• এশিয়া কাপ ২০১৮
  • " />

     

    জাদেজার পর রোহিতে দুবাইয়ে বাংলাদেশের দুর্দশা

    জাদেজার পর রোহিতে দুবাইয়ে বাংলাদেশের দুর্দশা    

    সুপার ফোর, প্রথম ম্যাচ
    দুবাই
    টস- ভারত (ফিল্ডিং) 
    বাংলাদেশ ১৭৩ অল-আউট, ৪৯.১ ওভার (মিরাজ ৪২, মাশরাফি ২৬, জাদেজা ৪/২৯, ভুবনেশ্বর ৩/৩২) 
    ভারত ১৭৪/৩, ৩৬.২ ওভার (রোহিত ৮৩*, ধাওয়ান ৪০, সাকিব ১/৪৪)
    ভারত ৭ উইকেটে জয়ী 


    রোহিত শর্মা নিশ্চিত ছিলেন না, এ উইকেটে কোন স্কোরটা ঠিক নিরাপদ। টসে জিতে তাই নিরাপদ পথে হাঁটলেন, নিলেন ব্যাটিং। বাংলাদেশকে ঠেলে দিলেন ‘অনিশ্চিত’ পথে। তবে রোহিতের সিদ্ধান্ত ছাপিয়ে নিজেদেরকে আরও অনিশ্চিত দিকে ঠেললেন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা নিজেরাই। এক বছর পর ওয়ানডে খেলতে নামা রবীন্দ্র জাদেজা বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন-আপ চিড়ে নিলেন ২৪ রানে ৪ উইকেট। ১৭৪ রানের লক্ষ্যে রোহিত শর্মার ৮৩ রানের ইনিংস নিশ্চিত করলো, ভারতীয় বোলাররা বাংলাদেশকে আটকে দিয়েছেন তাদের ব্যাটসম্যানদের নাগালের অনেক আগেই। দুবাইয়ে ভারতের কাছে পাত্তা পায়নি বাংলাদেশ, হেরেছে ৭ উইকেটে। সামনে আফগানিস্তান-পাকিস্তান, সুপার ফোর পেরুনো বাংলাদেশের জন্য এখন আরব আমিরাতের কন্ডিশনের চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে অপেক্ষা করছে! 

    ওভার কমে আসেনি, এমন ওয়ানডেতে ভারত কখনোই ১৭৩ বা এর কমে আটকায়নি। বাংলাদেশী বোলারদের গড়তে হতো ইতিহাস। রোহিত-ধাওয়ানের ওপেনিং জুটিই বলে দিয়েছে, তেমন কিছু হচ্ছে না। সাকিব ব্রেকথ্রু এনেছেন, তাকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ ধাওয়ান। রুবেলের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন রাইডু, আর ছয় মেরে খেলা শেষ করতে চাওয়া ধোনি ডিপে ক্যাচ দিয়েছেন মাশরাফির বলে। এছাড়া বাকি গল্পটা সহজ- একপ্রান্তে ছিলেন রোহিত শর্মা। ১৭৩ রানের সম্বল নিয়ে রোহিতদের আটকানোর মতো শক্তি ছিল না মাশরাফিদের। 

    এর আগের গল্পগুলো অবশ্য ভিন্নরকম। সেখানে আছে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের উইকেট ছুঁড়ে আসার ‘কমন’ কাহিনী। 

    শুরুটা লিটন দাসকে দিয়ে। 

    তিনি হুক করতে গেলেন ভুবনেশ্বরকে, যেন শর্ট বলে খুব বিরক্তি তার। শান্ত বুমরাহর অফস্টাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে ধৈর্য্য ধরতে চাইলেন না। তাদের এমন পারফরম্যান্সের পরই কিনা কে জানে, খবর এলো- এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ডেকে পাঠিয়েছে বেশ কিছুদিন ওয়ানডে ক্রিকেটের বাইরে থাকা দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকারকে! 

     

    মুশফিকের রিভার্স সুইপ, যাতেই আউট হয়েছেন তিনি/ক্রিকইনফো

    দুই বাউন্ডারিতেও শান্ত হলেন না সাকিব, জাদেজাকে আরেকবার স্লগ করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে দিলেন ধাওয়ানের হাতে ক্যাচ। ঠিক এ বলেই এই পজিশনে ধাওয়ানকে আনতে রোহিতকে বলেছিলেন ধোনি, অতি-আত্মবিশ্বাসী সাকিবের মিস-হিট গেল সেখানেই। 

    ডট বলের চাপে আক্রমণাত্মক হওয়ার সঙ্গে দারুণ কৌশলি হতে গেলেন মুশফিক, তবে আরেকবার রিভার্স-সুইপ প্রতারণা করলো তার সঙ্গে। মিঠুন একবার বেঁচেছিলেন এলবিডব্লিউর হাত থেকে, জাদেজার কথা রোহিত শুনলে তিনি আউট হতে পারতেন তখনই। সেই এলবিডব্লিউই হলেন, জাদেজার বলে, পা বাড়িয়ে খেলতে গিয়ে। সঙ্গে নষ্ট করলেন রিভিউটাও, যেটা পরে দারুণ ভোগাল বাংলাদেশকে। আর পরে জাদেজাকে চতুর্থ উইকেট দিলেন মোসাদ্দেক, অনেকখানি পা বাড়িয়ে সুইপ করতে গিয়ে শুধু ব্যাটের তলা দিয়ে খোঁচাটাই লাগাতে পারলেন। 

    এর আগে আর সবার চেয়ে একটু অন্যরকম ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তবে দিনটা বাংলাদেশের নয়, সেটাই প্রমাণ হলো যেন তার আউটে। একজনের ভুলে আরেকজনের শাস্তির মতো করে ভুগেছেন তিনি। মাশরাফি-মিরাজের আগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৬ রানের জুটি গড়ছিলেন মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেকের সঙ্গে। সেটা ভাঙলো বাংলাদেশের রিভিউ না থাকায়। 

    ভুবনেশ্বরের স্কিড করা বলে বেশ বড় ইনসাইড-এজ হয়েছিল মাহমুদউল্লাহর, ছিল উচ্চতার প্রশ্নও। আম্পায়ার গ্রেগরি ব্র্যাথওয়েটের সিদ্ধান্তটা চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ থাকলো না মাহমুদউল্লাহর, বিরস বদনে শুধু ফিরতে হলো ড্রেসিংরুমে। তার আগেই যে রিভিউটা খরচ করে ফেলেছেন মোহাম্মদ মিঠুন। 

    এরপর তাই সবই নেমে এসেছিল লোয়ার অর্ডারে। ১০১ রানে ৭ উইকেট থেকে বাংলাদেশকে ‘অনেকখানিই’ টানলেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও মাশরাফি বিন মুর্তজা। তাদের ৮ম উইকেটে ৬৬ রানের জুটি কিছু সময়ের জন্য আশাও জোগাল বাংলাদেশকে। দুজন মিলে মারলেন চারটি ছয়। একসময় প্রবলভাবে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ গেল শেষ পর্যন্ত ১৭৩ রানে। 

    সেটা যে যথেষ্ট নয়, তা বুঝিয়ে দিলেন পরে রোহিত নিজেই।