• " />

     

    মেশিনের নাম হেরাথ

    মেশিনের নাম হেরাথ    

    চোখ রাঙ্গানোর সেই ত্রাস নেই, নেই অপর প্রান্তের সেই বাঁহাতি সুইংয়ের সৈনিক। আরেক ‘ভরসা’, শ্রীলঙ্কার বোলিং ‘সেনসেশন’ এখন আর টেস্ট খেলেন না, তাঁর সব আগ্রাসন সীমিত ওভারেই! আছেন একজন। একজন শ্রমিক। একজন বোলিং মেশিন।

     

     

    চামিন্দা ভাস অবসর নিয়েছেন সেই ২০০৯ সালে, মুত্তিয়া মুরালিধরণ চলে গেছেন ২০১১ সালে। আর লাসিথ মালিঙ্গা শেষ টেস্ট খেলেছেন ২০১০ সালে।

     

     

    শ্রীলঙ্কা দলের বোলিংয়ের ভার রঙ্গনা হেরাথের ওপর, তাও আজ কয়েক বছর হতে চললো! বাঁহাতি অর্থো-ডক্স, বৈচিত্র বলতে ডানহাতিদের জন্য দ্রুত ভেতরে ঢোকা এক ধরণের ডেলিভারি। রঙ্গনা হেরাথ তো আসলে সেইজন, ঘন্টার পর ঘন্টা, সেশনের পর সেশন, ওভারের পর ওভার বোলিং করে যাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে যাঁর। একই লাইন-লেংথে বল করে যাচ্ছেন, ব্যাটসম্যান কখন একটু আগে বা পরে খেলেন, একটু ভুল করেন, সেই ক্ষণের অপেক্ষায়!

     

     

     

     

     

    মুরালি যতদিন ছিলেন, ছায়া হয়ে ছিলেন তাঁর। তখন হেরাথের আসল কাজ উইকেট পাওয়া নয়, ছিল উইকেট পেতে মুরালিকে সাহায্য করা। মুরালির সঙ্গে খেলেছিলেন ১৫টি টেস্ট, উইকেট পেয়েছিলেন ৪৫.৪৬ গড়ে মাত্র ৩৯টি। একদিক থেকে রান বেঁধে রাখা। যাতে সেই চাপ কাজে লাগিয়ে মুরালি উইকেট পান। মুরালি চলে গেলেন, রয়ে গেলেন হেরাথ।

     

     

    দায়িত্ব বেড়ে গেল, হেরাথের কাঁধও চওড়া হলো।

     

     

    মুরালি ছাড়া খেলেছেন ৪৬টি টেস্ট। ২৩১টি উইকেট পেয়েছেন এ ম্যাচগুলোতে, ২৭.১৭ গড়ে!

     

     

    টেস্টে হেরাথের ‘জন্ম’ আসলে তিনবার। অভিষেক ১৯৯৯ সালে, তিনটি টেস্ট খেলার পরই বাদ পড়েন। ফিরে আসেন ২০০৪ সালে, এবার ৯ টেস্টের জন্য। দুইধাপে খেললেন ১২টি টেস্ট। উইকেট পেয়েছিলেন ৩৫টি, ৩৪.৪০ গড়ে।

     

     

    দলে ফেরেন আবার ২০০৯ সালে, নিয়মিত খেলছেন মূলত তখন থেকেই। তৃতীয়বার সুযোগ পেয়ে যেন বদলে গেলেন হেরাথ, ৪৯ ম্যাচে ২৯.১৩ গড়ে এখন পর্যন্ত পেয়েছেন ২৩৫ উইকেট।

     

     

    ক্যারিয়ারে জিতেছেন ৩৯.৩৪ শতাংশ ম্যাচ, তবে নিজের উইকেটের ৪৭.৭৭ শতাংশই পেয়েছেন এ ম্যাচগুলোতে। ম্যাচ জেতানো চতুর্থ ইনিংসে বল করার সুযোগ পেয়েছেন ১৩ বার। উইকেট নিয়েছেন ৫৬টি। আর হেরে যাওয়া ম্যাচে ১২ ইনিংসে উইকেট মাত্র ১৪টি। মানেটা পরিস্কার, হেরাথের ভাল বোলিংটা চতুর্থ ইনিংসেও জরুরী শ্রীলঙ্কার!

     

     

    নিজের প্রিয় ভেন্যুগুলোর তালিকার সবার ওপরে নিশ্চয়ই গলকেই রাখবেন হেরাথ, ক্যারিয়ারের ২২টি পাঁচ উইকেট-শিকারের ৭টিই যে এই ভেন্যুতে। যার সর্বশেষটিতে পুড়ে ছাড়খার ভারত! তিনদিন দাপট দেখিয়েও ভারত গল টেস্ট হারলো তো মূলত হেরাথের বোলিংয়ের কাছেই!

     

    ৬১ টেস্টের ক্যারিয়ারের ম্যাচসেরা হয়েছেন ৭বার। তবে শ্রীলঙ্কার জয়ে অবদান রেখেছেন তো আরও অনেকবার। ঠিক গল টেস্টের মতো। দ্বিতীয় ইনিংসে মহাগুরুত্বপূর্ন লিড এনে দেওয়ায় ম্যাচসেরা দীনেশ চন্ডিমাল, কিন্তু প্রায় অসম্ভব এক জয়কে সম্ভব করার অনেক কৃতিত্বই তো এই বাঁহাতি ভদ্রলোকের। এই বোলিং মেশিনের। এই শ্রীলঙ্কান ‘শ্রমিক’-এর!

     

     

    হেরাথ মুদিয়ানসেলাগে রঙ্গনা কীর্থি বান্দারা হেরাথ। নামটা লম্বা।

     

    বয়স ৩৭ পেরিয়ে গেছে। নামের মতোই ক্যারিয়ারটাও আরো বড় হোক, শ্রীলঙ্কার চাওয়া নিশ্চয়ই এটাই!