ইমরুলে ঘুরে দাঁড়ানোর পর বোলারদের আধিপত্য
বাংলাদেশ ২৭১/৮, ৫০ ওভার (ইমরুল ১৪৪, সাইফ ৫০, জারভিস ৪/৩৭)
জিম্বাবুয়ে ২৪৩/৯, ৫০ ওভার (উইলিয়ামস ৫০*, জারভিস ৩৭, মিরাজ ৩/৪৬, নাজমুল ২/৩৮)
বাংলাদেশ ২৮ রানে জয়ী
ব্যাটিংয়ের সময় অন্তত দুই দফা চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। ইমরুল কায়েসের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসে সে চাপ সামলে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। বোলিংয়ের সময় জিম্বাবুইয়ান ওপেনারদের উড়ন্ত সূচনার পরও বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরল দারুণভাবে। ৮ম উইকেটে কাইল জারভিস ও শেন উইলিয়ামস ইনিংস সর্বোচ্চ ৬৭ রানের জুটি গড়লেন, তবে ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে অনেক। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেকথ্রুর সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে জিম্বাবুয়েকে সহজেই হারিয়েছে বাংলাদেশ। স্কোরকার্ড হয়তো বলবে ব্যবধানটা ২৮ রানের, তবে রানতাড়ায় সে অর্থে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে পারেনি জিম্বাবুয়ে।
শুরুটা ছিল টেনডাই চাতারার এক ওভারে লিটন দাস ও ফজলে রাব্বির উইকেটে। এরপর কাইল জারভিসের ২ ওভারে ১ রানে ৩ উইকেটের স্পেল। সেসব চাপ বা অস্বস্তি ইমরুল কায়েস দূরে ঠেললেন তিন ধাপে- মুশফিকের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটিতে শুরু, সাইফ উদ্দিনের সঙ্গে ৭ম উইকেটে রেকর্ড ১২৭ রানে শেষ, মাঝে মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে ৭১ রান। ১৭ রানে ২, ১৩৯ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশ অসাধারণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ২৭১ পর্যন্ত গিয়েছিল ইমরুলের ১৪৪ রানের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসে ভর করেই।
ইমরুল কায়েস, ১৪৪/বিসিবি
চাতারার পেসের হেরফের না বুঝে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে মিড-অফে ক্যাচ তুলেছিলেন লিটন, ওভার দ্য উইকেট থেকে অ্যাঙ্গেল করে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট ছুঁয়ে ওয়ানডে অভিষেকে শুন্য রানে আউট হওয়া ১৩তম বাংলাদেশী হয়েছেন রাব্বি। ব্র্যান্ডন মাভুতার লেগস্টাম্পের বাইরের বলে পুল করতে গিয়ে বটম এজড হয়েছেন মুশফিক, জিম্বাবুয়ে সে উইকেট পেয়েছে রিভিউ নিয়ে। মুশফিকের সঙ্গে ইমরুলের জুটি ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর প্রথম অধ্যায়।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে ইমরুলের সঙ্গী মিঠুন। মাভুতাকে ইমরুল এ জুটিতে পরপর দুই বলে স্কয়ার অব দ্য উইকেটে মেরেছেন ছয়, সিকান্দার রাজাকে স্ট্রেইট ড্রাইভে দুই ছয় মেরেছিলেন মিঠুন। বাংলাদেশের নাগালে সে সময় ৩০০ স্কোর ছিল। হাজির হলেন ইনিংসের শুরুর দিকে চোট পেয়ে উঠে যাওয়া জারভিস। মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ, মেহেদি হাসান মিরাজ- তিনজনই উইকেটের পেছনে ব্রেন্ডন টেইলরের হাতে ক্যাচ দিলেন।
সাইফ উদ্দিনকে নিয়ে এরপর প্রত্যাবর্তনের গল্পের শেষ অধ্যায়টা লিখলেন ইমরুল। লিটনের মতো সাইফউদ্দিনও আম্পায়ারস রেফারেলে বেঁচেছেন ক্যাচের হাত থেকে।
পেস-স্পিন, ইমরুল মানেননি কিছুই। সোজা ব্যাট বা আড়াআড়ি- ইমরুল খেলেছেন মাঠের সবদিকেই। ড্রাইভ, ইনসাইড-আউট, পুল, সুইপ, কাট- ইমরুল খেলেছেন সব শটই। টানা তিন উইকেটের ধকল নিতে মাঝে একটু চেপে খেলতে হয়েছিল তাকে, তবে সাইফউদ্দিনের সমর্থনে আবার বেরিয়ে ফিরেছেন পুরোনো রুপে। ১১৮ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি করার পর পরের ৪৪ রান তিনি করেছেন মাত্র ২২ বলে। চাতারাকে ২ ছয় ও চারের পর জারভিসকে ছয় ও দুই চার, টিরিপানোর বলে মেরেছেন আরও দুই বাউন্ডারি।
তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জুটির অংশ ছিলেন ইমরুল/বিসিবি
ইনসাইড আউটে শট খেলতে গিয়ে ডিপ এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ দিয়েছেন ইমরুল, সাইফ উদ্দিন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটির পর আউট হয়েছেন ফুলটসে। তবে ইমরুলের আউটের পর জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটারদের ছুটে এসে অভিনন্দনই বলে দেয়, তার ইনিংসটা কেমন ছিল। আর সাইফ উদ্দিনের সঙ্গে ইমরুলের জুটি ভুলিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের চাপ।
এরপর উড়ন্ত সূচনা ছিল জিম্বাবুয়ের, সেফাস জুয়াও ছিলেন আক্রমণাত্মক। ব্রেকথ্রু পেতে মোস্তাফিজকে ৮ম ওভারে আনলেন মাশরাফি, এরপর বদলে গেল সব গল্প।
মোস্তাফিজের প্রথম বৈধ বলটা ছিল কাটার, জুয়াও সেটার জবাব দিতে পারলেন না, উড়ে গেল শুধু তার অফস্টাম্প। এরপর দুই ফিঙ্গারস্পিনের তিন ক্ল্যাসিক ডেলিভারির গল্প। ব্রেন্ডন টেইলর ও সিকান্দার রাজা নাজমুল অপুর শিকার, এরভিন ফিরেছেন মিরাজে। তিনটি বলই একই- অফস্টাম্প বা একটু বাইরে পড়ে ব্যাটের আউটসাইড-এজকে ফাঁকি দিয়ে ভেঙেছে অফস্টাম্প।
এর আগে জোরের ওপর ডাবলস নিতে গিয়ে বিপদ বাড়িয়েছেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা।
প্রথম ব্রেকথ্রু এনেছিলেন মোস্তাফিজ/ক্রিকইনফো
পিটার মুরকে দারুণ সেট-আপে এলবিডব্লিউ করেছেন মিরাজ। আগের বলটা টার্ন করেছে অস্বাভাবিক রকমের, পরের বল অফস্টাম্পে পড়ে ঢুকেছে সোজা, সুইপের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে মুরের। এরভিনের সঙ্গে ৪৫ রানের জুটিটাও ভেঙেছে তাতেই।
ব্যাটিং-বোলিংয়ে তেমন কিছু করতে না পারলেও ফিল্ডিংয়ে চমক দেখিয়েছেন রাব্বি, সিঙ্গেল চুরি করতে যাওয়া টিরিপানোকে রান-আউট করেছেন ডাইভিং থ্রোতে। মাভুতার হঠাৎ ঝলকানির ইনিংসও শেষ হয়েছে দারুণ ফিল্ডিংয়ে, এবার নিজের বলে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে ফিরতি ক্যাচ নিয়েছেন মিরাজ।
শেষে এসে মাহমুদউল্লাহ আন-অর্থোডক্স বোলিংয়ের একচোট অনুশীলন করে নিয়েছেন, রাউন্ড-আর্ম বা পপিং ক্রিজের অনেক বাইরে থেকে বোলিং করে। সফলতাও মিলেছে, পরপর দুই ছয়ের পর কট-বিহাইন্ড করেছেন জারভিসকে। জারভিস রিভিউ নিয়েছিলেন, কাজে লাগেনি সেটা।
যেমন তারা পারেননি বাংলাদেশকে চাপে ফেলেও সুবিধা করতে।