মায়ের কথা থেকেই ফেরার প্রেরণা সাইফ উদ্দিনের
প্রায় এক বছর হয়ে গেল। গত বছরের অক্টোবরের পর পেরিয়ে গেছে অনেকটা সময়। ডেভিড মিলার সেই ম্যাচ পর পর পাঁচটি ছয় মেরেছিলেন সাইফ উদ্দিনকে। এরপর বিপিএলে ফিরেছেন, চট্টগ্রামে ফিরে বিপিএলে ড্যারেন স্যামি তাঁর এক ওভার থেকেই নিয়েছিলেন ৩২ রান। সাইফ উদ্দিন এরপরও বাংলাদেশ দলে খেলেছেন, বাদ পড়েছেন। শেষ পর্যন্ত আবার জিম্বাবুয়ে সিরিযে পেয়েছেন সুযোগ। প্রথম ওয়ানডেতে ফিফটি, আর দ্বিতীয়টিতে ৩ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচসেরাই। সাফল্যের পেছনের গল্পটা বলতে মায়ের একটা কথাই আজ শোনালেন সংবাদ সম্মেলনে- হোঁচট খেতে খেতেই মানুষ হাঁটা শেখে।
সেই ছোঁচট সাইফ উদ্দিন আসলে কম খাননি। দক্ষিণ আফ্রিকার ওই দুঃস্বপ্নের ওভারের পর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে এ বছরের গোড়ায় দেশের মাটিতে সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি। এরপর আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাইরে ছিলেন। কিন্তু একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছিল দল। সেজন্যই আবার তাঁকে দলে ডাকা। আর সেই সুযোগ নিয়েছেন দুহাতেই।
প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে ভালো করলেও বলে প্রমাণ করতে পারেননি। আজ তিন উইকেট নিয়েছেন, শেষ ওভারে ভাগ্য পক্ষে থাকলে লিস্ট এ ক্যারিয়ারেই প্রথমবারের মতো ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু সেটা আর হয়নি। ম্যাচসেরার পুরস্কার পাবেন, সেটা অবশ্য ভাবেননি। তখন খানিকটা অবাকও হয়েছিলেন, পরে জানিয়েছেন। তবে বোলার হিসেবে ভালো করার তৃপ্তিটা যে বেশি, সেটা বললেন, ‘যেহেতু আমাকে বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে কাউন্ট করে আমার প্রথম স্কিল অবশ্যই বোলিং। বলে উইকেট পেলে বা ইকোনমি বল করলে ভাল লাগে। পাশাপাশি ব্যাটিংটা। চেষ্টা করি দুইটা ভাল করার।’
কিন্তু বার বার এভাবে বাদ পড়ে ফেরার প্রেরণা পান কোত্থেকে? সাইফ উদ্দিন বললেন, ‘আমি আসলে কিছু সময় সাফল্য পেতে গেলে একটু হোঁচট খাই। আমি আসলে সব সময় বিশ্বাস করি, আমার মা বলতে একটা ছেলে হাঁটা শিখতে গেলে বারবার হোঁচট খায়। তাই বলে কি তার হাঁটা বন্ধ হয়ে যায়? একইরকম আমিও মার খাব। ওখান থেকেই তো শিখব।’
শেষের ওভারে আজ দারুণ বল করেছেন, এটা বাড়তি তৃপ্তি হওয়ার কথা সাইফ উদ্দিনের জন্য। আজ যেমন শেষ ৫ ওভারে কোনো বাউন্ডারিই দেননি। জানালেন, শেষে বল করার অভিজ্ঞতা আগেও ছিল তাঁর, ‘আমি ছোটবেলা যখন অনূর্ধ-১৫, ১৭ খেলতাম। যখন মিরাজ অধিনায়ক ছিল। তখন থেকেই ডেথ ওভারে এক্সপেরিয়েন্স। হয়ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম কয়েকটা ম্যাচ ওইরকমভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারিনি। কিন্তু মিরাজের সঙ্গে আমার কথা হয়, মোস্তাফিজের সঙ্গে কথা হয়। সে খুব অভিজ্ঞ বোলার। কীভাবে কি করলে সাফল্য পাওয়া যায়।’
তার চেয়েও অবশ্য বেশি করে চাইছিলেন, শুরুতে যাতে বল হাতে পান। সেই আশাও পূরণ হয়েছে। কৃতজ্ঞাটা অধিনায়ককেই দিলেন এই অলরাউন্ডার, ‘আমি মনে মনে চাচ্ছিলাম ম্যাশ ভাই আমাকে আনুক। আমি চাচ্ছিলাম যে কিছু একটা করে দেখাতে। আমি খেলছিলাম রুবেল ভাই অসুস্থ থাকার কারণে।এই জন্য আমার এমন কিছু করতে হয়ত যে পরের ম্যাচে সুযোগ পাই।’
আজ যেমন খেলেছেন, সেই সুযোগ আরও বেশ কিছু ম্যাচে পাওয়ার আশা করতেই পারেন!