পুরনো ব্যাটিং বিপর্যয়ে নতুন করে বাংলাদেশ
২য় দিনশেষে
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস ১১৭.৩ ওভারে ২৮২ (উইলিয়ামস ৮৮, মুর ৬৩*; তাইজুল ৬/১০৮) ও ২য় ইনিংস* ১/০
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ১৪৩ (আরিফুল ৪১, মুশফিকুর ৩১, চাতারা ৩/১৯, রাজা ৩/৩৫)
জিম্বাবুয়ে ১০ উইকেট নিয়ে ১৪০ রানে এগিয়ে
সিলেটের প্রথম টেস্ট, উইকেট নিয়েও খানিকটা ‘রহস্য’ ছিল হয়তো। তবে কন্ডিশনটা তো একেবারে অচেনা নয়। তবুও এ কন্ডিশনেও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়লো বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ১৪৩ রানে অল-আউট হয়ে, জিম্বাবুয়েকে ১৩৯ রানের লিড দিয়ে দ্বিতীয় দিনশেষে চরম অস্বস্তিতে তারা। এ নিয়ে টনা ৭ম ইনিংসে ১৭০-এর নিচেই গুটিয়ে যাওয়ায় বিপর্যয়টাকে ঠিক নতুন বলা যাচ্ছে না। এ বছরের শুরুতে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫১৩ রান করার পর এখনও ১৬৮-এর বেশি এক ইনিংসে করা হয়নি বাংলাদেশের।
১৫ উইকেট পড়েছে এদিন, এর মাঝে ১০টি বাংলাদেশের। টেনডাই চাতারা ও সিকান্দার রাজা মূল ক্ষতিটা করেছেন, সঙ্গে ছিলেন কাইল জারভিস। অভিষিক্ত আরিফুল হকের ৪১ রানের ইনিংসই যা উজ্জ্বল দিক, এগিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েও শেষ করতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। সব মিলিয়ে দিনের দারুণ শুরুটা মিলিয়ে গেছে দিনশেষে, যেখানে তাইজুলের তোপে দ্রুতই গুটিয়ে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে।
আগেরদিন স্নায়ুর দারুণ পরীক্ষা দেওয়া জিম্বাবুয়েকে সকালে যোগ করতে পেরেছে ৪৬ রান। সকাল গড়ালো, দুপুর এলো বিভৎস রুপে। সিলেটের উইকেট শুষ্ক, টার্নের আভাসও মিলছে খানিক পরপরই। তবে ঠিক চ্যানেলটা খুঁজে পেলে সিম বোলিং এখানে দারুণ কার্যকর, সেটাই দেখালেন টেনডাই চাতারা ও কাইল জারভিস। আর সিকান্দার রাজা এসে দেখালেন, বড় টার্ন দরকার নেই, খুঁজে পেতে হবে ঠিক জায়গাটা।
শুরুটা হয়েছিল ইমরুলকে দিয়ে। চাতারার ব্যাক অফ আ লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা বলে আগবাড়িয়ে খেলতে গিয়ে বল ডেকে এনেছেন স্টাম্পে, ১৯ রানে ৪র্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার সময় মোটামুটি একই কাজ করেছেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও, কোনও রান না করেই। এর মাঝে লিটন লিটন জারভিসকে, শান্ত চাতারাকে শরীর থেকে দূরে পা না চালিয়ে খেলতে গিয়ে মূল্য দিয়েছেন।
বাংলাদেশ এরপর সিলেটের চা-বাগানকেই নিজেদের জন্য বানিয়ে ফেলেছে গহীন জঙ্গল। মুশফিক-মুমিনুল ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিচ্ছিলেন কিছু সময়ের জন্য। ৩০ রানের জুটির পর রাজার সেট-আপে ধরা পড়লেন মুমিনুল, ড্রিফটে সামনের পায়ে আসলেন, আউটসাইড-এজ গেল স্লিপে। চা-বিরতির পর এক বাউন্ডারির পরই ধরা খেলেন মুশফিকও, জারভিসের ব্যাক অফ লেংথে নিজেকে সামলাতে না পেরে দিলেন খোঁচা।
মেহেদিকে নিয়ে লড়াই করলেন এরপর আরিফুল। নির্বাচকরা তাকে দ্রুত রান তোলার জন্য নিয়েছিলেন নাকি, তবে তাকে পালন করতে হলো সম্পূর্ণ ভিন্ন দায়িত্ব। বাকি সব ব্যাটসম্যানের চেয়ে বেশি দায়িত্বশীল ছিলেন তিনিই, টেম্পারমেন্টও ছিল দারুণ। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৪১ রানে, ভুল বুঝাবুঝিতে শেষ ব্যাটসম্যান রাহী রান-আউট না হলে হয়তো বাংলাদেশের ক্ষতিটা আরেকটু কমাতে পারতেন তিনি। এর আগে মিরাজ ফিরেছেন বেশি সফট ডিসমিসালে, উইলিয়ামসের বলে লিডিং এজে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে। তাইজুল রাজার দ্বিতীয় শিকার, এবারও অফস্পিনে বাঁহাতিকে বাধ্য করেছেন খোঁচা দিতে। আর নাজমুল রাজার বল পর্যন্ত পৌঁছাতে না পেরে সিলি পয়েন্টে দিয়েছেন ক্যাচ।
সকালে আরিফুলের জায়গায় নিজেকে আবিষ্কার করেছিলেন পিটার মুর। রেজিস চাকাভার সঙ্গে ১০ ওভার পার করে ফেলেছিলেন, প্রথম স্পেলে বল করতে এসে তাইজুলের আঘাতের আগে। এবারও উইকেটের অর্ধেক কৃতিত্ব শান্তর, শর্ট লেগে আবারও দারুণ রিফ্লেক্সে ক্যাচ নিয়েছেন তিনি।
অভিষিক্ত ওয়েলিংটন মাসাকাদজা তাইজুলের অফ স্টাম্পের ঠিক বাইরের বলটা খোঁচা দিলেন, এর মধ্যে স্পিন শুরু হয়ে গেছে দুই দিক দিয়েই, নাজমুল ইসলাম অপু আবার এনে দিয়েছেন উদযাপনের উপলক্ষ। সোজা বলে ডিফেন্স করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ মাভুতা। বড় শট খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন জারভিস, পরের বলেই চাতারা সিলি মিড অফে ক্যাচ দিলেন লিটনকে, তাইজুলের হলো ছয়টি উইকেট। আর ৬৩ রান করে একা পড়ে রইলেন পিটার মুর। জিম্বাবুয়ে হয়তো তখন ইনিংসটা আরেকটু বড় না করার আক্ষেপে পুড়ছে।
তবে সেটাই তাদের এনে দিল ১৩৯ রানের লিড। আগের দিন সমান-সমান ছিল। এদিন পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে থাকলো জিম্বাবুয়ে। আর বাংলাদেশের সামনে থাকলো অনেক কঠিন এক কাজ।