশ তুলে নেয় ১৩৪ বল হাতে রেখে। ১৩ চার আর ১ ছয়ে সাজানো অনবদ্য ইনিংসটার জন্য ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার ম্যাচসেরা হন সৌম্য সরকার।