ভারতকে ভড়কে দিয়েও হংকংয়ের হাহাকার
এশিয়া কাপ, গ্রুপ ‘এ’
দুবাই
ভারত ২৮৫/৭, ৫০ ওভার (ধাওয়ান ১২৭, রাইডু ৬০, কিঞ্চিত ৩/৩৯, এহসান ২/৬৫)
হংকং ২৫৯/৮, ৫০ ওভার (নিজাকাত ৯২, আনশুমান ৭৩, খলিল ৩/৪৮, চাহাল ৩/৪৬)
ভারত ২৬ রানে জয়ী
হংকংয়ের প্রথম উইকেট পড়ার পর ভারতীয় সমর্থকদের উল্লাসটাই বলছিল অনেক কিছু। সে জুটিই যে কাঁপিয়ে দিয়েছিল ভারতকে! নিজাকাত খান ও আনশুমান রাথের ১৭৪ রানের ওপেনিং জুটি তাদের ওয়ানডে ইতিহাসে যে কোনও উইকেটেই সর্বোচ্চ, সেটাই কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল ভারতের। ২৮৬ রানের লক্ষ্যে হংকংকে বিশাল অঘটনের স্বপ্ন দেখানো সে জুটি ভেঙেছেন কুলদিপ যাদব, ভারতের যেন প্রয়োজন ছিল সেটাই। শেষ পর্যন্ত ২৬ রানে জিতে হংকং-হুমকি কাটিয়ে উঠেছে ভারত, দুই ম্যাচই হেরে তাই বিদায় নিতে হচ্ছে হংকংকে। আর এক ম্যাচ জিতেই সুপার ফোর নিশ্চিত ভারতের, তবে পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯ তারিখের ম্যাচে রোহিত শর্মাদের লড়াই করতে হবে ক্লান্তির সঙ্গেও! আক্ষরিক অর্থেই যে হংকং ঘাম ঝড়িয়ে দিয়েছে ভারতের!
পাকিস্তানের সঙ্গে আগের ম্যাচের ভুলগুলো মনে রাখবেন না, এ কারণে যেন শুরুর সিদ্ধান্তটাও বদলে ফেললেন হংকং অধিনায়ন আনশুমান রাথ। টসে জিতে ভারতকে আগে পাঠালেন ব্যাটিংয়ে। তার বোলাররা দেখালেন দারুণ কিছুই, শিখর ধাওয়ানের সেঞ্চুরি ও আম্বাতি রাইডুর ফিফটির পরও শেষ দশ ওভারে ভারতকে চেপে ধরে ২৮৫ রানের বেশি করতে দিল না হংকং।
হংকংকে এরপর স্বপ্নালু শুরু এনে দিলেন দুই ওপেনার। অভিষিক্ত পেসার, চোট কাটিয়ে ফেরা মূল সুইং বোলার, দুই রিস্টস্পিনার, আন-অর্থোডক্স অ্যাকশনের পার্ট-টাইমার- সবাইকে দিয়ে চেষ্টা করিয়েও উইকেট মিলছিল না ভারতের। দুবাইয়ের উইকেট বুঝে দারুণ ব্যাটিং করছিলেন নিজাকাত-আনশুমান, বলকে ব্যাটে আসতে দিয়েছেন, স্ট্রাইক বদল করেছেন নিয়মিতভাবে। শারদুল ঠাকুরের এলোমেলো বোলিং তাদেরকে সহায়তা করেছে, তুলেছেন পুরো সুবিধাটাই।
ভারতের শক্ত পরীক্ষা নিল হংকং/আইসিসি
দুজনই ফিফটি করেছেন, দুজনের জুটি ছাড়িয়েছে ১৫০। তবে ভারত পেয়েছে লেগে থাকার পুরষ্কার। এক শারদুল ছাড়া সেভাবে রান বিলিয়ে দেননি কেউই। কুলদিপের বেরিয়ে যাওয়া বলে পাঞ্চ করতে গিয়ে এক্সট্রা কাভারে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন অধিনায়ক আনশুমান। প্রয়োজনীয় রান-রেট তার আগেই ৭ পেরিয়েছে, সে চাপটাই এরপর কাল হয়েছে হংকংয়ের।
৯২ রান করে খলিলের প্রথম আন্তর্জাতিক শিকার বনেছেন নিজাকাত, এলবিডব্লিউ হয়ে। নিজাকাত উঠে যাওয়ার সময় হাত মেলালেন কুলদীপ, তার ইনিংসের মাহাত্ম্যটাই যেন বুঝিয়ে দিলেন! এ উইকেট নতুন ব্যাটসম্যানের জন্য সহজ নয়, তবুও বাবর হায়াত দুই ওভারে দুই ছয় মেরে হংকংয়ের স্বপ্নটা ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। চাহাল তাকে শট খেলার আমন্ত্রণ জানিয়ে ফাঁদে ফেলে বানিয়েছেন ধোনির হাতে ক্যাচ।
চাহাল-কুলদিপ মিলে নিয়েছেন ৫ উইকেট, তবে দিনে ভারতের বোলিং লাইন-আপে আলাদা করে আলো কেড়েছেন অভিষেক হওয়া খলিলই। লাইন-লেংথের সঙ্গে পেস দিয়ে বুঝিয়েছেন, পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে নির্বাচকদের কঠিন পরীক্ষাতেই ফেলতে যাচ্ছেন তিনি! ৪.৮০ ইকনোমিতে বোলিং করে তিনি নিয়েছেন ৩ উইকেট।
ধাওয়ান করেছেন ১৪তম সেঞ্চুরি/আইসিসি
এর আগে ধাওয়ান খেলেছেন দারুণ এক ইনিংস। বলকে আসতে দিয়েছেন ব্যাটে, জোরের ওপর শট খেলার চেষ্টা করেননি খুব একটা। ১৫ চার ও ২ ছয়ে করেছেন ১২৭ রান। ক্যারিয়ারে এটি ১৪তম সেঞ্চুরি ধাওয়ানের, এ বছর দ্বিতীয়।
৪০ ওভার পর্যন্ত দারুণ নিয়ন্ত্রণে ছিল ভারত, ২৩৭ রানে ২ উইকেটে। তবে কিঞ্চিত শাহর বোলিংয়ে নামা ছোটখাট ধসে ভারত যেতে পারেনি খুব বেশি দূর। শিখর ধাওয়ান ও দীনেশ কার্তিককে পরপর দুই ওভারে ফিরিয়েছেন , কিঞ্চিত, মাঝে এমএস ধোনিকে শূন্যতে ফিরিয়েছেন এহসান খান। কেদার যাদবের ২৭ বলে ২৮ রানের ইনিংসে ছিল আন-অর্থোডক্স শট, তবে শেষ ১০ ওভারে ৪৮ রানের বেশি তুলতে পারেন ভারত।
৯ ওভারে ৩৯ রানে ৩ উইকেটের ফিগার কিঞ্চিতের, এহসান ২ উইকেট নিতে খরচ করেছেন ৬৫ রান। ১০ ওভারে মাত্র ৩৯ রান দিয়েছেন নাদিম আহমেদ, হংকং যে হাল ছাড়েনি, এটার প্রমাণও তাই এটি।
রোহিত শর্মা শুরুটা করেছিলেন তার মতোই। এহসানের অফব্রেকটা সেভাবে টার্ন করেনি, রোহিত লিডিং-এজড তাতেই। দুই বছর পর দলে ফেরা আম্বাতি রাইডু ও ধাওয়ান এরপর দ্বিতীয় উইকেটে তুলেছেন ১১৬ রান, স্টুয়ার্ট ম্যাকেচনির দারুণ ক্যাচে ৬০ রানে আউট হয়েছেন রাইডু। এহসান নওয়াজের শর্ট বলে আপার কাটের চেষ্টা করেছিলেন, শর্ট-কিপিং করা ম্যাকেখনি দারুণভাবে গ্লাভসে পুরেছেন সেটা। কার্তিকের সঙ্গে ৭৯ রানের জুটি এরপর ধাওয়ানের, কিঞ্চিতের দারুণ বোলিং তারপর।