স্পোর্টস হাবে খেলার মিলনমেলা
৬ অক্টোবর ২০১৮ (শনিবার) রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে (খামারবাড়ি, ফার্মগেট) অনুষ্ঠিত হলো দেশের একমাত্র স্পোর্টস বিজনেস কনফারেন্স‘স্পোর্টস হাব বাংলাদেশ’র দ্বিতীয় আসর। ইমেগো প্রেজেন্টস ‘স্পোর্টস হাব-বাংলাদেশ’ ইন এসোসিয়েশন উইথ দৈনিক প্রথম আলো’র এবারকার পরিসর ছিলো আরও বড়। অ্যামেরিকান অ্যাম্বাসির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এডুকেশন ইউএসএ ছিলো পুরো আয়োজনের নলেজ পার্টনার, ভ্যালুড প্যাট্রন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ-বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি সিলেট সিক্সার্স আর সহায়তায় গবেষনা প্রতিষ্ঠান ‘নিয়েলসন’। সারা দেশের বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের প্রায় ৬ শতাধিক শিক্ষার্থী, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, পেশাজীবি ও বিভিন্ন ক্রীড়াঙ্গনে জড়িয়ে থাকা ক্রীড়ামোদী অংশ নেয় এবারকার স্পোর্টস হাবে।
‘স্পোর্টস মার্কেটিং: এক্সপ্লোরিং নিউ মার্কেট’ এ বিষয়ে কনফারেন্সে কথা বলেন, নিয়েলসন স্পোর্টস-ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রবি চাভান। ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত টিভি ও ডিজিটাল সম্প্রচার সত্ত্ব বিক্রি হয়েছে ভারতীয় মুদ্রায় ৬ হাজার ১৩৮ কোটি রুপিতে। যা কিনেছে স্টার ইন্ডিয়া। ৯৪৪ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হওয়া এই সত্ত্ব কোন অংশেই কম না গোটা দুনিয়ার অন্য স্পোর্টস ইভেন্টের তুলনায়। কোন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ? ক্লাব ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ম্যানেজেমেন্টের পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবি’র মার্কেটিং কিভাবে পরিচালিত হয় সে বিষয়ে আলোচনা করেন বিসিবি পরিচালক ও খুলনা টাইটান্সের কর্ণাধার কাজি ইনাম আহমেদ।
স্পোর্টসের প্রায় প্রতিটি ইভেন্টে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের উত্থান কিংবা প্রতাপ আমরা দেখি। কিন্তু, অনেকেই হয়তো জানি না কতো পরিমাণ অর্থ লগ্নি করে ভারত। এক জরিপে দেখা গেছে ভারতের শুধুমাত্র ‘স্পোর্টস অ্যাডভারটাইজমেন্ট’র মার্কেট সাইজ ৭ হাজার ৩’শ কোটি রুপি। সে তুলনায় যোজন-যোজন পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এখানকার স্পোর্টস মার্কেট ট্রেন্ড, রিটার্ন অন ইভেস্টমেন্ট নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন বিপিএলের গ্রাউন্ডস রাইট হোল্ডার ও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সত্ত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠান কে-স্পোর্টসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহাদ করিম।
আশার কথা গেলো কয়েক বছর ধরে দেশী বেশকিছু কোম্পানী খেলায় স্পন্সরশিপের মাধ্যমে নিজেদের পন্য বিপনন করছে। অনেকেই আবার ভীনদেশী বিভিন্ন খেলার আয়োজন স্পন্সর করছে। এক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে থাকবে ওয়াল্টন। এ দেশের প্রায় সব খেলার পৃষ্ঠপোষকতা করছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রায় প্রতিটি আয়োজনের সঙ্গেই জড়িত এই ইলেকট্রনিক পন্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি। ওয়াল্টনের সিনিয়র অপারেটিভ ডিরেক্টর উদয় হাকিম জানান বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠান কিভাবে লাভবান হচ্ছে।
বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ।
বেশিরভাগ খেলোয়াড় কিংবা অ্যাথলেটের জন্যই খেলোয়াড়ী জীবনটা হয় বেশ ছোট। খেলা থেকে অবসরে গেলে অনেকেই নিজেকে জড়িয়ে নেন বিভিন্ন ব্যবসা কিংবা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে। খেলোয়াড়ী জীবনের বিপুল অভিজ্ঞতা নিশ্চিতভাবে নতুন ক্যারিয়ারে বড় ভূমিকা রাখে। দেশীয় দাবার কিংবদন্তী গ্র্যান্ড মাস্টার রিফাত বিন সাত্তার জানান দাবা খেলার অভিজ্ঞতা যেভাবে শক্ত প্রভাব রেখেছে তাঁর পেশাদারী জীবনে। যিনি দাবার পাশাপাশি কাজ করছেন সেভ দ্য চিলড্রেনের শীর্ষ পদে।
ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের আজকের সাফল্যের অনেকটা জুড়েই আছে ক্রিকেট। জনপ্রিয়তার বিচারে ফুটবল-হকি এগিয়ে থাকলেও, গলফ, সার্ফিং কিংবা কার রেসিংয়ের মতো ব্যক্তিগত ইভেন্টে সাফল্য পাওয়ার দারুন সুযোগ আছেন। নতুন উদ্যোক্তাদের স্পোর্টসের নানা শাখায় ব্যবসা করার জন্য যেমন দারুন সুযোগ আছে তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। আর সাফল্য পেতে এ বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। এসব নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবি পরিচালক ও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দল প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তানজিল চৌধুরী।
ফুটবলে তথ্য-উপাত্তের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। প্রতিপক্ষের রণকৌশল জানার পাশাপাশি নিজ দলের শক্তি-দূর্বলতার মূল্যায়ন করতে যার বিকল্প নেই। বেশিরভাগ কোচই ম্যাচ চলাকালীন ডাটা আর অ্যানালাইটিক্সের সাহায্য নিয়ে খেলোয়াড় বদল কিংবা রণকৌশল বদলায়। আমাদের দেশে ক্রিকেট ছাড়া অন্য ইভেন্টগুলোতে প্রযুক্তির এ ব্যবহার নেই বললেই চলে। অথচ বেশিরভাগ স্পোর্টসে বিশেষ করে ফুটবলে ডাটা-অ্যানালাইটিকসের বিকল্প নেই। এ বিষয়ে ধারনা দেন ইংলিশ ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা-এফএ’র ইন্সট্রাকটর ও সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের বৃটিশ কোচ স্টুয়ার্ট হল। একই সেশনে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন দেশসেরা ফুটবল কোচ মারুফুল হক।
ক্যারিয়ারে নানা উত্থান-পতন দেখেছেন বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের সহ-অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ২০১৫ বিশ্বকাপ আর ২০১৭’র আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির তিন সেঞ্চুরি যাকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। ক্যারিয়ারের শীর্ষে থাকার আনন্দ যেমন আছে তেমনি স্বপ্ন ভঙ্গের অনেক বেদনাও আছে। এসব নিয়ে ভিন্ন এক সেশনে খোলামেলা কথা বলেন মাহমুদউল্লাহ।
এবারকার আয়োজন নিয়ে ইমেগো স্পোর্টসের কো-ফাউন্ডার ও চিফ মার্কেটিং অফিসার তামজিদুল ইসলাম বলেন, ‘স্পোর্টস হাব আয়োজনের একমাত্র উদ্দেশ্য তরুণ প্রজন্মকে মাঠ আর মাঠের বাইরের অজানা বিভিন্ন বিষয় জানানো। আমরা বিশ্বাস করি তরুন প্রজন্ম তাদের সৃজনশীল চিন্তা আর সুদুর প্রসারী পরিকল্পনায় দেশের খেলাধুলার জীর্ণ চেহারা বদলে দিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’
ইমেগো প্রেজেন্টস স্পোর্টস হাব বাংলাদেশ ইন এসোসিয়েশন উইথ দৈনিক প্রথম আলো’র বিভিন্ন সেশন পরিচালনা করেন ইমেগো স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের কো-ফাউন্ডার কাজী সাবির, কো-ফাউন্ডার তামজিদুল ইসলাম ও কো-ফাউন্ডার আহমেদ রাকীব।