ভুবনেশ্বর-বুমরাহ-কেদারের চাপেই পিষ্ট পাকিস্তান
এশিয়া কাপ, গ্রুপ ‘এ’
দুবাই
পাকিস্তান ১৬২ অল-আউট, ৪৩.১ ওভার (বাবর ৪৭, মালিক ৪৩, ভুবনেশ্বর ৩/১৫, কেদার ৩/২৩ বুমরাহ ২/২৩)
ভারত ১৬৪/২, ২৯ ওভার (রোহিত ৫২, ধাওয়ান ৪৬, শাদাব ১/৬)
ভারত ৮ উইকেটে জয়ী
সুপার ফোরের চার দল নিশ্চিত হয়েছে, সেখানকার সূচিও নিশ্চিত হয়ে গেছে আগেই। টুর্নামেন্টের ভবিষ্যত এ ম্যাচের ওপর খাতা-কলমে নির্ভর করছিলও না। তবুও ম্যাচটা ভারত-পাকিস্তান বলে একটু বাড়তি আলোচনা, বাড়তি মনযোগ। দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইতিহাসটা তো আর কম পুরোনো নয়! দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হয় না বলে এমন টুর্নামেন্টে দুদলের ম্যাচের ঝাঁঝটাও থাকে একটু বেশিই।
তবে দুবাইয়ে এশিয়া কাপের এই ম্যাচে সেই উত্তাপ যেন এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিল ভারত। ভুবনেশ্বর-বুমরাহ-কেদারের বোলিং শুরুতে নিশ্চিত করেছে, বড় জুটি গড়া হচ্ছে না পাকিস্তানের। সেটার ভিতে দাঁড়িয়ে রোহিত শর্মার ফিফটি, শিখর ধাওয়ানের ৪৬ রানের ইনিংস ভারতের জয়কে করেছে আরও সহজ। ওভার বাকি থাকতেই ৮ উইকেটে জিতে গেছে ভারত, বল বাকি থাকার হিসেবে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটি তাদের সবচেয়ে বড় জয়। এশিয়া কাপে মুখোমুখি লড়াইয়েও তাই এগিয়ে গেল তারা। ১২ ম্যাচের ট্যালি এখন এমন : ভারত ৬, পাকিস্তান ৫।
হংকংয়ের সঙ্গে ম্যাচটা যদি দুই দলের জন্য লিটমাস টেস্ট হয়, তবে নিশ্চিতভাবেই সেটা প্রমাণ করতে পারেনি কিছুই। হংকংকে হারাতে বেগ পেতে হয়েছিল ভারতকে, তাও আবার একদিনেরও কম সময় ব্যবধানে। আর তার আগেই পাকিস্তান হেসেখেলে হারিয়েছিল হংকং-কে। তবে ভারতের সামনে বেরিয়ে পড়লো পাকিস্তানের সব দূর্বলতা। ব্যাটিং অর্ডারের স্থিতীশীলতার অভাবের সঙ্গে পেসারদের নির্বিষ বোলিং। আর প্রকাশ পেলো ভারতের শক্তিমত্তা। দারুণ সিম বোলিংয়ের সঙ্গে স্লো বোলিংয়ে কার্যকর। দুইয়ে মিলেই ভারতের সহজ জয়।
১৬৩ রানের লক্ষ্যে তাই অনায়াস ব্যাটিং-ই করলেন রোহিত-ধাওয়ান। ওপেনিং জুটিতে ৮৪ রান, ১৪তম ওভারে শাদাব খানের গুগলি পড়তে না পেরে বোল্ড হওয়ার আগেই রোহিত করেছেন ৩৯ বলে ৫২ রান। ফাহিম আশরাফকে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ধরা পড়ার আগে ধাওয়ান করেছেন ৪৬। নিজের দ্বিতীয় ওভারে চোট পেয়ে উঠে গিয়ে উলটো পাকিস্তানের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছেন শাদাবও।
তৃতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৬০ রানের জুটিতে জয় নিশ্চিত করেছেন আম্বাতি রাইডু ও দীনেশ কার্তিক। দুজনই অপরাজিত ছিলেন সমান ৩১ রানে।
পাকিস্তানী বোলাররা এই উইকেটে দাবি মেনে করতে পারেননি বোলিং, লাইন-লেংথে ছিলেন অধারাবাহিক। যেটার পুরো বিপরীত ছিলেন ভারতীয় বোলাররা, ম্যাচের শুরুর অর্ধে। ভুবনেশ্বর কুমার, কেদার যাদব ও জাসপ্রিত বুমরাহ- তিনজন মিলে রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি ২.৬৫ হারে, উইকেট নিয়েছেন ৮ উইকেট।
দুবাইয়ে ক্রিকেটের অন্যতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মুখোমুখি হয়েছিল এশিয়া কাপে নিজেদের গ্রুপ-পর্বের শেষ ম্যাচে। টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ।
গতকাল রাতে হংকং ঘাম ঝড়িয়েছিল ভারতীয় বোলারদের, ভুবনেশ্বরের বোলিংয়ে অবশ্য তেমন কোনও ছাপ দেখা গেল না। জাসপ্রিত বুমরাহ ও হারদিক পান্ডিয়া ফিরেছেন এ ম্যাচে, আগের ম্যাচে দারুণ বোলিং করেও তাই বসে থাকতে হয়েছে খলিল আহমেদকে। দুই পাকিস্তানী ওপেনারকে ফিরিয়েছেন ভুবনেশ্বর, আঁটসাঁট লাইন-লেংথে বোলিং করে চাপ সৃষ্টি করে গেছেন ক্রমাগত। সঙ্গে ছিলেন বুমরাহ, পাকিস্তানী ওপেনারদের হাত খুলতে দেননি দুজন মিলে।
আক্রমণ করতে এসে এজড হয়েছেন ইমাম-উল-হক, পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলেছেন ফাখার জামান। পাকিস্তানকে এরপর ঠিক পথে ফিরিয়েছিলেন অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক ও বাবর আজম। দুবাইয়ের গরম ছাপিয়ে রান তুলে যাচ্ছিলেন দারুণভাবে, কুলদিপের গুগলিতে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে বাবর বোল্ড হওয়ায় ভেঙেছে ৮২ রানের সে জুটি। পাকিস্তানের ইনিংসে সর্বোচ্চ জুটি হয়ে থেকেছে সেটিই।
কেদার যাদবের খেল দেখানো শুরু এরপরই। সরফরাজ আহমেদ, আসিফ আলি, শাদাব খান- কেদারকে আক্রমণ করতে এসে উলটো বিপত্তি ঘটেছে তাদেরই। এর মধ্যে সরফরাজের ক্যাচটি লং-অনে দারুণভাবে নিয়েছেন বদলি ফিল্ডার মনিশ পান্ডে, লাফিয়ে উঠে এক হাতে বাউন্ডারির ভেতরে বল ঠেলে লাফিয়ে এসে ধরেছেন আবার। এর আগে শোয়েব মালিক হয়েছেন রান-আউট, অবশ্য তার আগে মালিকের সহজ ক্যাচটা বুঝতে ভুল করে ধরতে পারেননি ভুবনেশ্বর। অবশ্য ক্যারিয়ারসেরা ২৩ রানে ৩ উইকেটের বোলিং ফিগারেই ইনিংস শেষ করেছেন কেদার।
পান্ডে নেমেছিলেন পান্ডিয়ার বদলি হিসেবে, বোলিংয়ের সময় পিঠে চোট পেয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাকে। তবে ভারত তার অভাবটা টের পায়নি পরে আর। শেষদিকে ফাহিম আশরাফের ২১ ও মোহাম্মদ আমিরের ১৮ রানের ইনিংসে পাকিস্তান শুধু ১৫০ রানই পেরুতে পেরেছে। টপ অর্ডারের মতো টেইল-এন্ডারদেরও শেষ করেছেন ভুবনেশ্বর-বুমরাহ মিলেই।