বাংলাদেশের সামনে শুধু রেকর্ডের দরজাই খোলা রাখল জিম্বাবুয়ে
সিলেট টেস্ট
তৃতীয় দিনশেষে
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস ২৮২ ও ২য় ইনিংস ১৮১ (মাসাকাদজা ৪৮, রাজা ২৫, তাইজুল ৫/৬২, মিরাজ ৩/৪৮)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ১৪৩ ও ২য় ইনিংস* ২৬/০
জয়ের জন্য ১০ উইকেট নিয়ে ২৯৫ রান প্রয়োজন বাংলাদেশের
ইনিংসে স্পিনে প্রথম বল, সিকান্দার রাজার বড় টার্ন আঘাত হানলো লিটনের প্যাডে। জিম্বাবুয়ের রিভিউ ব্যর্থ হওয়ার আগেই আগেই আঁধার ঘনিয়ে এসেছে সিলেটে। যে ৬১ বল খেললো বাংলাদেশ, তাতে অবশ্য থাকলো মানসিকতা পরিবর্তনের ইঙ্গিত। ইমরুল কায়েস একবার চাতারার বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে এজড হয়েও বেঁচে গেলেন স্লিপের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ায়। এছাড়া দুই ওপেনার নিজেদের সামলে নিয়েছেন, শরীর থেকে দূরে থাকা বলে আগবাড়িয়ে খেলেননি। এ উইকেটে ব্যাটসম্যান-বোলারদের লড়াইটা এখন ‘হতাশা’ আদান-প্রদানের, যে যত বেশি পারে প্রতিপক্ষকে হতাশ করতে! বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের সামনে অতিকায় লক্ষ্য, সেটা পেরিয়ে যেতে এই ৬১ বলের লড়াইটা করতে হবে আরও বেশ কিছুক্ষণ। গড়তে হবে আদতে রেকর্ড।
বাংলাদেশের মাটিতে রেকর্ডটা নিউজিল্যান্ডের। চট্টগ্রামে ২০০৯ সালে ৩১৭ রান তাড়া করে জিতেছিল তারা। বাংলাদেশের রেকর্ডটা ২০৯ রানের, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০০৯ সালে জিতেছিল তারা, সেন্ট জর্জেস-এ। চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়া করে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত জিতেছে মোট তিনবার। দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ রান-তাড়ার রেকর্ডটি ১০১ রানের। সিলেটে সব রেকর্ডই ভাঙতে হবে বাংলাদেশকে। জিম্বাবুয়েকে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮১ রানে অল-আউট করেও ৩২১ রানের লক্ষ্য পেয়েছে বাংলাদেশ, প্রথম ইনিংসে বড় লিডের কল্যাণে। প্রথম ইনিংসের পুরো উলটো ব্যাটিংয়ের আদতে বিকল্প নেই এখন।
প্রথম সেশনে ম্যাচটা বাংলাদেশের নাগাল থেকে প্রায় বের করে নিয়েছিল জিম্বাবুয়ে, দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন তাইজুল। ৭ম উইকেটে চাকাভা-মাসাকাদজা আবার বাংলাদেশকে অস্বস্তি দিয়েছেন, চা-বিরতির পর তাদেরকে আটকে দিতে অবশ্য খুব বেশি সময় নেননি বাংলাদেশী স্পিনাররা। প্রথম ইনিংসের মতো এবারও মূল কাজটা করেছেন তাইজুল, ৫ উইকেট নিয়ে।
দ্বিতীয় সেশনের মতো তৃতীয় সেশনের শুরুটাও ভাল ছিল বাংলাদেশের। চা-বিরতির পর প্রথম ওভারটা দারুণ করেছেন মিরাজ, পঞ্চম বলে ব্যাকফুটে যাওয়া মাসাকাদজা স্কিড করা ডেলিভারিতে হয়েছেন এলবিডব্লিউ, রিভিউ নিয়েও কাজ হয়নি তার। জিম্বাবুয়ের যেন তাড়া ছিল, খানিক বাদেই নাজমুলের ফুললেংথের বলে তুলে মারতে গিয়ে শর্ট কাভারে ক্যাচ দিয়েছেন চাকাভার। মাভুতাও ফিরেছেন সে ওভারেই, তুলে মারতে গিয়ে লং-অফে ক্যাচ দিয়ে। তাইজুলের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে চাতারা মেরেছেন দুই চার।
শেষের মতো শুরুতেও সিলেটের আকাশে ছিল মেঘ, আগের দিনের তুমুল বৃষ্টিতে অবশ্য খেলা পেছায়নি। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতির দাবির প্রমাণও মিলেছে তাতে। সকালে শুরুতেই উইকেট পেয়ে যেত বাংলাদেশ, কিন্তু ব্রায়ান চারির ক্যাচটা পয়েন্টে ধরতে পারেননি নাজমুল ইসলাম অপু। প্রথম ৪৫ মিনিট মোটামুটি নির্বিঘ্নেই কাটিয়ে দিয়েছিলেন জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার চারি-মাসাকাদজা। রান অবশ্য উঠছিল শম্বুকগতিতে, কিন্তু এই উইকেটে আউট না হলে যে আউট করা কঠিন সেই সাক্ষ্য মিলেছে আজও। চারি আসলে উইকেটটা দিয়েই এসেছেন, মিরাজের সামান্য টার্ন হওয়া বলটা ইনসাইড দ্য লাইন খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে গেছেন ৪ রান করে।
ব্রেন্ডন টেইলর এসেই পালটা আক্রমণ শুরু করলেন। মিরাজকে এক ওভারে দুই চার, এরপর সকাল থেকে টানা বল করে যাওয়া তাইজুলকেও দারুণ কিছু শটে চার মারলেন। কিন্তু সেই মারতে গিয়েই আউট হয়ে গেলেন, মিড অন থেকে পেছন দিকে দৌড়ে গিয়ে দারুণ একটা ক্যাচ ধরেছেন ইমরুল কায়েস। ২৫ বলে ২৪ রানের ইনিংস তার, এরপর সিকান্দার রাজাও খেলেছেন প্রায় একইভাবে।
শট খেলার আত্মবিশ্বাস এর আগেই ছড়িয়ে গেছে মাসাকাদজা-শন উইলিয়ামসের মধ্যে। উইলিয়ামসের প্রথম স্কোরিং শটই ছিল চার, মাসাকাদজাও শুরুর জড়তা কাটিয়ে বাজে বলের ফায়দা নিয়েছেন, অতি-আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনার আগ পর্যন্ত। লাঞ্চের পর পঞ্চম ওভারে মিরাজকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ মাসাকাদজা। শন উইলিয়ামসের সঙ্গে যোগ দিলেন ইতিবাচক রাজা। মিরাজকে ছয়ের পর চারের পর ছয় মারলেন, এর পরের ওভারে মারলেন আরেকটি বাউন্ডারি। এরপর জোড়া আঘাত তাইজুলের।
মাসাকাদজার মতো একই ভুল করলেন উইলিয়ামস, তিনি হলেন বোল্ড। পরের বলে ফিল্ডিং সাজাতে অনেক্ষণ সময় নিলেন মাহমুদউল্লাহ, তাইজুলের বলে সিলি পয়েন্টে ঠিকই ক্যাচ দিলেন পিটার মুর, ম্যাচে দ্বিতীয়বার হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন তাইজুল। পরের ওভারে হ্যাটট্রিক হলো না, তবে আরেকটি আঘাত হানলেন ঠিকই তাইজুল। ব্যাকফুটে যাওয়া রাজার ডিফেন্স আটকাতে পারলো না তাইজুলের দশ উইকেট। ক্যারিয়ারে প্রথমবার ম্যাচে দশ উইকেট পেলেন তাইজুল, চতুর্থ বাংলাদেশী হিসেবে।