• এশিয়া কাপ ২০১৮
  • " />

     

    রশিদের 'বার্থডে স্পেশাল'-এ উড়ে গেল বাংলাদেশ

    রশিদের 'বার্থডে স্পেশাল'-এ উড়ে গেল বাংলাদেশ    

    এশিয়া কাপ, গ্রুপ বি
    আবুধাবি
    আফগানিস্তান ২৫৫/৭, ৫০ ওভার (শাহিদি ৫৮, রশিদ ৫৭*, সাকিব ৪/৪২, রনি ২/৫০) 
    বাংলাদেশ ১১৯ অল-আউট (সাকিব ৩২, রশিদ ২/১৩, মুজিব ২/২২)
    আফগানিস্তান ১৩৬ রানে জয়ী 


    ২০তম জন্মদিন। রশিদ খান এদিন দেখালেন ‘স্পেশাল পারফরম্যান্স’। এমনিতেই বর্তমান সময়ে ‘স্পেশাল’ বোলার তিনি, আজ যেন তিন ডিপার্টমেন্টেই দেখালেন ‘বার্থডে স্পেশাল’। সেই স্পেশালেই রীতিমতো উড়ে গেল বাংলাদেশ!  

    ব্যাটিংয়ে ১৬০ রানে একসময় ৭ উইকেট ছিল আফগানিস্তানের, সেখান থেকে রশিদ খেললেন ৩২ বলে অপরাজিত ৫৭ রানের ইনিংস। গুলবাদিন নাইবের সঙ্গে ৮ম উইকেটে ৯.১ ওভারে ৯৭ রানের জুটি, আফগানিস্তান দাঁড় করালো ২৫৫ রানের দারুণ সংগ্রহ। এরপর আফতাব-মুজিবরা চেপে ধরলেন বাংলাদেশকে, কিন্তু নিজেকে আলাদা করে ঠিকই চেনালেন রশিদ। 

    তামিম-মুশফিক নেই, ব্যাটিংয়ে যে দুজন ‘সিনিয়র সিটিজেন’ আছেন, সেই সাকিব-মাহমুদউল্লাহ দুজনকেই ফেরালেন রশিদ। অনুমিতভাবে এ দুজনই বাংলাদেশের প্রথম ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার আজ। ৯-৩-১৩-২, বোলিং ফিগারই বলে দিচ্ছে, রশিদকে পড়ার ধারেকাছে দিয়েও যেতে পারেননি বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ভাল ইকনোমি এটিই। রশিদের স্পেশাল পারফরম্যান্স সেখানেই শেষ হলো না, শেষে এসে আবু হায়দারকে নিজের বোলিং থেকেই সরাসরি থ্রো-তে করলেন রান-আউট। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং, রশিদ থাকলেন সবখানেই। বাংলাদেশ গুটিয়ে গেল ১১৯ রানেই, ১৩৬ রানের পরাজয়েই শেষ হলো গ্রুপ-পর্ব। পরদিনই ভারতের সঙ্গে ম্যাচ, শারীরিক ক্লান্তি দূর করার সঙ্গে মানসিকভাবে চাঙা হওয়াটাও বড় চ্যালেঞ্জ এখন তাদের। 

     

     

    আফগানদের অষ্টম উইকেট জুটিই ছুঁড়ে দিয়েছিল অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তামিম নেই, লিটনের ওপেনিং সঙ্গী শান্ত। তবে রান করতেই যেন ঘাম ঝড়লো এরপর তাদের। মুজিবকে শুরুতে একটু দৃঢ়ভাবে খেললেও রান বের করতে না পারার চাপ ভর করলো, বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে গুগলিটাই পড়তে পারলেন না! আফতাবের ভেতরের দিকে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ লিটন। পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশ বাউন্ডারি মারতে পারলো না একটিও, সেটির জন্য অপেক্ষা করতে হলো মাহমুদউল্লাহ আসা পর্যন্ত। 

    তার আগেই ফিরেছেন সাড়ে তিন বছর পর ওয়ানডে খেলতে নামা মুমিনুল, নাইবের লেগসাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে ফ্লিক করতে গিয়ে। আফগানিস্তান সে উইকেট পেয়েছে দারুণ এক রিভিউয়ে। মিঠুন স্টাম্পে ডেকে এনেছেন বল। 

    সাকিব-মাহমুদউল্লাহ এরপর কিছুক্ষণ সংগ্রাম করেছেন, টিকে থাকতে, রান তুলতে। সুবিধা করতে পারেননি। রশিদের বলে ধরা খেয়েছেন দুজনই, বাড়তি গতির বলে ধাতস্থ হতে না পেরে এলবিডব্লিউ সাকিব, আর মাহমুদউল্লাহর আউটসাইড-এজ নাগালই পায়নি রশিদের রং-আনের। তবে রশিদের আগে তাদেরকে ভুগিয়েছেন মোহাম্মদ নবি। হয়তো আড়ালে চলে গেছেন খানিকটা, তবে ১০ ওভারে ২৪ রানে ১ উইকেট- নবির ফিগারটাই বলছে, আফগানিস্তানের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের মূল্যটা! 

    বাংলাদেশ ততক্ষণে খেই হারিয়ে উলটোপথে অনেকটা হেঁটেছে, সপ্তম বোলার রহমতও নিয়েছেন একটি উইকেট। আর শুরুর মতো শেষটাও করেছেন মুজিব, রুবেলকে এলবিডব্লিউ করে। 

    প্রথম ইনিংসের অনেকটা জুড়ে অবশ্য দাপট ছিল বাংলাদেশেরই। শুরুতে অভিষিক্ত আবু হায়দার রনির দ্রুত আঘাতটা আফগানিস্তান কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিল হাসমতউল্লাহ-শাহজাদের ৫১ রানের জুটিতে। সাকিব আল হাসানের বোলিংয়ে এরপর আবার কোণঠাসা ছিল আফগানিস্তান, নিয়মিত উইকেটে একসময় ২০০ রানও মনে হচ্ছিল অনেক দূরের পথ। রশিদ-নাইব সে পথটাকেই কমিয়ে আনলেন এক লাফে। 

     

     

    ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আটজন বোলার ব্যবহার করেছেন মাশরাফি, নিজেও এসেছিলেন শেষ ওভারে। তবে রশিদ-নাইব ছাড় দেননি কাউকেই। লেংথ বলে অন-সাইডে খেলেছেন টেনে টেনে, গ্যাপও বের করেছেন দারুণভাবে। বারকয়েক ফিল্ডারের এদিক-ওদিক হয়েছে বল, বাকিগুলো ছিল ‘ক্লিন-হিট’ই। রশিদের ক্যারিয়ারে এটি তৃতীয় ফিফটি। 

    তামিমের এশিয়া কাপ শেষ হয়েছে আগেই, এদিন বাংলাদেশ বিশ্রাম দিয়েছে মুশফিক-মুস্তাফিজকেও। শুরুটা দারুণই হয়েছে আবু হায়দার রনির, প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছেন তিনিই। অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বলে ড্রাইভ করে সোজা কাভারে ধরা পড়েছেন ইহসানউল্লাহ, আর রহমত শাহ ফিরেছেন টপ অফ দ্য অফে বোল্ড হয়ে। 

    শাহজাদকে সঙ্গে নিয়ে হাসমতউল্লাহর জুটি এরপরই। শাহজাদ খেলছিলেন পরিকল্পনা করেই, তবে সাকিবের বলে ধৈর্যচ্যূতি ঘটেছে তার। উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে তুলে মারতে গিয়ে লং-অনে রনির দারুণ ক্যাচে ফিরেছেন শাহজাদ। এরপর ছোট কিছুর জুটির মাঝে শামিউল্লাহ শেনওয়ারি ও আসগর আফগান- দুজনই বড় শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন পরিষ্কারভাবে, সাকিবের বলে। মাঝে রুবেল ফিরিয়েছেন হাসমতউল্লাহকে, উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে। 

    সাকিব পরে এসে এলবিডব্লিউ করেছেন নবিকে, আফগানিস্তানকে ২০০ রানের নিচেই আটকে ফেলার ভিতটাও গড়ে দিয়েছিলেন। তবে সেটা হয়নি, রশিদ-নাইবের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে।