প্রান্তবদল : ২২ গজ থেকে রাজনীতির ময়দানে
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হতে যাচ্ছেন পাকিস্তানের ইমরান খান। ১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক রাজনীতিতে নেমেছেন বেশ আগে থেকেই, সবচেয়ে বড় পুরস্কারটা পেতে যাচ্ছেন অবশেষে। সম্প্রতি লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন জর্জ উইয়াহ- সাবেক ফুটবলার। ইমরানের সমান্তরালে থাকতে পারেন উইয়াহই। ইমরানের গত কয়েক বছরের প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরীফও খেলেছিলেন একটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। ক্রিকেটের ২২ গজ ছেড়ে রাজনীতির উইকেটে যারা ব্যাটিং করতে এসেছেন, বা আসতে চেয়েছিলেন- এমন কয়েকজন…..
বিরুদ্ধ কন্ডিশনে সেরা
অ্যালেক ডগলাস-হোম
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা একমাত্র বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী। ১৯২০-এর দশকে দশটি ম্যাচ খেলেছেন, মিডলসেক্সের হয়ে দুইটি ম্যাচ খেলার পাশাপাশি এমসিসির হয়ে দক্ষিণ আমেরিকা সফরেও গিয়েছিলেন তিনি। ইংল্যান্ড অধিনায়ক গাবি অ্যালেন ছিলেন ডগলাস-হোমের স্কুল সহপাঠী, অ্যালেন তাকে কার্যকরী এক সুইং বোলারই ভাবতেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ১৯৬৬ সালে এমসিসির প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন স্যার অ্যালেক ডগলাস-হোম।
১৯২৩ উইজডেনে পাবলিক স্কুলের ক্রিকেট রিভিউতে এইচ এস অ্যালথাম বলেছিলেন, ডগলাস ভেজা উইকেটে আরও ভাল ব্যাটসম্যান হয়ে উঠতেন, ওসব উইকেটে টার্ন করা বলে হুক-পুল করতে পারতেন তিনি দারুণভাবে। তার রাজনীতির ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা ছিল তেমনই- স্টিকি উইকেটে তিনি ছিলেন সেরা।
বাবার পথ ধরে...
অর্জুনা রানাতুঙ্গা
শ্রীলঙ্কার ১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ছিলেন, এরপর বাবার পথটা অনুসরণ করে রাজনীতিতে নেমেছেন অর্জুনা রানাতুঙ্গা। খেলোয়াড়ী জীবনেও ছিলেন বেশ উচ্চকিত। এমপি হওয়ার পর বাবার মতো মন্ত্রী হয়েছেন তিনিও, এর আগে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের প্রেসিডেন্টও ছিলেন।
মাতারা হারিকেনের হাতে মাতারার ভার
সনাথ জয়াসুরিয়া
বিশ্বকাপজয়ী দলে রানাতুঙ্গার সতীর্থ ছিলেন, পরে অধিনায়কের সঙ্গে জয়াসুরিয়ার যোগ দিয়েছেন সংসদেও। ২০১০ সালে মাতারা থেকে এমপি হয়েছিলেন। ২০১১ সালে রীতিমতো মন্ত্রীসভার চাপে জাতীয় দলের ইংল্যান্ড সফরের ডাকা হয়েছিল ‘মাতারা হারিকেন’-কে। সেখানেও ‘কূটনৈতিক দূরদর্শীতা’র প্রমাণ দিয়েছিলেন জয়াসুরিয়া, লর্ডসের প্রথম ওয়ানডের পরই ঘোষণা দিয়েছিলেন অবসরের।
ব্যাটসম্যানদের ত্রাস থেকে জনগণের সেবক
ওয়েস হল
যুগ ধরে ব্যাটসম্যানদের কাছে ভীতির আরেক নাম ছিলেন ওয়েস হল। ৪৮ টেস্টে ২৬.৩৮ গড়ে হল নিয়েছিলেন ১৯২টি উইকেট, পরিসংখ্যানটাও ভীতিজাগানিয়াই বটে। অবসরের পর থেকেই শুরু করেছেন রাজনীতি, বার্বাডোজের সিনেট ও হাউজ অব অ্যাসেম্বলিতে ছিলেন, ১৯৮৭ সালে হয়েছিলেন দ্বীপপুঞ্জের পর্যটন মন্ত্রী। এরপর হয়েছিলেন ‘চার্চ মিনিস্টার’, ২০১২ সালে নাইটহুড প্রাপ্তির পর থেকে তিনি ‘স্যার ওয়েস’।
রানাতুঙ্গা-জয়াসুরিয়া
শুধু এক জায়গাতেই খাটলো না মেধা!
সিবি ফ্রাই
ইংল্যান্ডের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন, ফুটবল খেলেছেন। রাগবি খেলেছেন, লং-জাম্পে বিশ্ব রেকর্ডেও ভাগ বসিয়েছিলেন একবার। আলবেনিয়ার সিংহাসনে বসারও নাকি প্রস্তাব পেয়েছিলেন একবার। চার্লস বারগেস ফ্রাইয়ের মেধার অভাব ছিল না, বলতেই হবে! এতকিছুর মাঝে রাজনীতিতেও মন দিয়েছিলেন ফ্রাই, সংসদে ঢুকতে চেষ্টা করেছিলেন তিনবার। একবারও সফল হননি, তবে প্রতিবারই তার সংসদ আর ফ্রাইয়ের মধ্যে দূরত্বটা ছিল ‘এত কাছে তবু এতদূর’!
নির্বাচনের সঙ্গে হারানো অধিনায়কত্বও
টেড ডেক্সটার
১৯৬৪ অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ছিলেন ‘স্টাইলিশ’ ডেক্সটার। তবে সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে ছেড়ে দিয়েছিলেন অধিনায়কত্ব। পরবর্তীকালের প্রধানমন্ত্রী জিম কালাহানের কাছে হেরেছিলেন নির্বাচনে। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যোগ দিয়েছিলেন ডেক্সটার, তবে ইংল্যান্ডকে আর নেতৃত্ব দেওয়া হয়নি তার- ক্রিকেটেও না, রাজনীতিতেও না।
‘কিসের নির্বাচন?’
জন আরলট
১৯৫০ এর দশকে কিংবদন্তি ধারাভাষ্যকার জন আরলট এসেক্সের ইপিংয়ে দুইবার লিবারেল পার্টির প্রার্থী ছিলেন আরলট। দুইবারই তিনি হয়েছিলেন তৃতীয়, এরপর মনযোগের পুরোটা দিয়েছিলেন ক্রিকেটেই। অবশ্য রাজনীতিতে তার পরাজয়টা বিস্ময়কর ছিল না মোটেও। প্রথমবার নির্বাচনে ‘গণসংযোগ’-এ দুইটি বাসায় গিয়েছিলেন আরলট। প্রথম বাসার লোক তাকে জানিয়েছিলেন, তিনি কট্টর লেবার পার্টির সমর্থক। আর দ্বিতীয় বাসা থেকে জবাব এসেছিল, “কিসের নির্বাচনের কথা বলছেন?”
রাজনৈতিক মিটিংয়ে টেড ডেক্সটার
তারা অনেকেই
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী
বব হক, জন হাওয়ার্ড, রবার্ড মেনজিস- অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে ক্রিকেটের সম্পর্কটা বেশ দৃঢ়ই। এদের সম্পর্কে হাওয়ার্ড নিজেই বলেছিলেন, এরা হলেন ক্রিকেটের ট্র্যাজেডি। হাওয়ার্ডের উত্তরসূরি জন কার্টিন ১৯৪৪ সালে যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে লর্ডসে গিয়ে বলেছিলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ানরা সবসময় ওই ২২ গজের জন্য যুদ্ধ করবে। লর্ডস আর এর ঐতিহ্য শুধু ইংল্যান্ডের নয়, অস্ট্রেলিয়ারও।” অস্ট্রেলিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী এডমুন্ড বার্টন উঠতি বয়সে করেছেন আম্পায়ারিং-ও।
‘পলিটিক্যাল টেস্ট’
নাঈমুর রহমান দূর্জয়
বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক ছিলেন এই অলরাউন্ডার। খেলেছেন ৮টি টেস্ট, ২৯টি ওয়ানডে। এরপর নেমেছেন রাজনীতিতে, ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে মানিকগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্যও হয়েছেন তিনি।
খাদ থেকে উঁচুতে
মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন
ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন নাম লিখিয়েছিলেন রাজনীতিতে। ভারতের ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির হয়ে নির্বাচিতও হয়েছিলেন আজহার। একই পার্টি থেকে দাঁড়িয়েছিলেন সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ কাইফ, তবে হেরেছিলেন তিনি ২০১৪ সালে। তবে তার দুই বছর আগেই ভারতের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সদস্য হয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকার।
সাবেক ভারতীয় ওপেনার নভজ্যোত সিং সিধু ২০০৪ সালে অমৃতসার থেকে নির্বাচনে জিতেছিলেন বিজেপির হয়ে। রাজনীতিতে বেশ সফলই বলতে হবে সিধুকে, ২০০৭ ও ২০০৯ সালেও পাঞ্জাব থেকে জিতেছিলেন তিনি।