• এশিয়া কাপ ২০১৮
  • " />

     

    ফাইনালের আগে পাঁচ প্রশ্ন

    ফাইনালের আগে পাঁচ প্রশ্ন    


    আরেকবার এশিয়া কাপের ফাইনালে মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত। এবার ভারত একটি ম্যাচও হারেনি এখনও, তবে প্রশ্ন আছে তাদেরকে নিয়েও। বাংলাদেশের চোটের সমস্যা কাটেনি, তবে এরপরও পাকিস্তানকে হারিয়েই ফাইনালে এসেছে তারা। ফাইনালের আগে দুই দলের সামনেই আছে প্রশ্ন...


    ১. ভারতের মিডল অর্ডার উন্মুক্ত করতে পারবে বাংলাদেশ? 

    ভারতের টপ থ্রি-এর দিকে তাকান, আপনি বুঝবেন তাদের শক্তিটা! আফগানিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ বাদ দিলে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান মিলেই ৯৯.৩৩ গড়ে করেছেন ৫৯৬ রান। সব মিলিয়ে এশিয়া কাপে ভারতের প্রথম তিন ব্যাটসম্যান মিলে করেছেন ৮৭৩ রান, ৭৯.৩৬ গড়ে, ৯২.০৮ স্ট্রাইক রেটে। তবে এরপরই প্রদীপের আলোর নীচের আঁধার আছে ভারতের। যার নাম মিডল অর্ডার। এশিয়া কাপে ভারতের মিডল অর্ডারের গড় ২৪.৩৭। অবশ্য টপ অর্ডারের দারুণ শুরু বা ভিত মিডল অর্ডারকে আগলে রেখেছে ২০১৭ সালের শুরুর পর থেকেই। এ সময়ে ভারতের ব্যাটসম্যানদের মুখোমুখি হওয়া ডেলিভারির মাত্র ৩২.৩ শতাংশ খেলেছে মিডল অর্ডার। তবে ভারত সফল ঠিকই, এ সময়ে ইংল্যান্ডের পর সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জিতেছে তারাই। তাদের মিডল অর্ডার শক্ত পরীক্ষার মুখে পড়েনি, অথবা পড়তে দেননি টপ থ্রি। এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশী বোলাররা ভারতের মিডল অর্ডারের পরীক্ষা নিতে পারবেন? সেজন্য অবশ্য টপ-থ্রির বাধাটা পেরুতে হবে আগে। 

    ২. বাংলাদেশের মেঘের আড়ালে হাসবে আলো? 

    ভারতের ঠিক বিপরীত চিত্র বাংলাদেশের। টপ অর্ডারে ধস হয়ে গেছে নিয়মিত ঘটনা, এশিয়া কাপে বাংলাদেশের প্রথম তিন উইকেটের গড় মাত্র ৯.১৮ রান। শুরুর চাপ সামাল দিতে হচ্ছে মিডল অর্ডারকে, সেখানে একটু সুস্থির বাংলাদেশ, ৩৯.৫৫ গড়ে সেখানে এসেছে ৭১২ রান, মোট রানের যা প্রায় ৭০.৮৪ শতাংশ। আপার অর্ডার আবারও ব্যর্থ হলে মিডল অর্ডারের ওপর চাপটাও তাই বাড়বে, বিশেষত ম্যাচটা যখন ফাইনাল। বাংলাদেশের টপ অর্ডার পারবে, মিডল অর্ডারের চাপটা একটু কমাতে? 

     

     

    ৩. পার্টটাইমার, ফুলটাইমার 

    ভারত প্রতি ম্যাচেই নেমেছে পাঁচজন বোলার নিয়ে, তবে কেদার যাদব রোহিত শর্মাকে দিয়েছেন বাড়তি অপশন। তার ভিন্নধর্মী অ্যাকশনে ৪ ইনিংসে বোলিং করেছেন ২৬ ওভার, ৪ উইকেট নিয়েছেন, ইকোনমি রেট ৩.৭৬। ফাইনালেও ভারত এ কম্বিনেশন ভাঙতে চাইবে না। ভুবনেশ্বর, বুমরাহ, জাদেজা, কুলদীপ, চাহালের যে কোনও একজনকে একটু আড়াল করতেই কেদারের আশ্রয় নেন রোহিত। বাংলাদেশও পার্টটাইমারের আশ্রয় নিয়েছে, তারা প্রতিদানও দিয়েছেন ভালই, ২২ ওভারে ইকোনমি ৩.২৭। তবে সাকিব আল হাসানের চোট বাড়তি আঘাত দিয়েছে বাংলাদেশকে, পঞ্চম বোলারের জায়গাটা তাই পূরণ করতে হচ্ছে পার্টটাইমার দিয়েই। পাকিস্তানের বিপক্ষে অবশ্য বাড়তি শক্তি যোগ করেছে সেটিই, মাহমুদউল্লাহ ১০ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে নিয়েছেন একটি উইকেট। কম যাননি সৌম্য সরকারও, ৫ ওভারে তিনি দিয়েছেন ১৯ রান, নিয়েছেন ওয়ানডের প্রথম উইকেট। মাশরাফির হাতে অপশন হিসেবে আছেন মুমিনুলও। তবে একটি ব্যাপারেই শুধু পার্থক্য, ভারত অধিনায়কের কেদারকে “পার্টটাইমার” হিসেবেই ব্যবহার করার সুযোগ আছে, আর বাংলাদেশ অধিনায়ককে এই কম্বিনেশনে “পার্টটাইমার”-কে দিয়েই পূরণ করাতে হবে পঞ্চম বোলারের কোটা। 

    ৪. টস কী বলে? 

    রোহিত শর্মা এর আগে বেশ কয়েকবার বলেছেন, দুই ইনিংসে ব্যাটিং বা বোলিংয়ের ক্ষেত্রে খুব বেশি পার্থক্য না থাকলেও ফ্লাডলাইটের আলোয় ব্যাটিং তাদের কাছে একটু সহজ মনে হয়েছে দুবাইয়ের উইকেটে। রোহিত ৫ ম্যাচের মধ্যে টসে জিতেছেন মাত্র একবার, তবে চার ম্যাচেই বিপক্ষ অধিনায়ক তাকে সুযোগ দিয়েছেন পরে ব্যাটিংয়ের। ভারত রান-তাড়ায় তিন ম্যাচই জিতেছে, আফগানিস্তানের সঙ্গে শুধু হয়েছে টাই। একবার আগে ব্যাটিং করেছিল ভারত, একদম প্রথম ম্যাচে। হংকং সেবার ভড়কে দিয়েছিল ভারতকে। 
    বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানটা সহজ, মাশরাফি যে কয়বার টসে জিতেছেন, বাংলাদেশ জিতেছে সে কয়বারই। এবং এ তিনটি ম্যাচেই আগেই ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের সঙ্গে রান-তাড়ায় হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং, আর ভারতকে শুরুতে ব্যাটিং করেও ছুঁড়তে পারেনি চ্যালেঞ্জিং স্কোর। রোহিত পরে ব্যাটিং করা একটু ‘সহজ’ মনে করেন, আবার মাশরাফি আগে ব্যাটিং না করে জেতেননি। ফাইনালের টসের সিদ্ধান্ত তাই নিজেদের শক্তিমত্তার দিকে চেয়েই নিতে পারে দুই দল। 

    ৫. বদলাবে ইতিহাস? 

    মেলবোর্ন, বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল। সামনে ভারত, রান-তাড়ায় খেই হারিয়েছিল বাংলাদেশ। বার্মিংহাম, চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের প্রথম সেমিফাইনাল। আবারও ভারত, এবারও ভারত জিতলো সহজেই। গত এশিয়া কাপের ফরম্যাটটা ছিল টি-টোয়েন্টি, তবে সেবারও ভারত জিতেছিল সহজেই। টুর্নামেন্টে ভারতের সঙ্গে ‘বাঁচা-মরার’ ম্যাচে সুখস্মৃতি নেই বাংলাদেশের। সঙ্গে টুর্নামেন্ট ফাইনাল জেতা হয়নি একবারও। দুবাইয়ে দেখা যাবে নতুন কিছু?