মিরাজে ম্লান টেইলর, সিরিজ ড্র বাংলাদেশের
দ্বিতীয় টেস্ট, মিরপুর
বাংলাদেশ ৫২২/৭ ডিক্লে. ও ২২৪/৬ ডিক্লে.
জিম্বাবুয়ে ৩০৪ এবং ২২৪ (টেইলর ১০৬*, চারি ৪৩, মিরাজ ৫/৩৮)
বাংলাদেশ ২১৮ রানে জয়ী, সিরিজ ১-১ ড্র
মুশফিকুর রহিমের ডাবল সেঞ্চুরি, মুমিনুলের সেঞ্চুরি। কাইল জারভিসের বোলিং। মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি। তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণি, সঙ্গে ক্যাচিং। আর ব্রেন্ডন টেইলরের জোড়া সেঞ্চুরি। সবশেষে মিরাজের পাঁচ উইকেট। মিরপুরে ব্যক্তিগত সাফল্য আসলো ঘুরে-ফিরে, টেস্টটাও জমলো সেভাবেই। পঞ্চম দিনে লাঞ্চ পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের ‘গ্রেট-এসকেপ’-এর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না। এ পিচে হয়তো সেরকম ধস নামবে না, তবে শেষদিনে ব্যাটিংয়ের চাপটা তো থাকেই। পিটার মুরের উইকেটের পর তাই বেশিক্ষণ টিকলো না জিম্বাবুয়ে। মিরাজ সহায়তা করলেন ৫ উইকেট নিয়ে, টেইলর টেস্টে দ্বিতীয়বার ম্লান হয়ে গেলেন সেঞ্চুরি করে। ২১৮ রানে জিতে সিরিজ ১-১ এ ড্র করলো বাংলাদেশ।
প্রথম সেশনে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ছিল উইলিয়ামস-রাজার উইকেট, তবে টেইলর-মুরের জুটি আশা দেখাচ্ছিল বাংলাদেশকে। লাঞ্চের পর সেই ব্রেকথ্রু পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হলো ১১তম ওভার পর্যন্ত। মিরাজকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে খেলতে গিয়ে শর্ট লেগে ইমরুলের হাতে কোনোরকমের ধরা পড়েছেন মুর, টেইলরের সঙ্গে তার ২৫ ওভার স্থায়ী হওয়া জুটিটাও শেষ হয়েছে তাই। জিম্বাবুয়ের বাঁধ ভেঙেছে তাতেই।
চাকাভা সিঙ্গেল চুরি করতে গিয়ে হয়েছেন রান-আউট। এরপরের তিন উইকেটই মিরাজের। বাড়তি বাউন্সে ভড়কে গেছেন টিরিপানো, লেগ-গালিতে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন লিটন। লেগস্টাম্পের বাইরে থেকে তুলে মারতে গিয়ে লিডিং-এজড মাভুতা, আর তুলে মারতে গিয়ে লং-অনে ধরা পড়েছেন জারভিস। ক্যারিয়ারে এ নিয়ে ৫ম বার ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন মিরাজ।
অবশ্য টেইলরের লড়াইয়ের গল্পটা ম্লান হলেও আড়াল হচ্ছে না তাতে। মিরপুরের উইকেট হয়তো সে অর্থে টার্নিং বা মাইনফিল্ড ছিল না, তবে এর ইতিহাসই তো ভীতিজাগানিয়া। পঞ্চম দিনে সেটা জয় করতে হয়েছে তাকে, লড়াই করতে হয়েছে স্পিনের বিরুদ্ধে। লং-অন থেকে স্কয়ার লেগে ছিলেন দারুণ, তাইজুলের বলে সিঙ্গেল নিয়ে পূর্ণ করেছেন এই টেস্টে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। এ নিয়ে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার জোড়া সেঞ্চুরি করলেন টেইলর, প্রথম জিম্বাবুইয়ান হিসেবে করলেন দেশের বাইরে। আগেরদিন কোচ লালচাঁদ রাজপুত কাউকে হতে বলেছিলেন উসমান খাওয়াজা। টেইলর হয়তো সেটা হতে পারতেন, তবে শেষ পর্যন্ত তো পেলেন না সঙ্গীই!
পঞ্চম দিনের সকালেও মিরপুরের উইকেটে নেই তেমন ধাঁধা ছিল না। শন উইলিয়ামস ও সিকান্দার রাজাকে আউট করেছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান ও তাইজুল ইসলাম। সকালে তাইজুলের সঙ্গে এক প্রান্ত থেকে বল করছিলেন মোস্তাফিজ। শুরুর প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা দুজন দেখেশুনেই পার করে দিয়েছিলেন। এরপরেই মোস্তাফিজের সামান্য সুইং করা বলটা ভেঙে দিল উইলিয়ামসের স্টাম্প। আগের ইনিংসের মতো এবারও লাইন মিস করে বোল্ড হলেন উইলিয়ামস।
এরপর খালেদ আহমেদ এসেও ভালোই করছিলেন, একটি জোরালো এলবিডব্লুর আবেদনও ছিল। কিন্তু রিভিউ নিয়েও কাজ হয়নি তাতে। সিকান্দার রাজা আউটের জন্য শুধু নিজেকেই দায়ী করতে পারেন। টেইলরের সঙ্গে জুটিতে ২১ রান ওঠার পর ধৈর্য হারিয়ে ফেললেন রাজা। ফুল লেংথের বলটা ড্রাইভ করতে গিয়ে টাইমিং হলো না, নিজের বলেই বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ একটা ক্যাচ নিলেন তাইজুল।
সেই তাইজুলে প্রথম ইনিংসে ম্লান হয়ে গিয়েছিল টেইলরের সেঞ্চুরি। আর মিরাজের পাঁচে দ্বিতীয় ইনিংসে হলো সেটা। ১-০তে পিছিয়ে থেকেও তাই ফিরে আসলো বাংলাদেশ।