সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম: গলফ কোর্স থেকে বাংলাদেশের সুন্দরতম ভেন্যু
লাক্কাতুরা চা বাগান থেকে ভেতরের দিকে ঢুকলেই আপনার জন্য একটা বিস্ময় অপেক্ষা করবে। দুই দিকে সার বাঁধা চা বাগান, দূর দিগন্তে চোখে পড়ে মেঘালয়ের পাহাড়। তার মধ্যে যেন দ্বীপের মতো জেগে আছে একটা স্টেডিয়াম। সিলেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আন্তর্জাতিক অভিষেক এর মধ্যেই হয়ে গেছে, সাড়ে ১৮ হাজার দর্শকে ঠাসা গ্যালারি দেখেছে বিপিএল আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিও। তারপরও টেস্ট অভিষেকের রোমাঞ্চের সঙ্গে কি আর কিছুর তুলনা হয়? সিলেটের চোখজুড়ানো মাঠ তাই অনেককিছু নিয়েই তাই প্রস্তুত অদৃশ্য টেস্ট ক্যাপ পরার।
অনেক দিক দিয়েই এই মাঠ বাংলাদেশের অনন্য। বাংলাদেশের আর কোনো স্টেডিয়ামে পাশ্চাত্যের দেশগুলোর মতো গ্রিন গ্যালারি নেই (যদিও সিলেটের গ্যালারি এর মধ্যেই কড়া রোদে সবুজ থেকে লালচে হয়ে গেছে, তারপরও দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো তো যায়)। আর গলফ কোর্স থেকে আন্তর্জাতিক ভেন্যু হয়ে যাওয়ার সৌভাগ্যও আর কোনো মাঠের হয়নি। যে লাক্কাতুরা চা বাগানের কোল ঘেষে এই মাঠ, একসময় সেটি ছিল গলফ খেলার জায়গা। টি স্টেটের অধীনে এই মাঠ অবশ্য পেশাদার গলফ কোর্স ছিল না কখনোই, সৌখিন গলফবিলাসীরা এখানে একটু হাত (পড়ুন ক্লাব) মকশো করে যেতেন। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, সেই আশির দশকে ব্রিটিশ যুবরাজ প্রিন্স চার্লস সিলেট সফরে এসে এখানে খানিকক্ষণ গলফ খেলে গিয়েছিলেন। পাশেই স্থানীয়দের খেলার জায়গাও ছিল, লামাবাজারে জেলা স্টেডিয়াম ছিল সিলেটের মূল ভেন্যু। সেখানে রানাতুঙ্গা, কালুভিতারানারা এসেও খেলে গিয়েছিলেন।
২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব আয়োজন দিয়ে প্রথম পাদপ্রদীপে আসে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ওই সময় ছেলেদের আর মেয়েদের মিলে ৩০টি ম্যাচ হয় এই মাঠে। দুই বছর পর অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের তিনটি মাঠ ও হয় এখানে। বাংলাদেশ যে নতুন একটা আন্তর্জাতিক ভেন্যু পেয়ে গেছে, সেটা তখনই আসলে জানা হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে আয়ারল্যান্ড এ দল সফর করে গেছে এখানে, আর বিপিএলে সিলেটের মুগ্ধতা ছড়িয়েছে পুরো বাংলাদেশ জুড়ে। জাতীয় ক্রিকেট দলের অভিষেক হয়েছে এখানে এই বছরেই, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে। সেসময়ও আয়োজন ছিল, তবে টেস্ট অভিষেকের বরণ তো অন্যরকমই হবে!
সেই অন্যরকম কিছুর দেখা পাওয়া গেল এখানে। ঘন্টা বাজিয়ে টেস্ট ম্যাচ শুরুর করার রীতি ক্রিকেটের অনেক ভেন্যুতেই আছে, যেমন আছে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেও। তবে সিলেটের মাঠের ঘন্টাটা এতোই দৃষ্টিনন্দন, সেটির সঙ্গে ছবি তোলার হিড়িক সাংবাদিক আর অন্যান্যদের মাঝে। অভিষেকের আগের দিন ভেন্যুতে ঢুকতেই আরও চমক, দেয়াল জুড়ে শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের স্মরণীয় সব মুহূর্তের দারুণ সব স্কেচ। আরেকটি দেয়ালে বাংলাদেশ দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা সিলেটের ক্রিকেটারদের ছবি। সেই গোলাম ফারুক থেকেঅলক কাপালি, রাজিন সালেহ, এনামুল হক জুনিয়ররা আছেন সেখানে। তাঁদের মধ্যে এনামুল আর রাজিনের কাল অভিষেকের প্রথম প্রহরে মাঠে থাকার কথা, সিলেটের সব প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটারকেই আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিসিবি। ঘন্টা বাজিয়ে প্রথম প্রহর শুরু করার কথা ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খানের। টেস্ট অভিষেকের আগে র্যালিও হয়েছে শহরে।
তবে মাঠের খেলায় বাংলাদেশ জিতলেই শুধু স্মরণীয় হয়ে থাকবে সব। এই জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সেটা না হলে বড় অঘটনই হবে। তবে ইতিহাস সিঁদুরে মেঘ দেখাচ্ছে, এর আগের সাতটি টেস্ট ভেন্যুর অভিষেকের সবগুলোতেই হেরেছে বাংলাদেশ। এক ফতুল্লা বাদ দিলে বাকিগুলোতে তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। শ্যামল সিলেট কি সেই দুঃখ ভোলাতে পারবে?