মুশফিক ১৪৪, শ্রীলঙ্কা ১২৪
এশিয়া কাপ, দুবাই
বাংলাদেশ ২৬১, ৪৯.৩ ওভার (মুশফিক ১৪৪, মিঠুন ৬৩, মালিঙ্গা ৪/২৩)
শ্রীলঙ্কা ১২৪ অল-আউট, ৩৫.২ ওভার
বাংলাদেশ ১৩৭ রানে জয়ী
মুশফিকুর রহিমের ক্যারিয়ার-সর্বোচ্চ শুধু নয়, ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংসে ব্যাটিংয়ে দারুণ প্রত্যাবর্তন, এরপর মাশরাফির নেতৃত্বে সম্মিলিত বোলিং আক্রমণের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে শ্রীলঙ্কাকে এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। ৭৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলা শ্রীলঙ্কা অল-আউট হয়েছে ১২৪ রানে, বাংলাদেশ তাদের হারিয়েছে রেকর্ড ১৩৭ রানে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বড় ব্যবধানে জয়।
গল্পটা তাই মুশফিকের, গল্পটা বোলারদের। এবং হ্যাঁ, গল্পটা তামিম ইকবালের অসম সাহসের।
অথচ গল্পটা হতে পারতো লাসিথ মালিঙ্গার স্মরণীর প্রত্যাবর্তনের।
১ রানে ২ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ, লিটন ও সাকিব ফিরেছিলেন মালিঙ্গার বলে। মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এলো তামিম ইকবালের এশিয়া কাপ শেষ (আদৌ তা নয়) করা চোট। কার্যত টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে দুই ওভারের ভেতরই। মুশফিক-মিঠুনের ১৩১ রানের জুটি এরপর উলটো চাপে ফেলেছিল শ্রীলঙ্কাকে, আবার তাদের ফিরিয়ে আনেন মালিঙ্গা।
শেষ পর্যন্ত চারে নেমে ৬৩ রানে মালিঙ্গাকে তুলে মারতে গিয়ে ড্রেসিংরুমে উঠতে হয়েছে মিঠুনকে। অ্যামিলা অ্যাপোনসোকে স্লগ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে বিপদ বাড়িয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। মালিঙ্গার শর্ট বলে পুলের মতো করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন মোসাদ্দেক, মেহেদি-রুবেল-মুস্তাফিজকে নিয়ে খেলে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন মুশফিক।
দুবাইয়ের এ উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন নয়, তবে ছিল বাড়তি গরম। সেঞ্চুরির আগে থেকেই ক্র্যাম্প হচ্ছিল মুশফিকের। শুধু ক্র্যাম্প নয়, পাঁজরে চোট ছিল তার, পরে তো নামেননি ফিল্ডিংয়েও। তবে বল-হিটিংয়ে এদিন তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। ১ রানে ২ উইকেট পড়ার পর নেমেছিলেন, বাংলাদেশকে শেষ পর্যন্ত টেনেছেন ২৬১ রান পর্যন্ত। করেছেন ৬ষ্ট সেঞ্চুরি, গড়েছেন ক্যারিয়ারসেরা ১৪৪ রানের ইনিংস। মুশফিক-মিঠুনের জুটিতে অবদান ছিল শ্রীলঙ্কার পিচ্ছিল ফিল্ডিংয়েরও। দুজনকেই জীবন দিয়েছেন তারা।
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস মিস করেছেন প্রধান স্পিনার আকিলা দনঞ্জয়াকেও। দিলরুয়ান পেরেরাকে দিয়ে ৩ ওভার বোলিং করিয়েছেন, সাহায্য নিতে হয়েছে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার।
তবে বাংলাদেশ বা মুশফিকের ইনিংস থামতে পারতো আরও আগেই।
একটু আগে তামিমের প্লাস্টার মোড়ানো হাতটা ঝুলছিল স্লিংয়ে। তার এশিয়া কাপ শেষ, এ ম্যাচে আবার খেলা তো দূরের কথা। ৯ম ব্যাটসম্যান হিসেবে মুস্তাফিজুর রহমান আউট হলেন, অথচ মুশফিকুর রহিম উঠছিলেন না! তামিম নামছেন ব্যাটিংয়ে! এটা এমন এক মুহুর্ত, যখন ক্রিকেট জীবনকে ছাপিয়ে যায়! তামিম নামার পর একাই আরও ৩২ রান তুললেন মুশফিক, স্কোরকার্ডে না লেখা থাকলেও ওই প্রতিটি রানে অবদান ছিল তামিমের। তামিম এদিন ২ রানে অপরাজিত ছিলেন না, তামিমের এমন ব্যাটিংকে ধরে রাখার মতো স্কোরকার্ডই তো নেই!
তবে সব চাপ নিজের ভাঙা বাঁহাতে করে যেন নামলেন এরপর তামিম। মুশফিক সে সাহসের যোগ্য প্রতিদানই দিলেন বটে!
মুশফিক-তামিমের এনে দেওয়া আত্মবিশ্বাসে যেন এরপর শুধুই উড়লেন বোলাররা। গোটা ইনিংসে সব বোলার মিলিয়ে দিয়েছেন মাত্র একটি এক্সট্রা, কতোটা নিয়ন্ত্রিত ছিলেন, এ পরিসংখ্যানই যেন সেটা বুঝিয়ে দেয়!
কুশাল মেন্ডিসকে এলবিডব্লিউ করে শুরুটা করেছিলেন মুস্তাফিজ, বাংলাদেশ যে উইকেট পেয়েছে রিভিউ নিয়ে। প্রথম ওভারেই চার-ছয় মারা উপুল থারাঙ্গা মাশরাফির বল ডেকে এনেছেন স্টাম্পে, ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকেও এলবিডব্লিউ করেছেন মাশরাফিই।
কুশাল পেরেরার ঘাতক মেহেদি, ৩৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন ধুঁকছে শ্রীলঙ্কা। ম্যাথিউস ও শনাকা সেটা মেরামতের চেষ্টা করেছিলেন, তবে শনাকার রান-আউটই যেন বলে দিল, দিনটা শ্রীলঙ্কার নয়। নিজের প্রথম বলে ম্যাথিউসকে ফিরিয়েছেন রুবেল, থিসারা পেরেরা বড় শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন মেহেদির বলে।
পেরেরা-লাকমালের ইনিংস সর্বোচ্চ ২৭ রানের জুটি ভেঙেছেন মুস্তাফিজ, এরপর মোসাদ্দেক ও সাকিবের বলে শেষ হয়েছে শ্রীলঙ্কার ইনিংস।