সিলেটের 'মিশন ইম্পসিবলে' রোডসের 'ফর্মুলা ফাইভ'
সিলেট টেস্ট জিততে হলে কী করতে হবে বাংলাদেশকে?
আপনি রেকর্ডের লিস্ট নিয়ে বসতে পারেন, আশা মিলবে না কোনো দিকেই। ঘরে-বাইরে বাংলাদেশের এতো রান তাড়া করে জেতার কীর্তি নেই কখনো। বাংলাদেশের মাটিতেই এত রান করে জেতেনি কোনো দল। ক্রিকেটীয় ইতিহাসই বলে, চতুর্থ ইনিংসে ৩০০ রান তাড়া করে জেতার কীর্তি আছে ৩০টি। টেস্টের দুই দিন বাকি, এই হিসেব ধরে নিলেও সমীকরণটা খুব খুব কঠিন। বাংলাদেশের জয়ের চেয়ে পরের টেস্টে সাকিব-তামিম খেলবেন, বরং এটির পক্ষে বাজি ধরার লোক বোধ হয় বেশি পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশ কোচ স্টিভ রোডস সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য একটা হিসেব বের করেছেন। আপাতত ম্যাচ নয়, সেশন ধরে ধরে জিততে চান। আজকের দিনে বাংলাদেশকে জয়ের জন্য মোট পাঁচটি সেশন জিততে হবে, হিসেব করে বের করেছিলেন। বাকিটা শুনুন রোডসের মুখেই, ‘বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, আমরা পাঁচটি সেশন জেতার জন্য ঠিক করেছি। প্রথমটা ছিল ড্র, আমার মনে হয়েছে আমাদের দিনের শুরুটা খুব ভালো হয়নি। তবে পরের দুইটি আমরাই জিতেছি। আমরা ঠিক পথেই আছি, বাকিগুলো জেতার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। আশার কথা, পিচ এখনও র্যাঙ্ক-টার্নার হয়ে যায়নি, সব বল এখনো টার্ন করছে না। সেটা খুব বেশি না ভোগালে এখনও স্পিন নিয়ে আপনি পরিকল্পনা করতে পারবেন। ’
তবে কাজটা বলা যতটা সহজ, করা ততটাই কঠিন। সিলেটের উইকেট এখনও মিরপুরের চতুর্থ দিনের মতো স্পিন-মৃগয়া না হলেও খুব সহজও নয়। দিনের শেষ বলে সিকান্দার রাজার টার্ন দেখে জিম্বাবুয়ে কোচ আশাবাদী, সেটা তো সরাসরিই বলেছেন। তবে ইতিহাস-টাস বাদ দিয়ে শুধু উইকেট আর নিজেদের সামর্থ্য হিসেব করলে বাংলাদেশের হয়তো কাজটা পুরোপুরি অসম্ভব নয়। বিশেষ করে শেষ সেশনে লিটন দাস আর ইমরুল কায়েস দেখিয়েছেন, চাইলে এই উইকেটে ধৈর্য নিয়ে খেললে আউট না হয়েও থাকা যায়।
এখন পর্যন্ত রাফ থেকে বল কয়েকবার উঠলেও সেটা নিয়মিত হয়নি। জিম্বাবুয়ের তিন স্পিনার মাভুতা, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা বা রাজা এমন কোনো স্পিন-জাদুকর নন। আর প্রথম ইনিংসে তো পেসাররাই সর্বনাশের ঘণ্টাটা আগে বাজিয়ে দিয়েছিলেন। সকালবেলা পেসারদের দেখেশুনে খেলে পার করে দিতে পারলে কি কাজটা অসম্ভব?
উত্তরটা লুকিয়ে আছে ব্যাটসম্যানদের মানসিকতাতেই। প্রথম ইনিংসে যেভাবে ব্যাট করেছে দল, তাতে চতুর্থ ইনিংসে যে অল্প হলেও সুযোগ আছে, সেজন্য তাইজুল ইসলামকে একটা ধন্যবাদ দিতে পারে দল। তারপরও অমন ব্যাটিংয়ের কোনো মানে হয় না। আজ সংবাদ সম্মেলনে ব্যাটসম্যানদের কালকের ব্যর্থতা নিয়েই একের পর গোলা ছুঁড়ে গেল রোডসের দিকে। জিম্বাবুয়েকে হালকাভাবে নিয়েছিল কি না, ওয়ানডে মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে পারছিল কি না, এমন অনেক প্রশ্নই ছিল। রোডস অবশ্য ধীরস্থির হয়েই সবকিছুর উত্তর দিলেন। তবে তাঁর কথার মূল সুর একটাই। কাল কেন অমন ব্যাটিং হয়েছে, সেটার কারণ তিনি নিজেও খুঁজে পাচ্ছেন না। জোর দিয়েই বললেন, একটা বাজে দিন হয়ে গেছে। ব্যাটসম্যানদের ওপর আশা না হারিয়ে ফেলার অনুরোধও করলেন, ‘আমাদের আসলে কয়েকটা ভালো জুটি দরকার। সেটা হলেই আমরা ম্যাচটা বের করে নিয়ে আসতে পারব। কাজটা খুবই কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। আমরা যেন ব্যাটসম্যানদের ওপর বেশি রুঢ় না হই। আমার বিশ্বাস তারা খুব ভালো খেলোয়াড়, ভালো খেলারও খুব চেষ্টা করছে তারা। ওদের প্রতি এখনই বেশি রুঢ় বা কঠোর যেন আমরা না হই।’
রোডস তাঁর শিষ্যদের ওপর আস্থা অবশ্য রাখতেই পারেন। তবে সবাই তো আর অর্জুন হয় না, গুরু দ্রোণাচার্যের আস্থার প্রতিদানও সবাই দিতে পারে না। আজ ড্রেসিংরুমে মুশফিকরা নিজেদের মধ্যে কী বলেছেন, সেটা জানার উপায় নেই। তবে রোডস নিশ্চয় এসব কথা তাঁদেরও বলেছেন। আউট হওয়ার আগে যেন ব্যাটসম্যানরা উইকেট না দিয়ে আসে, সেই মন্ত্র নিশ্চয় জপে দিয়েছেন কোচ ছেলেদের কানে। প্রথম ইনিংসে বলতে গেলে দশ উইকেটই বিলিয়ে দিয়ে এসেছিল ব্যাটসম্যানরা, সেরকম ভালো বলেও আউট হননি কেউ। আর কিছু না হোক, এবার অন্তত সেরকম ভুল না হোক। টেস্ট ব্যাটিংয়ের যে মূলমন্ত্র- উইকেটে মাটি কামড়ে পড়ে থাকা, সেটা লিটনরা রপ্ত করুক। ম্যাচের এখনও দুই দিন বাকি- সেটাও ভুলে গেলে চলবে না।
গত সাত ইনিংসে একবারও ১৭০ ছাড়াতে না পারা দলটার জন্য কাজটা খুবই কঠিন, সন্দেহ নেই। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে প্রায় দুই দশকের কাছাকাছি সময় পার করে দেওয়ার পর যদি চেনা কন্ডিশনে ঘুরে দাঁড়ানোর সেই মানসিকতাই না থাকে, তাহলে আর টেস্ট খেলা কেন? জয়-পরাজয় পরে, আগে তো সাদা পোশাকে প্রমাণ করার তীব্র ইচ্ছাটা দেখাতে হবে। নিজেদের সামর্থ্যে আস্থা রাখলে ভীষণ অসম্ভব তো হতেও পারে। খেলাটা যে ক্রিকেট; ‘ফানি ওল্ড গেম’- সেটা তো আজ সংবাদ সম্মেলনে দুই দেশের কোচই বলে গেছেন!