• এশিয়া কাপ ২০১৮
  • " />

     

    পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

    পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ    

    বাংলাদেশ ২৩৯ অল-আউট, ৪৮.৫ ওভার (মুশফিক ৯৯, মিঠুন ৬০, জুনাইদ ৪/১৯) 
    পাকিস্তান ২০২/৯, ৫০ ওভার (ইমাম ৮৩, আসিফ ৩১, মুস্তাফিজুর ৪/৪৩)
    বাংলাদেশ ৩৭ রানে জয়ী ও এশিয়া কাপের ফাইনালে


    দলের সেরা ব্যাটসম্যান নেই প্রথম ম্যাচের প্রথম ইনিংসের পর থেকেই। ওপেনিংয়ে শূন্যতা পূরণ করতে দেশ থেকে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছে দুইজনকে। টপ-অর্ডারে ধস হয়ে গেছে নিয়মিত, চোট নিয়ে সেটা সামাল দিয়ে যাচ্ছেন আরেকজন। এরপরও না হলে আছেন আরেকজন, ব্যাটিং না হলেও পুষিয়ে দিচ্ছেন বোলিংয়ে। বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে পুড়ছে আর কিছু রান বেশি না হওয়ার আক্ষেপে। 

    এরপর বোলাররা আশা জোগাচ্ছেন, সে আশার বিপরীতে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে কোনও জুটি। এতকিছুতেও যখন হচ্ছে না, তখন হাজির বিস্ময়-অধিনায়ক। ফিল্ডিংয়ে সুপারম্যান হয়ে নিচ্ছেন ক্যাচ, আঙুলে চোট পেয়ে উঠে গিয়েও ফিরে আসছেন ব্যান্ডেজ নিয়ে। এশিয়া কাপ বাংলাদেশের কম ক্ষত তৈরি করেনি, তবে সে ক্ষত নিয়ে উলটো আঘাতকেই বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ফাইনালে উঠে গেছে বাংলাদেশ! কার্যত সেমিফাইনাল বনে যাওয়া ম্যাচে পাকিস্তানকে ৩৭ রানে হারিয়ে এখন বাংলাদেশের অপেক্ষা ভারতের। গত এশিয়া কাপেও ফাইনালে খেলেছিল এই দুই দলই, যদিও ফরম্যাট ছিল ভিন্ন।

    প্রথম ইনিংসের পর বাংলাদেশ একটু আক্ষেপ করতেই পারে, রানটা ২৩৯ না হয়ে হতে পারতো আরেকটু বেশি। সেই আক্ষেপটা পুষিয়ে দিলেন মুস্তাফিজ-মিরাজরা, পাকিস্তানের প্রথম তিন উইকেট গেল ১৮ রানেই। 

     


     

    ফাখারের দুর্দশা বেড়েছে প্রথম ওভারেই, মিরাজের বলে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে বলের লাইনে না পৌঁছেই টেনে মারতে গিয়ে মিড-অনে রুবেলের দারুণ ক্যাচ বনেছেন তিনি। বাবর আজম মুস্তাফিজের ওভার দ্য উইকেটের বলে হয়েছেন এলবিডব্লিউ। মুস্তাফিজের বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট চালিয়ে এজড হয়েছেন সরফরাজ, ডানদিকে লাফিয়ে ক্যাচ নিয়েছেন মুশফিক। চতুর্থ উইকেটটাও পেতে পারতো বাংলাদেশ খানিক পরই, তবে ইমাম-মালিককে প্রায় একপ্রান্তে পেয়েও রান-আউটের সুযোগ মিস করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। 

    এরপরই দাঁড়িয়ে গেলেন ইন-ফর্ম দুই পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান শোয়েব মালিক ও ইমাম-উল-হক। সে জুটি ফিফটি পেরিয়ে গেল ৬৭ রান পর্যন্ত। সাকিব ছিলেন না, পঞ্চম বোলার হিসেবে মাশরাফি শুরুতে আনলেন মাহমুদউল্লাহকে। পাকিস্তানিরা তাকে লক্ষ্য করবেন, হাবভাব ছিল এমনই। 

    এরপরই সুপারম্যান মাশরাফি। ৫১ বলে ৩০ রান করে মালিক রুবেলের বলে ফ্লিক করেছিলেন, শর্ট মিড-উইকেট পেরিয়েই গিয়েছিল প্রায় বলটা। বাঁদিকে লাফিয়ে অ্যাক্রোবেটিক স্টাইলে ক্যাচটা নিলেন মাশরাফি, বাংলাদেশকে যেন এনে দিলেন কাঙ্খিত মোমেন্টামটা! 

    শাদাবকে প্রমোশন দিয়ে আগে পাঠালো পাকিস্তান, বুমেরাং হয়ে গেল তাদের সে সিদ্ধান্ত। ২৪ বলে ৪ রান করে সৌম্যকে ওয়ানডের প্রথম উইকেটটা দিলেন শাদাব, লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ব্যাটিংয়ের সময় থেকেই ক্র্যাম্প হচ্ছিল মুশফিকের, শেষ পর্যন্ত গ্লাভসের দায়িত্ব লিটনের ওপর ছেড়ে উঠে গিয়েছিলেন তিনি। 

    সেই লিটনই এরপর এলেন কেন্দ্রবিন্দুতে। মুস্তাফিজের বলে আসিফ আলির ক্যাচটা একহাতে চেষ্টা করে ছেড়ে দিলেন, পাকিস্তানকে আরেকবার বের করে নেওয়া হুমকি দিল এরপর সেই জুটি। ৭১ রান এলো সে জুটিতে, ইমাম-আসিফ মিলে পাকিস্তানকে দিলেন আশা। তবে দায়মোচন করলেন লিটনই, মিরাজের ঝুলিয়ে দেওয়া বলে পা বাড়িয়ে খেলতে গিয়ে মিস করা আসিফকে চোখের পলকে স্টাম্পড করে। এরপর স্টাম্পড করলেন ইমামকেও, মাহমুদউল্লাহর বলে। 

    ১০৫ বলে ৮৩ রান করলেও ঠিক গিয়ারটা পরিবর্তন করতে পারেননি ইমাম। পাকিস্তানও পথ হারিয়েছে সেখানেই। পঞ্চম বোলার হিসেবে আসা মাহমুদউল্লাহকে দিয়ে পরে ১০ ওভার করিয়েছেন মাশরাফি, প্রতিদানও পেয়েছেন দারুণ। শেষ বল পর্যন্ত খেললেও পাকিস্তান ম্যাচ হেরেছে মূলত ইমামের উইকেটের পরই। 

    এর আগে ১২ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর মুশফিক-মিঠুনের ১৪৪ রানের জুটিতে ২৩৯ রান পর্যন্ত গিয়েছিল বাংলাদেশ। এ জুটির আগে-পরে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে চারটি উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে আটকে দেওয়ার মূল ভূমিকা পালন করেছেন এ ম্যাচ দিয়েই পাকিস্তান দলে ফেরা জুনাইদ খান, ৯ ওভারে ১৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে। 

    চোটে পড়া সাকিবকে ছাড়াই নামতে হয়েছিল বাংলাদেশকে, পরিবর্তন ছিল আরও দুইটি। প্রায় এক বছর পর ওয়ানডে খেলতে নেমে স্বস্তিতে ছিলেন না সৌম্য, জুনাইদের শর্ট বলে পুল করতে লিডিং এজে সফট ডিসমিসাল হয়েছেন কোনও রান না করেই। তাকে দিয়ে টপ অর্ডারে ধসের শুরু। 

    এরপর পেস বোলিংয়ের দারুণ প্রদর্শনীতে ফিরেছেন মুমিনুল-লিটন, ১২ রানেই। প্রথমে ওভার দ্য উইকেটে শাহিনের ভেতরের দিকে ঢোকা বলে ব্যাট নামিয়েও সময় করে উঠতে পারেননি মুমিনুল, রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে জুনাইদের বলে উড়ে গেছে লিটনের অফস্টাম্প, তিনি খেলতে চেয়েছিলেন ক্রস ব্যাটে। 

    এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের পরিচিত দৃশ্য- টপ অর্ডারে ধস। বাংলাদেশকে আবারও উদ্ধারের দায়িত্ব নিলেন মুশফিকুর রহিম-মোহাম্মদ মিঠুন জুটি, যে জুটি উদ্ধার করেছিল একেবারে প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। পাকিস্তানী স্পিনারদের দারুণ নিয়ন্ত্রণের সাথে খেললেন দুজন, এশিয়া কাপে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি জুটি গড়লেন বাংলাদেশের। মোহাম্মদ নওয়াজ-শাদাব খানদের কাছ থেকে রান বের করেছেন মুশফিক-মিঠুন, সরফরাজ এরপর দ্বারস্থ হয়েছেন পেসারদের। 

     

     

    জুনাইদ খান ও শাহিন শাহ আফ্রিদিকে ফিরিয়ে আনলেন সরফরাজ, খুঁজছিলেন ব্রেকথ্রু। সেটা দিলেন হাসান আলি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের মতো করেই আউট হলেন মিঠুন, শর্ট অব আ লেংথে মিড-অনে খেলতে গিয়ে খাড়া ওপরে ক্যাচ তুললেন। শুরুতে একটু নড়বড়ে ছিলেন, তবে সময়ের সঙ্গে থিতু হয়েছিলেন বেশ। আউট হওয়ার আগে করলেন ৬০ রান। পরের স্পেলে ফিরে এসেই শাদাব সফল, কাভারের ওপর দিয়ে এর আগে দুই বাউন্ডারি মারা ইমরুল এলবিডব্লিউ। 

    মুশফিক ব্যাটিং করছিলেন যেন মিশন নিয়ে, প্রথমে বাংলাদেশকে চাপ থেকে উদ্ধার, পরে স্কোরকে বড় করা। নয়টি চার মেরেছেন, স্পিনের সঙ্গে পেসকেও সামাল দিয়েছেন দারুণভাবে। এশিয়া কাপে শিখর ধাওয়ানের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান এখন তার। 

    ৯৫ রানে দাঁড়িয়ে আউটসাইড-এজে চার পেয়েছিলেন, এক বল পর শাহিনের অল্প সিম মুভমেন্টের বলে খোঁচা মেরে এজড হয়েছেন মুশফিক। হয়ে গেছেন ৯৯ রানে আউট হওয়া প্রথম বাংলাদেশী, এশিয়া কাপে কোনও ব্যাটসম্যানের ৯৯ রানে আউট হওয়ার ঘটনাও এটি প্রথম।  

    এরপর জুনাইদকে ফ্লিক করতে গিয়ে মিড-উইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন মিরাজ, আর লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। মাশরাফি হাসান আলিকে ছয় মেরেছেন একটা, তবে সে পর্যন্তই। রুবেল রান-আউট হওয়ার পর হাসানকেই তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।