'ব্যাক-আপ' ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে সংস্কৃতি বদলাচ্ছে বাংলাদেশে?
"সংস্কৃতিটা বদলাচ্ছে"/বিসিবি
২০১৬। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজটা শুধু টি-টোয়েন্টি করা হলো, কিছুদিন পর ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির কথা ভেবে। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বাজিয়ে দেখলেন বেশ কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটারকে। অভিষেক হলো মোট ছয়জনের। এর মাঝে ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টির স্কোয়াডে জায়গা পেলেন নুরুল হাসান, আবু হায়দার রনিরা। পরে যোগ দিয়েছিলেন শুভাগত হোম।
২০১৮। কয়েক মাস পর বিশ্বকাপ, সামনে আবার জিম্বাবুয়ে। এবার অবশ্য পূর্ণ সিরিজই খেলছে বাংলাদেশ। তবে তিনটি ওয়ানডেকে গুরুত্ব দিচ্ছেন মাশরাফি, বিশ্বকাপের প্রস্তুতি হিসেবে। এই সিরিজে সাকিব-তামিম নেই, ব্যাক-আপ ক্রিকেটারদের বাজিয়ে দেখার ভাল একটা সুযোগও তাই এই সিরিজ।
তবে এখানকার সংস্কৃতি বাধা দিচ্ছে মাশরাফি ও টিম ম্যানেজমেন্টকে, “প্রথমত হচ্ছে আপনি বিষয়টা কিভাবে নিচ্ছেন। ইতিবাচকভাবে, হয়তো আমি নতুন চারটা ক্রিকেটারকে খেলিয়ে দিলাম। আচ্ছা ঠিক আছে আমরা হারি জিতি সেটা দেখতে চাই। আমাদের সংস্কৃতিতে এটা সবাই কিভাবে নেবে সেটা নির্ভর করে। কারণ হারটা আমরা খুব সহজে নিতে পারি না। এটা দল নির্বাচনের সময় চিন্তায় থাকে। আলোচনা না হলেও ‘ব্যাক অব দ্যা মাইন্ডে’ কিন্তু এটা থাকে। হয়তোবা অন্য জায়গায় যেটা হয় ওরা যাকে নেয়, (সে) ব্যাকআপ করে যাচ্ছে।
“(আমরাও) দেখতে চাই। হারি জিতি যাই হোক না কেন। আমাদের ক্ষেত্রে কিছুটা ‘ইতস্তত ভাব’ থাকে। থাকে না, (এমন কিছু যা) অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে আমার মনে হয় সংস্কৃতি একটু একটু করে বদলাচ্ছে। তো আমি আশা করি যাকে দেখতে চাই তাকে আপনারাও সুযোগ দেবেন আমরাও সুযোগ দেব এবং সাধারণ মানুষ যেন তাদের সুযোগ দেয় যে সে ঘরোয়া ক্রিকেটে যেটা করেছে সেটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এতটা সহজে হয় না। দেখেন ফজলে রাব্বি কতগুলো রান করেছে (এর আগে)। গতকাল (প্রস্তুতি ম্যাচে) কিছুটা হলেও নার্ভাসনেস ছিলো। তো ওকে সেট করতে হলে কিছুটা সময় দিতে হবে। সবাইকে এক্ষেত্রে আন্তরিক হবে।”
সব মিলিয়ে ব্যাক-আপ ক্রিকেটারের তালিকাটা বাংলাদেশে দীর্ঘ নয়, মাশরাফি সেটা মানছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আশাবাদী তিনি, “আল্লাহ যদি সবাইকে বাঁচিয়ে রাখে কিছু ক্রিকেটার আছে আপনার চিন্তা করার সুযোগ (দরকার) নেই সেখানে। নাম বললে হয়তোবা সাকিব, মুশফিক, তামিম, রিয়াদের ক্ষেত্রে হয়তো আমাদের চিন্তা করার সুযোগ কম। একই সাথে মোস্তাফিজ আছে লিটন আছে, এরাও ভাল করছে। তবে একটি কথা আগেও বলেছি ব্যাকআপ প্লেয়ার আমাদের অনেক সংক্ষিপ্ত। বিশেষ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পারফর্ম করার মতো ব্যাকআপ ক্রিকেটার। এখন আস্তে আস্তে ঘরোয়া ক্রিকেটে শক্তিশালী হচ্ছে বা ক্রিকেটাররাও নিজে থেকে খেলতে চাচ্ছে। এরকম খেলতে থাকলে সুযোগ তৈরী হবে এবং ব্যাকআপ প্লেয়ার তাড়াতাড়ি চলে আসবে।
“সেই ক্ষেত্রে আমি মনে করি কিছু পজিশন আছে সেখানে বিশ্বকাপের কথা যদি চিন্তা করি সাইফ উদ্দিন অবশ্যই সেটা। ফজলে রাব্বি অবশ্যই সেটা। কারণ সাকিবের যদি আল্লাহ না করুক সমস্যা হয়ে যায়, তখন কাউকে না কাউকে বাঁহাতি স্পিন ও ব্যাটসম্যান আমাদের চিন্তা করতে হতে পারে। এই ছোট ছোট জায়গাগুলো। অবশ্য (দ্রুত করতে হবে) সেটাও না। কিন্তু সুযোগগুলো আমাদের দেখতে হবে, নিতে হবে। সেই সব জায়গা চিন্তা করেই কিন্তু এরা ১৫ জনের স্কোয়াডে এসেছে। একই সময়ে এটাও ঠিক আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলো হারা যাবে না। আমাদের আরো হিসেবি হতে হবে। এবং প্রথম একাদশ সেভাবেই সেট করতে হবে। আস্তে আস্তে একজন দুইজন করে হয়তো আমাদের দেখতে হবে।”
বেশ কিছুদিন ধরেই তিন পেসার নিয়ে খেলছে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে স্পিন-কন্ডিশনে জিম্বাবুয়েকে ঘায়েল করার চিন্তা থাকলেও সেই পরিকল্পনা থেকে সরছে না বাংলাদেশ, “গত তিন-চার বছর ধরেই আমরা নিরানব্বই শতাংশ সময়ে তিন জন ফাস্ট বোলারকে খেলিয়েছি, যে কোনো অবস্থায় ও যে কোনো উইকেটে। আমরা পেস বোলিংকে সবসময় প্রাধান্য দিয়েছি। আর আমাদের পেস বোলিং বিভাগ ভাল করছেও। খারাপও করেছে, কিন্তু ভালোর সংখ্যাটা বেশি এবং ম্যাচ উইনিং পারফরম্যান্স অনেক আছে। আমরা অবশ্যই ওই জায়গাতেই আছি। আমরা যতদূর সম্ভব, এটা ব্যাক-আপ করেই যাব। একই সাথে উপমহাদেশ ও মিরপুরের উইকেটে স্পিনের বড় ভূমিকা থাকে। আমরা স্পিন দিয়ে তাদেরকে এর আগে অনেক সময় অল-আউট করেছি। এটা অবশ্যই আমাদের মাথায় আছে এবং থাকবে। একই সাথে আমরা পেস বোলারদের ফ্ল্যাট উইকেট বলেন, সিমিং উইকেট বলেন, সব জায়গায় আমরা ব্যাক আপ দিয়েছি। সেটা দিয়ে যেতে চাই।”